শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
মাধবদীতে লোডশেডিং ও গরমে ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে চার্জার ফ্যানের বৃষ্টি প্রার্থনায় অঝোরে কাঁদলেন বরিশালের মুসল্লিরা আদিতমারীতে গ্রাম আদালত ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কর্মশালা নওগাঁয় বোরো ধানের সোনালী শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন ছড়ার পানিই ভরসা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর চকরিয়ায় একাধিক অভিযানেও অপ্রতিরোধ্য বালুখেকো সিন্ডিকেট রবি মওসুমে নওগাঁ জেলায় ৮৮ হাজার ১১০ মেট্রিকটন ভূট্টা উৎপাদনের প্রত্যাশা কটিয়াদীতে প্রচন্ড তাপ প্রবাহ, বৃষ্টির জন্য সালাতুল ইসস্তিকা বরিশালে দাপদাহে স্বাস্থ্য সুরক্ষার্থে শেবাচিম হাসপাতালে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু কালীগঞ্জে রাতের অন্ধকারে কৃষি জমির মাটি লুট

এমসি কলেজে ধর্ষণ: ডিএনএ রিপোর্টে ৪ আসামির জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে ধর্ষণের সাথে চারজনের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে ডিএনএ টেস্টে। অন্যরা ধর্ষণে সহায়তা করেছেন। আলোচিত এই মামলার আসামিদের ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদনে এসব তথ্য মিলেছে। পুলিশ এখন মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিলের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। যে চারজনের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে তারা হলেন সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক, শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি ও অর্জুন লস্কর।

এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্তি উপ-কমিশনার (মিডিয়া) বি এম আশরাফ উল্লাহ বলেন, আদালতে আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া ছিল মামলার তদন্তের মূল অগ্রগতি। অভিযোগপত্র দাখিলে ডিএনএ টেস্টের অপেক্ষা ছিল। সম্প্রতি ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদন হাতে এসেছে। এখন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের প্রস্তুতি
চলছে। এর আগে গত ১ অক্টোবর ও ৩ অক্টোবর দুই দিনে এ মামলায় গ্রেফতার আটজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের পর পাঠানো হয় ঢাকার ল্যাবে। সেখান থেকে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট প্রথমে আদালতে এসে পৌঁছায়। পরবর্তীতে এ রিপোর্ট তদন্ত কর্মকর্তার হাতে আসে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের বালুচর এলাকার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ওই তরুণী (২৫)। করোনার কারণে বন্ধ থাকা ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে ওই রেখে তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর তাদের মারধর করে টাকাপয়সাও ছিনিয়ে নেয় ধর্ষকরা। ওই রাতেই নির্যাতিতার স্বামী নগরীর শাহপরান থানায় মামলা করেন।
এ ঘটনার পর দেশজুড়ে ধর্ষণবিরোধী তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। জনমতের চাপ মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে ধর্ষণবিরোধী আইনও সংশোধন করে সরকার।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে নববিবাহিত স্ত্রীকে প্রাইভেটকারে করে শাহপরান মাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন নগরের দক্ষিণ সুরমার জৈনপুর এলাকার এক যুবক। ফেরার পথে সন্ধ্যার দিকে টিলাগড়ে এমসি কলেজের মূল ফটকের সামনে থামেন তারা। এসময় কয়েকজন তরুণ এসে ওই যুবকের স্ত্রীকে ঘিরে ধরেন। এক পর্যায়ে প্রাইভেটকারসহ ওই যুবককে সস্ত্রীক বালুচরে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে যান তরুণরা। এরপর যুবককে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে প্রাইভেটকারের মধ্যেই ধর্ষণ করেন ৫/৬ জন। পরে এই দম্পতিকে মারধর করে তাদের কাছে থাকা টাকা-পয়সা, স্বর্ণালাকার ছিনিয়ে নেন ধর্ষকরা। আটকে রাখেন প্রাইভেটকারও। ছাত্রাবাস থেকে ছাড়া পেয়ে টিলাগড় পয়েন্টে এসে পুলিশকে ফোন করেন নির্যাতিতার স্বামী। পরে পুলিশ গিয়ে ছাত্রাবাস থেকে ওই দম্পতির প্রাইভেটকার উদ্ধার করে এবং নির্যাতিতা তরুণীকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করে। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান অভিযুক্তরা। ওই রাতেই ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামি করে শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করেন নির্যাতিতার স্বামী। মামলায় আসামিরা হলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার মোঃ জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মোঃ মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুমকে (২৫)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো তিনজনকে আসামি করা হয়।
মামলা দায়েরের পর আসামিরা পালিয়ে গেলেও ঘটনার তিন দিনের মধ্যে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে এজাহারভুক্ত আসামি সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম তারেক, মাহবুবুর রহমান রনি, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম এবং সন্দেহভাজন আসামি মিসবাউর রহমান রাজন ও আইনুদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কোনো পদে না থাকলেও গ্রেফতার হওয়া সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত বলে স্থানীয় ও কলেজ সূত্রে জানা যায়। গ্রেফতারের পর তাদের প্রত্যেককে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে সবাই ধর্ষণের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
এদিকে ধর্ষণের রাতে এমসি কলেজে ছাত্রবাসে সাইফুর রহমানের দখলে থাকা কক্ষে অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ সাইফুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করে। সেই মামলার অভিযোগপত্রও এখনো দেয়া হয়নি। অপরদিকে গণধর্ষণের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ইতোমধ্যে হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও মহি উদ্দিন শামিম গঠিত বেঞ্চে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এদিকে গণধর্ষণের এ ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে ২৬ অক্টোবর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও কলেজের অধ্যক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের দোহাই দিয়ে কলেজ কমিটির এ প্রতিবেদনটি সিলগালা করে রাখেন।
তাছাড়া গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত চার আসামির ছাত্রত্ব এবং সার্টিফিকেট বাতিল করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি তাদের স্থায়ীভাবে এমসি কলেজ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাসুম ও রবিউল হাসান। এর আগে ঘটনার কয়েকদিন পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গণধর্ষণের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি এমসি কলেজে তদন্ত করতে আসে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন তারা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com