জেলার বাউফল উপজেলার বগা ইউনিয়নের পাতারপোল গ্রামের মরহুম আবদুল করিমের ছেলে মো. মহিউদ্দিন (৩০)। এ তরুণ উদ্যোক্তা করলা চাষে সাফল্য অর্জন করছেন।
তবে তার জীবনে সফলতা এত সহজে আসেনি। এক সময় সরকারি চাকরি পেতে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পরে জীবন সংগ্রামের অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকায় বায়িংহাউজে কাজ নেন। সেখানেও তার প্রতি অবিচার করে কর্তৃপক্ষ। জীবনের এমন করুন বাস্তবতায় নিজ বুদ্ধি ও সুশিক্ষিত স্ত্রীর পরামর্শে নিজের গ্রামের বাড়িতে এসে শুরু করেন কৃষিকাজ। চালিয়ে যান সংগ্রাম। করলা চাষ করেই বাজিমাত করেছেন মহিউদ্দিন। ফলে মহিউদ্দিনের নাম ছড়িয়ে পড়েছে বাউফল উপজেলা জুড়ে। গত বুধবার বাসস প্রতিবেদককে ঘুরে দেখান তার কৃষি প্রকল্পগুলো। তিনি বর্তমানে উন্নত জাতের করলা চাষ করেছেন। তার দুই খন্ড জমিতে প্রায় ১২০০ (বার শত) করলা গাছ রয়েছে। তিনি গোটা উপজেলায় করলা সরবরাহ করেন। দামও ভালো পাচ্ছেন। সাপ্তাহে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার করলা বিক্রি করেন মহিউদ্দিন। সেই হিসেবে মাসে অর্ধলাখের বেশি টাকার করলা বিক্রি করেন তিনি। এতে দুই সন্তান আর এক স্ত্রী নিয়ে দারুণ সময় কাটছে তার।
কিভাবে একজন সফল চাষি হলেন মো. মহিউদ্দিন তিনি বলেন, আমি বগা কলেজ ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়েছি। তারপর সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করে প্রতারিত হয়েছি। পরে আমি একটি বায়িংহাউজে জব নিয়েছিলাম। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর কারো অধীনে কাজ করবো না। পরে স্ত্রীর পরামর্শে বাড়িতে এসেছি। এসে দুজনে সিদ্ধান্ত নিয়ে কৃষিতে মনোযোগ দিয়েছি। পরে করলা চাষে নেমে পড়েছি। এখন আমাদের মাসিক ইনকাম ৫০ হাজারের বেশি। এতে আমরা খুশি আছি। আল্লাহ ভালো রেখেছেন।
জমিতে করলার পাশাপাশি এ সফল চাষী লাউ, চিচিঙা, টমেটো, লালশাকসহ সিজনাল সবজি চাষ করেন। এ বছর লালশাক বিক্রি করেছেন ৭০ হাজার টাকার। করলা কত করে বাজারের পাইকারদের বিক্রি করেন জানতে চাইলে কৃষক মহিউদ্দিন বলেন, যখন বাজারের চাহিদা কম থাকে তখন ৫০ টাকা কেজি দরে ছেড়ে দেই। আর যখন বাজারে চাহিদা থাকে তখন ৭০ করে ছেড়ে দেই। বাজারের ডিমান্ড বুঝে দাম বাড়ে ও কমে বলে জানান এ তরুণ উদ্যোক্তা।
তিনি জানান ,উপজেলা কৃষি অফিস ও কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তায় আমি আজ এ পর্যন্ত এসেছি। কৃষি কর্মকর্তারা বেশ আন্তরিক আমার প্রতি। আমার যেকোনো সমস্যায় তাদের কাছে পেয়েছি। তাদের পরামর্শে চলে বেশ উপকার পাচ্ছি। কৃষি অফিস আমাকে ট্রেনিং করিয়েছে। এতে আমি কৃষিতে আরো পরিপক্ক হয়েছি। আগে আমার কৃষিতে যে ঘাটতি ছিল সেটি ট্রেনিংয়ে গিয়ে ঠিক হয়েছে। মোটকথা ট্রেনিংয়ে আমাকে উন্নত কৃষকে রুপান্তর করেছে। এখন আর আমার চাষাবাদ করতে অজানা ভয় বলতে কিছু নেই।
তিনি বলেন, আমার ৫০ শতাংশ জমির প্রকল্প পাস করেছে কৃষি অফিস। সেখানে আমাকে কৃষি বীজ দিয়েছে। মাচিং দিয়েছে। সার দিয়েছে। একইসঙ্গে অর্থনৈতিক সহায়তাও করেছে। সরকারের কাছে কৃষিতে আরো উন্নত করতে আপনার কিছু চাওয়ার আছে কিনা জানতে চাইলে কৃষক মহিউদ্দিন বলেন, আমি যেন আরো বড় মাপের একজন কৃষক হতে পারি। আমার স্বপ্নের মতো কৃষি বাগান করতে পারি। সেজন্য আমাকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা যেন দেয়া হয়। আমার জমি ও পুকুর আছে। সেখানে অনেক পরিকল্পনা আছে। সরকার এগিয়ে আসলে আমার স্বপ্ন পূরণ সহজ হবে।
তরুণ বেকারদের উদ্দেশ্যে মহিউদ্দিন বলেন, আমিও জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করেছি। অনেক সংগ্রাম করেছি। যার ফলে আজ এ অবস্থানে এসেছি। মূলতঃ একজন সফল উদ্যোক্তা অথবা চাষী হতে হলে সর্বপ্রথম লাগবে প্রবল ইচ্ছে শক্তি আর আত্মবিশ্বাস। আমি বেকারদের বলবো, আপনার প্রথমে ছোট করে চাষাবাদ শুরু করুন। পরে বড় করে শুরু করবেন। কিন্তু শর্ত হচ্ছে বেকার ঘরে বসে থাকা যাবে না। সময় অপচয় করা যাবে না। সময়কে কাজে লাগাতে হবে। ছোট থেকেই মানুষ বড় হয়। এটাই হচ্ছে সফলতার একমাত্র সূত্র।
তিনি জানান,তার সাফল্যের পেছনে স্ত্রীর অবদান সবচেয়ে বেশি। আমার খারাপ সময়ে তিনি সেলাই মেশিন চালিয়ে টাকা জমিয়েছেন। কোচিং সেন্টারে চাকরি করে আমাকে সাপোর্ট দিয়েছেন। সুতরাং এটি বলা যায় যে, আমার স্ত্রীর পরামর্শে আজ আমি একজন স্বাবলম্বী কৃষক হতে পেরেছি। সবার উচিত জীবনের সংকটে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বলেও মনে করছেন এ সফল চাষী।
তরুণ মহিউদ্দিনের স্বাবলম্বী কৃষক হওয়ার পেছনের মূলকারিগর তার স্ত্রী মোসাম্মাত ফাতেমা (২৫)। তিনি পটুয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যায় অনার্স শেষ করেছেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন মেধাবী এ কৃষক পতœী। তিনি বাসস প্রতিবেদককে বলেন, বিয়ের পর আমরা সংকটে ধৈর্য না হারিয়ে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি কৃষি কাজ করার। এখন আমরা স্বাবলম্বী। যদি কারো অল্প জমিও থাকে তাহলে যেন তারা সেটিকে কাজে লাগায়। অর্থাৎ চাষাবাদ করে। পাশাপাশি বাড়িতে হাঁস-মুরগী পালনও করতে পারে। এতে তারা সফল হবে। এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেদোয়ান উদ্দিন তালুকদার বলেন, বগা ইউনিয়নের একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা মহিউদ্দিন । তিনি করলা চাষে সফল হয়েছেন। তাকে আমরা সব সময় বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান করি। ভবিষ্যতেও তার প্রতি এ সেবা অব্যাহত থাকবে।