করোনা মহামারির মধ্যেও এবার বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (১ জানুয়ারি) সকাল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ শুরু হয়। রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দিচ্ছেন শিক্ষকরা। তবে প্রতি বছরের মতো নয় এবারের উৎসব। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে নতুন বই। আর মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীকে একদিনে বই দেওয়া হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও শিক্ষার্থীদের ভাগ করে ধাপে ধাপে দেওয়া হচ্ছে নতুন বই।
করোনা পরিস্থিতি ও উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বই ছাপা শেষ না হওয়ায় এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন রকম। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন বই পাওয়ার আনন্দ আগের মতেই দেখা গেছে।
প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে বই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর পরদিন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় সারাদেশে আয়োজন করে বই উৎসব পালন করে। কিন্তু এবার তা সম্ভব হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বই তুলে দেওয়া হয়। আজ শুক্রবার সকাল থেকে বিদ্যালয় থেকে বই বিতরণ শুরু হয়।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও যথাসময়ে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনা মূল্যে নতুন বই তুলে দিচ্ছে সরকার। ২০২১ শিক্ষাবর্ষে সর্বমোট ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৪১২ খানা পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবারের উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দেন, প্রতিটি শ্রেণির বই বিতরণের জন্য তিন দিন করে সময় দেওয়া হবে। অর্থাৎ ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১২ দিনে বই বিতরণ করা হবে। সেই অনুযায়ী বই বিতরণ চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন অনুষ্ঠানে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অভিভাবকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে বই পৌঁছে দেওয়া হবে। যেসব বিদ্যালয়ে একদিনে বই বিতরণ সম্ভব সেসব বিদ্যালয়ে একদিনে এবং যেসব বিদ্যালয়ে সম্ভব নয়, সেসব বিদ্যালয়ে একাধিক দিন বই বিতরণ করা হবে। সেই ঘোষণা অনুযায়ী দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুক্রবার সকাল থেকে বই বিতরণ শুরু হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা হেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব শিক্ষার্থী বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক পাবে। ঘোষণার পর ২০১০ সালের ১ জানুয়ারিতে ১৯ কোটি ৯০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৬১ কপি পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ৩৩১ কোটি ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার ৩৬১ কপি বই ছাপানো হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের সঙ্গে ২০১৭ সালে যুক্ত হয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ব্রেইল বই, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী চাকমা, মারমা ত্রিপুরা, সার্দ্রি, গারো জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় রচিত পাঠ্যবই।