আইফোন নির্মাতা অ্যাপল গত বৃহস্পতিবার নিজেদের চীনা অ্যাপ স্টোর থেকে ৩৯ হাজার গেম সংশ্লিষ্টসহ মোট ৪৬ হাজার অ্যাপ সরিয়ে দিয়েছে, যা দেশটির জন্য বিশেষায়িত অ্যাপ স্টোর থেকে একদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক অ্যাপ সরানোর রেকর্ড। চীনা অ্যাপ স্টোরে গেম প্রকাশের জন্য নির্ধারিত সময়ে দেশটির সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স না নেয়ায় একযোগে এ বিপুলসংখ্যক অ্যাপ সরিয়েছে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি। খবর রয়টার্স।
অনলাইন গেমের জন্য নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন করেছে চীন। এর আওতায় সব গেম প্রকাশককে চীন সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা মেনে গেম প্রকাশকদের প্রয়োজনীয় লাইসেন্স নিতে গত বছরের শেষ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল অ্যাপল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লাইসেন্স নিতে ব্যর্থ প্রকাশকদের গেম অ্যাপ স্টোর থেকে সরিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ওয়াশিংটন-বেইজিং বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে চাপে রয়েছে। অন্যদিকে চীন সরকারের চাপে রয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া চীন বরাবরই বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা সংস্কৃতি বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করে আসছে। বলা হচ্ছে, ‘লাইসেন্সহীন’ গেম প্রশ্নে চীন সরকারের চাপের মুখে রয়েছে অ্যাপল। যে কারণে নির্ধারিত সময়ে লাইসেন্স নিতে ব্যর্থ প্রকাশকদের গেম অ্যাপ চীনা অ্যাপ স্টোর থেকে সরানোর পদক্ষেপ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত বৃহস্পতিবার একযোগে ৩৯ হাজার গেমসহ মোট ৪৬ হাজারের বেশি অ্যাপ চীনা অ্যাপ স্টোর থেকে সরিয়েছে অ্যাপল। গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিমাইয়ের দাবি, সরিয়ে ফেলা গেম অ্যাপ তালিকায় ইউবিসফটের অ্যাসাসিন’স ক্রিড আইডেনটিটি এবং এনবিএ ২কে২০ গেম রয়েছে। সামগ্রিকভাবে চীনা অ্যাপ স্টোরের শীর্ষস্থানীয় দেড় হাজার পেইড গেমের মধ্যে মাত্র ৭৪টি অ্যাপলের খড়গ থেকে রেহাই পেয়েছে। প্রাথমিকভাবে গত বছরের জুন পর্যন্ত সরকার অনুমোদিত লাইসেন্স নম্বর জমা দিতে গেম প্রকাশকদের সময় বেঁধে দিয়েছিল অ্যাপল, যাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গেমিং বাজারটির গ্রাহকরা ইন-অ্যাপ পারচেজ চালিয়ে যেতে পারে। তবে পরবর্তী সময়ে সময়সীমা বাড়িয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ধাপে সময় বাড়ানোর পরও যেসব গেম প্রকাশক লাইসেন্স নিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের গেম চীনা অ্যাপ স্টোর থেকে সরানো হয়েছে।
বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্ট গুগল তাদের প্লে স্টোরের ক্ষেত্রে চীনা কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স বিষয়ে নীতিমালার শর্ত আগেই পূরণ করেছে। বিষয়টি নিয়ে কঠোর সতর্কবাতা দিয়েছিল অ্যাপলও। কিন্তু তার পরও নীতিমালার শর্ত এখনো শতভাগ নিশ্চিত করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছর অ্যাপল আরো জোরালোভাবে কেনো নীতিমালায় জোর দিচ্ছে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
চীনা অ্যাপ স্টোর থেকে একযোগে বিপুলসংখ্যক গেম অ্যাপ সরানোর বিষয়ে অ্যাপলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, গেম পাবলিশারদের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির অ্যাপ স্টোর ব্যবসায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বিপুলসংখ্যক গেম অ্যাপ সরানোর সিদ্ধান্ত। বিশ্বের বৃহৎ দুই অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্য বিরোধ চলে আসছে। এরই জেরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টিকটক ও উইচ্যাট নিষিদ্ধে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন, যা কার্যকরের বিষয়টি এখন আদালতে ঝুলে আছে। ট্রাম্পের আদেশ কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে শর্ট ভিডিও তৈরির সোস্যাল মিডিয়া অ্যাপ টিকটক ও মেসেজিং অ্যাপ উইচ্যাট অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর থেকে সরাতে হবে, যা স্মার্টফোনের বৃহৎ বাজার চীনে আইফোন সরবরাহ অন্তত ২৫-৩০ শতাংশ কমাবে বলে সতর্ক করেছেন বিখ্যাত অ্যাপল পণ্য বিশ্লেষক মিং-চি কুয়ো।
মিং-চি কুয়োর দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে দুই চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধে শুধু আইফোন সরবরাহ ও বিক্রিতেই নয়; চীনের বাজারে অ্যাপলের অন্যান্য হার্ডওয়্যার বিক্রি এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ কমবে। এ তালিকায় রয়েছে এয়ারপডস, আইপ্যাড, অ্যাপল ওয়াচ ও ম্যাক কম্পিউটার। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন যদি শুধু যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপ স্টোর থেকে টিকটক ও উইচ্যাট সরাতে অ্যাপলকে বাধ্য করে, তাহলে বৈশ্বিক বাজারে আইফোন সরবরাহ কমবে ৩-৬ শতাংশ। তবে বৈশ্বিক অ্যাপ স্টোর থেকে দুই অ্যাপ সরাতে বাধ্য করা হলে আইফোন সরবরাহ কমবে ২৫-৩০ শতাংশ, যা অ্যাপলের ডিভাইস ব্যবসা বিভাগের জন্য খুব একটা ভালো হবে না। টানা কয়েক বছর ধরেই ডিভাইস ব্যবসা নিয়ে খারাপ সময় পার করছে অ্যাপল। ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের চলমান বাণিজ্য বিরোধের জেরে টানা কয়েক বছর ধরে চীনে খারাপ সময় পার করছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বাড়তি মাত্রা যোগ করবে গত বৃহস্পতিবার চীনা অ্যাপ স্টোর থেকে মোট ৪৬ হাজার অ্যাপ সরানোর ঘটনা।