শেষ হতে চললো ২০২০ সাল। আর মাত্র কয়েকটি ঘণ্টা বাকি। করোনাভাইরাসের মহামারি নিয়ে আসা বছরটিকে বিদায় করতে পারলেই যেন বাঁচে সবাই। বেদনা, শোক আর আতঙ্কে কেটেছে বছরটি। প্রায় সারা বিশ্বই ছিলো ঘরবন্দী হয়ে। তবে এর মধ্যেই মানুষকে হতাশা কাটাতে কাজ করে গেছেন শোবিজের মানুষেরা। দেশে দেশে করোনার মধ্যেও সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। বিনোদন দিয়েছে মানুষকে।
এক্ষেত্রে দারুণ ভূমিকা রেখেছে বলা যায় ওটিটি প্লাটফর্মগুলো। নেটফ্লিক্সসহ বেশ কিছু অ্যাপসে বলিউডের কিছু সিনেমা মুক্তি পেয়েছে ২০২০ সালে। করোনা আসার আগে সিনেমা হলেও দেখা গেছে কিছু সিনেমা। আবার লকডাউন শেষ হবার পরও হলে মুক্তি পেয়েছে সিনেমা। সেগুলোর মধ্য থেকেই আলোচনা ও প্রশংসিত হয়েছে বলিউডের বেশ কিছু সিনেমা।
আবার অনেক সিনেমা দেখে হতাশও হয়েছেন দর্শক। গল্প, চিত্রনাট্য, নির্মাণ ও অভিনয়ের দুর্বলতায় এসব ছবি বিরক্তির কারণ হয়েছে। সেই তালিকায় একবার চোখ রাখা যাক-
লাভ আজ কাল: এ তালিকায় শুরুতেই চলে আসে ইমতিয়াজ আলির ‘লাভ আজ কাল’ সিনেমার নাম। ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি সিনেমার রিমেক হিসেবে তৈরি হয় সিনেমাটি। ছিল ভিন্ন ধরণের রিমেকের প্রতিশ্রুতি। তবে কার্তিক আরিয়ান এবং সারা আলি খানের অভিনয় থেকে শুরু করে প্লটের অগ্রগতি সব জায়গা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। অবশেষে করোনায় আক্রান্ত ২০২০ সালের মতো এ সিনেমাটিও শেষ হয় হতাশার মধ্য দিয়ে।
ভুত পার্ট ওয়ান – দ্য হনটেড শিপ: হরর সিনেমায় বলিউডের সাফল্য কখনই উল্লেখযোগ্য ছিল না। তবে ভিকি কৌশল যখন ‘ভূত পার্ট ওয়ান : দ্য হান্টেড শিপ’-এর জন্য ধর্ম প্রোডাকশনের সাথে আলোচনায় বসেন তখন আশার পারদটা বাড়তে থাকে সবার। কিন্তু সিনেমাটি মুক্তির পর দর্শকের আবদার মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে এটি।
বাঘি থ্রি: চলতি বছরে মুক্তির আগে দর্শকের মুখে মুখে থাকা সিনেমার নামগুলোর মাঝে একটি ছিল ‘বাঘী থ্রি’। তবে মুক্তির পর সিনেমাটির নতুনত্ব খুঁজে বের করতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে দর্শকদের। অনেকের কাছেই মনে হয়েছে এ যেন প্রথম দুই পর্বের মিশ্রণ। টাইগার শ্রফকে জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামিয়ে দেওয়াটাও অতিরঞ্জিত মনে হয়েছে অনেক সিনেমা সমালোচকের কাছেও। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন আহমেদ খান। এই ছবিতে প্রথম কিস্তির পর আবারও নায়িকা হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়েছে শ্রদ্ধা কাপুরকে।
সড়ক ২: টিজার মুক্তির প্রথম দিনেই আনলাইকের ঝড় তুলেছিল ‘সড়ক ২’। বিতর্কিত এই সিনেমাটির যাবতীয় বিতর্ক সরিয়ে রেখে শুধু সিনেমার কথা বললে, তাতেও ব্যর্থ পরিচালক। কারণ, পরিচালক হিসেবে ২০ বছর পার করলেও মহেশ ভাট বোধহয় কোথাও গিয়ে দর্শকদের নাড়ি মাপতেই ভুলে গিয়েছিলেন। পয়সার খেলা, সম্পত্তি, অন্ধবিশ্বাস, তন্ত্রমন্ত্রকে হাতিয়ার করে সিনেমার প্লট বাঁধলেও বাস্তব বিবর্জিত এই গল্প দর্শকের নিন্দাই কামিয়েছে শুধু। চলচ্চিত্রটিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সঞ্জয় দত্ত, পূজা ভাট, আদিত্য রায় কাপুর ও আলিয়া ভাট।
খালি-পিলি: শুরু থেকেই বিতর্ক পিছু ছাড়েনি এই ছবির। গানে ‘গোরিয়া’ শব্দ এবং ‘বিয়ন্সে’র নাম ব্যবহার করায় বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগও উঠেছিল খালি-পিলি টিমের বিরুদ্ধে। এই ছবির গল্প, ভিলেন থেকে অ্যাকশন সিকুয়েন্স আপনাকে ভাবাতে পারে এটা আশির দশকে তৈরি কোনো বলিউড ছবি। অনন্যা পা-ে, ঈশান খাত্তার এবং জয়দীপ আহলাওয়াত অভিনীত এই সিনেমাটি পরিচালনা করেন মকবুল খান।
লক্ষ্মী: চলতি বছর আলোচনার শীর্ষে থাকা সিনেমাগুলোর মাঝে অন্যতম একটি ‘লক্ষ্মী’। সিনেমার গল্পটি যেন একাই টেনে গিয়েছেন অক্ষয় কুমার। দুর্র্ধষ ক্লাইম্যাক্স। এক রূপান্তর-কাম বা ট্রান্স-জেন্ডারের আত্মাই এই ছবির মূল চরিত্র। নামে হরর-কমেডি ঘরানার হলেও চিত্রনাট্যে কমেডি খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে দর্শকদের। বৃহন্নলার ভূমিকায় অক্ষয় অসাধারণ অভিনয় করলেও সিনেমার বাকি কারো অভিনয় নজরে আসেনি কোনোভাবেই। ছবিটি যেমন ফ্লপ হয়েছে তেমনি লোক হাসিয়েছে।
কুলি নাম্বার ওয়ান: চলতি বছরের সমালোচিত সিনেমাগুলোর মাঝে অন্যতম একটি ‘কুলি নাম্বার ওয়ান’। বলা চলে ২০২০ সালের মুখে চুনকালি মেখে দিয়েছে সিনেমাটি। ডেভিড ধাওয়ান পরিচালিত ১৯৯৫ সালের ক্লাসিক কমেডির রিমেক এই সিনেমাটি দর্শকের মনের আবদার মেটাতে ব্যর্থ শতভাগ। উল্টো ভোগ করতে হয়েছে দর্শকের বাজে প্রতিক্রিয়া। ভারতীয় গণমাধ্যমও ছবিটিকে ‘বাজে’, ‘হাস্যকর’ আখ্যা দিয়ে রিভিউ ছেপেছে। বরুণ ধাওয়ান ও সারা আলি খান অভিনীত এই সিনেমাটি আইএমবিডি রেটিংও মাত্র ১.৪।