রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫, ০৮:২৮ পূর্বাহ্ন

ভোটে তিনি হারেননি, তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছিল

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫

মেয়র পদের ঘোষণা নিয়ে সমালোচনার জবাবে ইশরাক
ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদ ঘোষণা ঘিরে নানা মহলের সমালোচনার জবাব দিয়েছেন ইশরাক হোসেন। বলেন, ভোটে তিনি হারেননি, তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পরই আইন মেনে তিনি মামলা করেছিলেন। সেই মামলা তখন ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ পাঁচ বছর আইনি লড়াইয়ের পর তিনি এখন ন্যায়বিচার পেয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ইশরাক হোসেন এ কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে রিকশা–ভ্যান ও অটোচালকদের মধ্যে ঈদ উপহার দিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দলটি।
২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল বাতিল করে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গতকাল বৃহস্পতিবার রায় দিয়েছেন আদালত। ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম এ রায় দেন।
ইশরাক হোসেনের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ২০২০ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের প্রার্থী ইশরাক হোসেনের গাড়িবহরে হামলা করা হয়, ইভিএম মেশিনে ভোট জালিয়াতি করা হয়, নির্বাচনে ভোটারদের ভোট গ্রহণে বাধা দেওয়া হয়, নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি করা হয়। এত সব জালিয়াতির পরও নির্বাচন কমিশন শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র ঘোষণা করে। নির্বাচন কমিশনের গেজেট চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ৩ মার্চ ইশরাক হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। আদালত পূর্ণাঙ্গ শুনানি নিয়ে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করেছেন।
ইশরাক হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর আইনি লড়াইয়ের পর গতকাল রায় পেয়েছি। এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পেয়েছি। তবে এই রায় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় কেউ কেউ বোঝার কমতি থাকার কারণে যে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন, তাঁদের জানার ক্ষেত্রে কিছু তথ্যের ঘাটতি রয়েছে।’
পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘অনেকেই হয়তো মনে করছে যে ৫ আগস্টের পর এই মামলা দায়ের করা হয়েছে বা আমরা হয়তো এরপর এসে (২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর) এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আইন অনুযায়ী নির্বাচন হওয়ার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগ করতে হয় এবং সেই ৩০ দিনের মধ্যেই মামলাটি করা হয়েছিল। পরবর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে এই মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আইনি বিধান থাকলেও বিগত ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের আমলে এটিকে বাধাগ্রস্ত করা হয়। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী তাপস এই মামলা বাতিল করার জন্য উচ্চ আদালতে এবং নি¤œ আদালতে চাপ প্রয়োগ করেছেন। উচ্চ আদালতে আবেদন করে মামলার শুনানি বন্ধ করে রেখেছিলেন।’
পরবর্তীকালে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর ওই মামলার শুনানি করে এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করেই মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন জানিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, এই মামলায় সাক্ষী–শুনানি হয়েছে, যুক্তিতর্ক হয়েছে এবং পরবর্তী সময় গতকাল কাঙ্ক্ষিত রায় দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে রিকশা–ভ্যান ও অটোচালকদের মধ্যে ঈদ উপহার দেওয়ার আয়োজন করা হয়ছবি: দীপু মালাকার
ইশরাক হোসেন আরও বলেন, ‘ন্যায়বিচার চাওয়ার কারণে যদি কোনো গোষ্ঠী এটাকে অন্যায়–অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে আমার প্রতি বৈষম্য করে, যদি ন্যায়বিচার চাওয়ার জন্য এখন অপরাধী হয়ে যাই, তাহলে এ ক্ষেত্রে আমার কিছু বলার নাই, করারও নাই। জনগণই সেটার বিচার করবে। আমি এখানে সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য কার্যক্রম করেছি।’
এই রায় আরও ৫ বছর আগে, ১৮০ দিনের মধ্যে হওয়ার কথা ছিল বলে জানান ইশরাক হোসেন। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে এই রায় দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘এখন আমি আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রায়টি পেয়েছি। রায় পাওয়ার পর গতকালও বলেছি এটা দলের সর্বোচ্চ ফোরাম সিদ্ধান্ত নেবে। সব দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী আমি আমার পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
সমালোচকদের উদ্দেশে ইশরাক আরও বলেন, ‘তারা ফোকাস করছে বিএনপির প্রার্থী মেয়র পদে যাচ্ছেন। আমরা যে একটি আইনি উদাহরণ ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেলাম, সেটার জন্য তাদের আমাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত ছিল এ কারণে যে একটা আইনের শাসন, এর জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এটা হলো আমাদের মূল উদ্দেশ্য, মূল লক্ষ্য।’
ইশরাক বলেন, ‘আমি কিন্তু হারি নাই। আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব, সেটা কাগজে–কলমে প্রতিষ্ঠা পাক, সেটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আরও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রফিক ও মাহবুবুল ইসলাম।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com