ধর্মকে ব্যবহার করে যারা দেশকে নিশ্চিত অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে চায়, তাদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী বিরূপ মন্তব্য করছে। তারা জানে না, ভাস্কর্য কী জিনিস, আর মূর্তি কী জিনিস। তারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।‘ দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে শুক্রবার (২০ নভেম্বর) এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার স্বরূপ ১০টি বাড়ি নির্মাণের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষে এ সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
ধর্ম ব্যবসায়ীরা নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে দিতে চায় না-মন্তব্য করে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জাতির পিতার এসব ভাস্কর্য দেখে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে জানবে। নতুন প্রজন্ম যখন এসব ভাস্কর্য দেখবে, তখন তারা বঙ্গবন্ধুকে জানবে। কীভাবে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে, বঙ্গবন্ধুকে না জানলে তা জানা যাবে না। এ ধর্ম ব্যবসায়ীরা আমাদের বাংলাদেশের সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে দিতে চায় না। সেজন্য তারা ভাস্কর্যকে মূর্তি হিসেবে উপস্থাপন করে দেশে একটা অরাজকতা তৈরি করতে চায়। তারা জানে না এ ব্যবসা বাংলাদেশে বন্ধ হয়ে গেছে। জঙ্গিবাদের ব্যবসা বাংলাদেশে বন্ধ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রকৃত ধর্ম অনুসরণ করেই বাংলাদেশ চলবে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ পবিত্র কোরআন ও হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর নির্দেশনা অনুযায়ী চলবে। হিংসা বিদ্বেষ ও সন্ত্রাসের জায়গা ইসলামে নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। অতীতেও ধর্মীয় শিক্ষাটাকে বিকৃত করে, ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে বিপথে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।’
বাংলাদেশে করোনার চিকিৎসা ইউরোপ-আমেরিকা থেকে ভালো মন্তব্য করে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শুরুতে বাংলাদেশের করোনা চিকিৎসা নিয়ে শত সমালোচনা ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, ইউরোপ-আমেরিকার থেকে বাংলাদেশের করোনা চিকিৎসা ভালো। বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে, আক্রান্ত হচ্ছে; কিন্তু মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণে আছে। এটা কিন্তু ইউরোপ-আমেরিকার ডাক্তাররা পারছে না। আজ আমেরিকার নির্বাচনে বড় অস্ত্র হয়ে গেলো করোনা। আমাদের দেশে করোনা মোকাবিলায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন এক ধরনের স্বাভাবিক অবস্থা চলে এসেছে।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার মধ্যেও আমাদের উন্নয়ন কর্মকা- থেমে নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতি কত শক্তিশালী, আমরা আড়াই মাস মানুষের বাড়ি বাড়ি চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দিয়েছি। ইউএনও, ডিসিসহ সরকারি কর্মকর্তারা মাথায় করে মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। যখন পরিবারের লোকজন কোনও করোনার রোগীর পাশে যাচ্ছেন না, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। ডাক্তাররা রোগীদের চিকিৎসা করাচ্ছেন। এ চিত্র সমগ্র বাংলাদেশের।’
নিজের মন্ত্রণালয়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘করোনার সময়ে একদিনের জন্যও চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ হয়নি। খাদ্য সরবরাহ চালু ছিল। এ সাহস আমরা পেয়েছি জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার কাছ থেকে। তিনি সাহস না দিলে আমরা মুখ থুবড়ে পড়তাম।’ পঁচাত্তর পরবর্তী সময় থেকে দেশে নীতিহীন শিক্ষা শুরু হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। ইতিহাস বিকৃত করেছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাজনীতিকে কলুষিত করেছে।’
এদিন উপজেলার ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ও নতুন সড়ক নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছন্দা পালের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন সেতাবগঞ্জ পৌর মেয়র আব্দুস সবুর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফছার আলী, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল মোতালেব ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা।