করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাখাত। এরপরেও যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন। গতকাল শুক্রবার থেকে ১২দিন পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে। ফলে গত ১১ বছরের দৃষ্টান্ত ভেঙে একদিনের পরিবর্তে ১২ দিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হবে পাঠ্যপুস্তক উৎসব।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকে প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। তার মধ্যে এবতেদায়ী, দাখিল, মাধ্যমিক (বাংলা-ইংলিশ ভার্সন), কারিগরি, এসএসসি ভোকেশনাল, দাখিল ভোকেশনাল ও দাখিল ভোকেশনাল ব্রেইল মিলে ১ কোটি ৮৫ হাজার ৭৫ হাজার ৪৫৩ জনকে ২৪ কোটি ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫৭টি বই দেয়া হবে।
এছাড়াও, প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাক-প্রাথমিক টিচিং প্যাকেজ, প্রাথমিক স্তর ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মিলে ২ লাখ ৩০ হাজার ৭৯ হাজার ৭৭৩ জনকে দেয়া হবে ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫টি বই।
সংশ্লিষ্ট মাধ্যমে জানা গেছে, করোনার মধ্যেও যথাসময়ে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ কাজ শেষ করতে পারার মূল কারণ হচ্ছে সিন্ডিকেটের বিলুপ্তি। গতবছর অগ্রণী প্রিন্টার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে প্রচলিত সিন্ডিকেটের বাইরে দাঁড়িয়ে বিপুল পরিমাণ কম দামে কাজ করে। একই প্রতিষ্ঠান এবারও প্রথম থেকে নবম শ্রেণির এই পাঠ্যবই মুদ্রণেও একই নীতি অবলম্বন করে। সিন্ডিকেটে না ঢুকে বাজারে কাগজের দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মুদ্রণ দর হাঁকে। এতে বাধ্য হয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও মুদ্রণে কম দর দিতে বাধ্য হয়। এতে সরকারের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়। আবার কাজ শুরুর পর কাগজের দর বেড়ে যাওয়ায় মুদ্রণকারীরা ধর্মঘট ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
এছাড়া, মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের কাভারের ভেতরের পাতায় নতুন যুক্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর বাছাইকৃত বিভিন্ন ছবির ব্যাপারে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান উচ্চ দর হাঁকানোর চেষ্টা করছিল। এখানেই শেষ নয়, উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানটি আগে-ভাগে কাজ শেষ করে মাঠ পর্যায়ে তড়িঘড়ি বই পৌঁছাতে থাকে। ফলে সব মিলিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত কাজ শেষ করতে প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে যায়। এই প্রক্রিয়ায় পাঠ্যবই মুদ্রণের কাজ দ্রুত এগিয়ে যায়। যে কারণে হাতে সময় থাকতেও শেষ হয়ে যায় প্রাথমিক স্তরের প্রায় সব বইয়ের মুদ্রণ। আর মাধ্যমিক স্তরের অধিকাংশ বই ছাপানোর কাজ শেষ করে অন্য প্রতিষ্ঠানও মাঠ পর্যায়ে বা উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছেছে। এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বই মুদ্রণের দর এবার কম দেয়ায় প্রথমদিকে কিছু প্রতিষ্ঠান অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের কাগজে বেশি দাম বলার চেষ্টা করেছে। তবে কঠোর তদারকি এবং গণমাধ্যমের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের কারণে শেষ পর্যন্ত মানসম্পন্ন কাগজ দিতে বাধ্য হয় তারা।
জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া ছিল আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। এটিকে সামনে নিয়ে আমরা কাজ শুরু করা হয়। এ কার্যক্রমে আমরা সফল হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যে পাঠ্যপুস্তক তৈরিতে অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। কর্মকর্তারা অফিসে আসতে পারেননি। দেরিতে দরপত্র আহ্বান করতে হয়েছে। নানা ধরনের সিন্ডিকেট করে এ কাজে বিঘ্ন ঘটানোর অপচেষ্টাও চলেছে। সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে আমরা দলবদ্ধভাবে কাজ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশের সকল জেলায় শতভাগ বই পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি।’