বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন দুই দিনের সফরে থাইল্যান্ড রয়েছেন, এর মধ্যেই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ‘চিকেনস নেক’ করিডোরের ওপর নিবিড় নজর রাখছে নয়াদিল্লি।
বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন দুই দিনের সফরে থাইল্যান্ড রয়েছেন, এর মধ্যেই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ‘চিকেনস নেক’ করিডোরের ওপর নিবিড় নজর রাখছে নয়াদিল্লি। ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে ভারত এ গুরুত্বপূর্ণ করিডোরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৌশলগতভাবে সুরক্ষা ব্যবস্থা বাড়িয়েছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে দেশটির মূল ভূখ-ের সঙ্গে যুক্ত করে রেখেছে যে সরু অংশটা, সেটি পরিচিত ‘শিলিগুড়ি করিডোর’ নামে। অনেকটা বাঁকানো মুরগির ঘাড়ের মতো দেখায় বলে জায়গাটিকে অনেকে ‘চিকেনস নেক’ বলেও নামকরণ করেন। সম্প্রতি এ করিডোর নিয়ে যখন নানা আলোচনা শুরু হয়েছে, তার মধ্যেই ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করেছে ভারত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়া টুডে বলছে, থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে থাই প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত একটি রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের মধ্যে যদি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়, তাহলে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি হবে নরেন্দ্র মোদি ও ড. ইউনূসের মধ্যে প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ। তবে এটি এমন সময়ে হচ্ছে যখন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের এ সংকীর্ণ ভূমি উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোকে ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করে। নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান ও চীনের সঙ্গে এর সীমানা রয়েছে। সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত এ গুরুত্বপূর্ণ করিডোরটিকে রক্ষা করার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। ভারতীয় বিমান বাহিনী হাশিমারা বিমানঘাঁটিতে মিগ বিমানের পাশাপাশি রাফায়েল যুদ্ধবিমানের একটি স্কোয়াড্রন মোতায়েন করেছে। এছাড়া সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলায় করিডোরে ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের একটি রেজিমেন্ট মোতায়েন করেছে ভারত। আকাশপথে যেকোনো অনুপ্রবেশ রোধ করার জন্য এ অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও। ‘এমআরএসএএম’ এবং ‘আকাশ’ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও রয়েছে। এছাড়া ত্রিশক্তি কর্পস প্রায়ই যুদ্ধ মহড়া পরিচালনা করে আসছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী শিলিগুড়ি করিডোরকে তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা লাইন হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা উন্নত সামরিক প্রস্তুতির মাধ্যমে যেকোনো সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলা করতে পারে। এ করিডোরের কাছে সুকনায় ত্রিশক্তি কর্পসের সদর দপ্তর অবস্থিত, যা এ অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান সম্প্রতি শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তা নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে দেশটির অবস্থান আরো দৃঢ় হয়েছে। তিনি বলেন, ‘চিকেনস নেক ভারতের কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটি ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক এলাকা। যেখানে কোনো ধরনের হুমকি দেখলে পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম ও উত্তর-পূর্বের বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম।’
এছাড়া সম্প্রতি ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান উত্তরবঙ্গ সফর করে সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেছেন। তিনি ঘাঁটি পরিদর্শন ও নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা করেছেন। এ সময় তিনি ভারতের আঞ্চলিক অখ-তা রক্ষার প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেন।