সিঙ্গারা পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়। সাধারনত রাস্তার পাশে বা হাট-বাজারের দোকানে আলু, বিভিন্ন সবজি বা গরু-খাসির কলিজার সিঙ্গারা পাওয়া যায়। তবে বরেন্দ্র জেলা নওগাঁয় ব্যতিক্রমী এক দোকান খুলেছেন রাকিবুল হাসান নামের এক ব্যক্তি। তিনি তৈরি করছেন মাছের সিঙ্গারা। এর পাশাপাশি তার দোকানে মাছ দিয়ে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু রোল ও মোগলাই। যা ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে জেলাজুড়ে। প্রতিদিন তার দোকানে মাছের সিঙ্গারা ও রোল খেতে ভিড় করছেন ভোজনরসিক মানুষরা। দেখতে আলু সিঙ্গারার মতো হলেও এটি মাছ দিয়ে তৈরি। তাই এর নাম মাছের সিঙ্গারা। নওগাঁর বদলগাছীর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর ইউনিয়নের দাড়িশন গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে রাকিবুল হাসান(৩৫)। তিনি পাহাড়পুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে সংসারের হাল ধরার জন্য ২০১৮ সালে পাহাড়পুর বাজারে হোটেলের ব্যবসা শুরু করেন। সে সময় তার দোকানে ভাত, মাছ, মাংস, পরোটা, খিচুড়ি, পিয়াজু ও আলুর সিঙ্গারাসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যেত। এরপর ২০২৪ সালে স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমির সাথে যুক্ত হন। সেখান থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন এবং ২০২৫ সালের শুরুতে পিকেএসএফ এর অর্থায়নে মৌসুমি থেকে মাছ দিয়ে কিভাবে মুখরোচক বিভিন্ন খাবার তৈরি করা যায় তার প্রশিক্ষন গ্রহন করেন। প্রশিক্ষন শেষে খাবারের তালিকায় যুক্ত করেন মাছের সিঙ্গারা, মাছের রোল ও মাছের মোগলাই। প্রথম দিকে প্রতিদিন ১৫-২০ পিচ সিঙ্গারা বিক্রি হলেও ভোজন রসিকদের পছন্দ হওয়ায় মুখরোচক এ খাবারটির চাহিদা বেড়ে বর্তমানে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ পিচ সিঙ্গারা বিক্রি হয়। পাশাপশি প্রতিদিন ৫০-৬০ পিস রোল ও ৪০-৫০ পিচ মোগলাই বিক্রি হয়। এসব খাবারে তার প্রতিদিন প্রয়োজন হয় ৭-৮ কেজি পাঙাশ, তেলাপিয়া ও জাপানিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এক কথায় যে মাছের কাটা কম সে মাছ দিয়ে এসব খাবার তৈরী করা সহজ হয়। সিঙ্গারা তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে রাকিবুল হাসান বলেন, মাছ কাটার পর ভালোভাবে পরিস্কার করা হয়। এরপর সিদ্ধ করে কাঁটা বেছে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। পরে সেগুলো মসলায় কসিয়ে তেলে ভেজে সিঙ্গারা, রোল ও মোগলাই তৈরি করা হয়। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে তার বেচাকেনা। প্রতি পিস সিঙ্গারা ১০ টাকা, রোল ২০ টাকা, মোগলাই ৮০ টাকা করে। পাশাপাশি ডিমের চপ, বেগুনি ও পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। বর্তমানে তার দোকানে কর্মচারীর সংখ্যা ৬জন। আগে যেখানে প্রতিদিন বেচাকেনা হতো ১০-১৫ হাজার টাকা বর্তমানে সেখানে বেচাকেনা হয় ২২-২৫ হাজার টাকা। সবকিছু বাদ দিয়ে মাসে তার আয় হয় প্রায় লাখ টাকা। সিঙ্গারা খেতে আসা আব্দুল করিম ও সালমান আলী বলেন, সিঙ্গারা খেতে এসে দেখি রাকিবুলের দোকানে প্রচুর ভিড়। ভাজার মাত্রই শেষ। ব্যবসার খাতিরে মাঝে মধ্যে এ রাস্তা দিয়ে জয়পুরহাটে যেতে হয়। লোভ সামলাতে না পেরে মাছের সিঙ্গারা খেতে হয়। পাহাড়পুর প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা মুন্নজান বলেন, জীবনে অনেক সিঙ্গারা খেয়েছি; কয়েকদিন আগে বাচ্চারা বলছিল রাকিব চাচার দোকানে মাছের সিঙ্গারা পাওয়া যায়। তাই আজ খেতে আসলাম। মাছের রোল ও সিঙ্গারা খেলাম খুবই ভালো লেগেছে। মৌসুমির মৎস্য কর্মকর্তা শাহারিয়া হোসেন বলেন, পিকেএসএফ এর সহায়তায় জেলায় একমাত্র মৌসুমী এই প্রকল্পটি চালু করায় জেলায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বর্তমানে রেডি টু ইট ফিশ প্রোডাক্ট আমাদের খাদ্য তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। অনেক পরিবারের ছোট বাচ্চারা মাছের কাঁটা বা গন্ধের কারনে মাছ খেতে চায় না। রেডি টু ইট ফিশ সম্পূর্ণ গন্ধমুক্ত, কাঁটামুক্ত এবং পুষ্টিমান অক্ষুন্ন থাকায় সব বয়সের মানুষ এটা সহজেই খেতে পারে।