শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৯ পূর্বাহ্ন

ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস আর করোনা সংকটে দিশেহারা চিংড়ি চাষিরা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২০

একের পর এক ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস আর করোনা সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মোংলা উপকূলের ১০ হাজার চিংড়ি চাষি। এক বছরের মধ্যে দু’দফায় সামুদ্রিক ঝড় আর সম্প্রতি নিম্নচাপ-লঘুচাপের প্রভাবে ভারি বৃষ্টিপাত এবং প্লাবনে এখানকার চাষিদের মাছ ভেসে গিয়ে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে । এছাড়া করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে চিংড়ি রফতানিতে ধস ও বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় এ খাতের সঙ্গে জড়িতরা চরম দুরাবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, লোনা পানি অধ্যুষিত সুন্দরবন উপকূলীয় মোংলাসহ আশপাশের এলাকায় বছরের অধিকাংশ সময়ই বাগদা চিংড়ির চাষ হয়ে থাকে। অবশ্য খুব স্বল্প পরিসরে গলদা চিংড়ির সঙ্গে অন্যান্য মাছ চাষও সাম্প্রতিককালে শুরু হয়েছে। লবণ আবহাওয়ার কারণে এখানে ধান ও অন্যান্য ফসল ভালো উৎপাদন না হওয়ায় স্থানীয়রা সাধারণত চিংড়ি চাষ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। চিংড়ি ঘের থেকে তোলার পর সংরক্ষণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় চিংড়ি চাষি রেজি হালদার বলেন, সাম্প্রতিককালের একের পর এক ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস আর করোনা সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। বর্তমান সময়ে তার ঘেরে তেমন একটা মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। সব মাছ ভেসে গেছে। আব্দুল মালেক মালেক নামের আরেক চিংড়ি চাষি বলেন, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে তারসহ অধিকাংশ ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। এর ওপর আবার রয়েছে করোনার প্রভাব। তিনি ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত।
তরিকুল ইসলাম আরও ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, বছরের শুরুতে সামুদ্রিক ঝড় বুলবুল আর মাঝ পথে এসে আম্পানের আঘাত এবং সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও লঘুচাপের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে এখানকার হাজার হাজার ঘের তলিয়ে ভেসে গেছে লাখ লাখ টাকার টাকার চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। স্থানীয় মিঠাখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও চিংড়ি ব্যবসায়ী মো. ইস্রাফিল হাওলাদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনার চলমান পরিস্থিতিতে চিংড়ি মাছের বাজার মূল্য কমে দাঁড়িয়েছে চার ভাগের এক ভাগ। খামারে বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয়। কিন্তু চিংড়ির দাম কমতে থাকায় নায্যমূল্য না পেয়ে তাদের চাষিরা সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে বসেছে।’
ক্ষেতে লোনা পানি ধরে এভাবে চিংড়ি ও অন্যনান্য মাছ চাষ করা হয়ে থাকে। মোংলা উপজেলা চেয়ারম্যান ও চিংড়ি ব্যবসায়ী মো. আবু তাহের হাওলাদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘বাগদা চাষের মৌসুমের শুরুতেই প্রান্তিক চাষিরা হোঁচট খেতে শুরু করেন। এপ্রিল-মে মাসে করোনার লকডাউনে হ্যাচারিগুলো বন্ধ থাকায় রেনু পোনার চরম সংকট দেখা দেয়। এছাড়া চাষিরা স্থানীয় নদ-নদীর প্রাকৃতিক চিংড়ি পোনাও আশানুরূপ পাননি। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের ধানও নেই, মাছও নেই।’ মোটা করে আল দিয়ে ধরা হয়েছে পানি। তাতে ছাড়া হয়েছে চিংড়ির রেণু পোনা। তবে করোনা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে এ বছর বেশিরভাগ চিংড়ি চাষির মাথায় হাত। মোংলা উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে-এ উপজেলায় ৮ হাজার ৬৬৪ হেক্টর জলাশয়ের মধ্যে ৩১৫ হেক্টর জমিতে ঘেরের মাধ্যমে চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে ছোট বড় মিলিয়ে সরকারি নিবন্ধিত ঘেরের সংখ্যা ৫ হাজার ৬০১টি। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে মোংলাসহ আশপাশে চিংড়ি ঘের ও প্রান্তিক চাষির সংখ্যা প্রায় দশ হাজার ছড়িয়ে যাবে। এছাড়া বিভিন্ন পুকুরেও মাছ চাষ করা হয়ে থাকে। এরপরও যে পরিমাণ চিংড়ি উৎপাদন হয় তা আবার করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বিদেশে রফতানি করতে না পারায় ঘের ও মৎস্যচাষে ব্যাপক ধস নামাতে শুরু করে। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘প্রতিবছর এখান থেকে গড়ে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদিত হলেও এবার প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগের কারণে এ উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি চাষিদের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com