রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন

গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাই মিলে চেষ্টা করব : ড. ইউনূস

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের আত্মত্যাগ সার্থক করতে ও তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাই মিলে সবরকম চেষ্টা করব। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি বলেন, প্রতিজ্ঞা করি আমরা যেন গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের প্রতি অসম্মান না জানাই। যে কারণে তারা আত্মত্যাগ করেছিল সেটা যেন পরবর্তী সব প্রজন্ম মনে রাখে, তাদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে। তাদের আত্মত্যাগ সার্থক করার জন্য আমরা সবাই মিলে সবরকম চেষ্টা করব যেন সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি। ‘তারা এ ত্যাগ না করলে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকলেও জবাব খোঁজার আমাদের কোনো সুযোগ থাকত না। প্রশ্ন আমাদের মনে যতটুকু ছিল, বহু বছর ধরে ছিল, সুযোগ পাইনি। অসংখ্য ছাত্র-জনতা আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা সুযোগ পেয়েছি।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, আমরা ছোটখাটো একটা হাডুডু খেলার জন্য আইন বানাই। ফুটবল খেলা তো বটেই, এটা আন্তর্জাতিক খেলা। সে আইন আমরা মেনে চলি, মেনে চলি বলেই খেলাটা খেলা হয়, তামাশা হয় না। আইনগুলো এমনভাবে বানানো হয়েছে সবাই যেন উপভোগ করে। কিন্তু আমরা আমাদের দেশকে তামাশায় পরিণত করে ফেলেছি। আইন বলে কিছু নেই, নিয়ম বলে কিছু নেই। যারা আত্মত্যাগ করেছে তারা আমাদের নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছে, আমরা যেন সেসব আইনকানুন পাল্টে ফেলে নতুন বাংলাদেশের জন্য প্রস্তুত হই। আমরা শুধু সাচিবিক কাজগুলো করে দিলাম: অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সংস্কার করার ব্যাপারে আপনাদের (রাজনৈতিক দল ও গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য শরিক) কাছ থেকে সহযোগিতা চাই এ কথা বলবো না কারণ এটা আপনাদেরই কাজ। আমরা শুধু সাচিবিক কাজগুলো করে দিলাম।
গতকাল শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, এটা আমার কাজ নয়। আপনারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন, আপনাদের বলতে হবে সমাজের কোন কাঠামো কেমন হবে কী করা দরকার। কোনটা এখনই করা যাবে আর কোনটা পরে করলে হবে। কিছু সংস্কার রদবদল প্রয়োজন হলে আপনারা বললেই রদবদল করা যাবে।
ড. ইউনূস বলেন, সেই নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য কী আইন-কানুন লাগবে, কীভাবে আমরা অগ্রসর হবো সে প্রশ্ন মাথায় রেখে আমরা কিছু সংস্কার কমিশন করেছিলাম।
তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রধান ও তাদের সহকর্মী সদস্যরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন সংস্কারটা যেন এমনভাবে হয় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে।
‘আইনগুলো ঠিক করে নিয়েছিলেন বলেই আমরা মজবুত কাঠামো ঠিক করতে পেরেছি যার ওপর ভিত্তি করে আমরা দেশ গড়ার কাজে নেমেছি। কাজেই তারা যেসব প্রস্তাব করবেন ও করেছেন সেগুলো তাদের অভিজ্ঞতা, তাদের পা-িত্য ও আলাপ আলোচনা মাধ্যমে করেছেন। কষ্ট করে সংস্কার ওস্তাদ তৈরি করার জন্য যারা সংস্কার কমিশনের এখানে উপস্থিত আছেন তাদের ও যারা উপস্থিত নেই তাদেরও ধন্যবাদ জানাই।’ অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এখন কাজ হলো কতটুকু আমরা গ্রহণ করবো, কীভাবে দ্রুততার সঙ্গে করবো এবং অগ্রসর হবো। তারা তাদের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবনা তৈরি করেছেন এখন আপনারা আপনাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে গ্রহণ বর্জন করবেন।
তিনি বলেন, আপনারা জনগণের নেতা, রাজনৈতিক দলের নেতা। আপনাদের প্রতিনিয়ত এ আইনগুলো নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। আলোচনা শুরুর জন্য সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো আপনাদের সামনে দেওয়া হয়েছে। আলোচনা একাডেমিক নয় বাস্তব আলোচনা। কোনটা কাজে লাগাতে পারবো, কোনটা লাগবে আর কোনটা লাগবে না, কোনটা কতটুকু সংশোধন করতে হবে তা নিয়ে আলোচনা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আইনগুলো এমনভাবে তৈরি করা হবে যেন সবাই সেটা মেনে চলবে, মেনে চলার মাধ্যমে আমরা একটা সুন্দর সমাজ, সুন্দর রাষ্ট্র গড়তে পারবো। সে উদ্দেশ্যে আজ বসা। কীভাবে সংলাপ চলবে, সে সম্পর্কে আপনারা ধারণা দেবেন। এটাকে কেন্দ্র করে আমরা একটি ছোট্ট ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা কমিশন করেছি, কমিশনের প্রধানকে এখানে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, কারও ওপর চাপিয়ে দেওয়া নয়, ঐকমত্যের ভিত্তিতে এগুলো গ্রহণ করতে হবে ও কাজে লাগাতে হবে। এই যে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হচ্ছে এটা একটা বড় সুযোগ। সুযোগ এজন্যই যে আমরা এমন একটা পর্যায়ে রয়েছি, আমাদের মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি হলে এগুলো কাজে লাগাতে পারব এবং এবার কাজে লাগালে সেটা বংশ-পরম্পরায় সেটা চলতে থাকবে। একটা সুন্দর দেশ আমরা পাব। এ ভাবনা থেকে আমরা এগুলো গ্রহণ করব। সেই আলোচনাটা কত মসৃণ হবে সুন্দর হবে আপনারা স্থির করবেন। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সুপারিশগুলো আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছি। সংস্কার কমিশনের সদস্যরা আমাদের সঙ্গে বসে এগুলো ব্যাখ্যা করেছেন। চাপানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। আমরা শুধু আপনাদের বোঝাবো কেন করা হয়েছে, কী কারণে করা হয়েছে। সেদিক থেকে আমরা অ্যাপ্রোচ করব এবং জিনিসটিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com