রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ অপরাহ্ন

তাড়াশে চলছে ডালের বড়ি তৈরির কাজ

ইব্রাহিম হোসেন তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২১

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে শীতর মৌসুমে চলছে ডালের বড়ি তৈরির কাজ। উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের ৭টি পরিবার ডালের বড়ি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ডালের বড়ি তৈরীর কারিগররা মাচা ফেলে তৈরীকৃত ডাল সুর্যের আলোতে শুকিয়ে বিক্রি করে। শীতের ভোরে নওগাঁ গ্রামের ৭টি পরিবারের নারীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন কুমড়া বড়ি তৈরি করে। কেউ ছুটছেন ঢেঁকির কাছে, কেউবা সাহায্য নিচ্ছেন শিল পাটার। আবার অনেকে সাহায্য নিচ্ছেন বৈদ্যুতিক মেশিনের। নারীরা বেশি শ্রম দিয়ে ২-৩ দিন কড়া রোদে শুকিয়ে এই ডালের কুমড়া বড়ি প্রস্তুত করে। সময় আর কাজের ব্যস্ততার কারণে অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও সুস্বাদু এই কুমড়া বড়ি তৈরি করতে পারে না। তবে সেই চাহিদার অনেকাংশে পূরণ করছে সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাঁ গ্রামের ডালের বড়ি তৈরীর কারিগররা। বাজারে প্রচলিত এ্যাংকার ডাল ব্যবহার করা হয় এই কুমড়া বড়ি তৈরিতে। পরিবারের কাজের ফাঁকে কুমড়া বড়ি তৈরি করে বাড়তি উপার্জনের একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন এই গ্রামের নারী ও পুরুষরা। নওগাঁ গ্রামের এই কুমড়া বড়ি স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে এই বছরে করোনা আর ডালের দাম বৃদ্ধির কারনে বিপদে পরেছে এই কারিগররা। তবু ঐতিহ্য,ব্যবসা আর লাভের আশায় চলছে এই কুমড়া বড়ি তৈরির কাজ। নওগাঁ গ্রামের প্রদিপ কর্মকার জানান, মূলত শীতের মৌসুমে আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ এই তিন মাসে কারিগররা কুমড়া বড়ি তৈরি করে। এই বড়ি তৈরী করতে নারী পুরুষ এক সাথে কাজ করে। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক হাট নিজ গ্রাম নওগাঁতে এই কুমড়া বড়ি বিক্রি করে। বর্তমানে এ অঞ্চলের হাট বাজারে প্রতি কেজি কুমড়া বড়ি ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একই গ্রামের বাসিন্ধা মর্জিনা খাতুন বলেন, এ ডালের বড়ি মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্য বিত্তদের জন্য মাছ-মাংসের সমান। তাই শীত এলেই গ্রামাঞ্চলের লোকজন বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পরেন। পাড়ার অনেক পরিবারই এ বড়ি বানায়। বড়ি প্রতিটি তরকারিতে বাড়তি স্বাদ এনে দেয়। বড়ি ভেঙে পেঁয়াজ, রসুন ও কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাঁজি করলে এক চমৎকার খাবার তৈরি হয়। এছাড়া, বড়ি দিয়ে রান্না করা বেগুন, লাউ, ফুলকপি, আলুর তরকারির স্বাদই আলাদা। কারিগর আলামিন বলেন,আগে পাটায় ডাল পিষতে সময় লাগতো আর কষ্ট হতো। বর্তমানে মেশিনের মাধ্যমে ডাল পিষে সহজে এই কাজটি করতে পারছি। ডালের সাথে কুমড়া, কালোজিরা আর বিভিন্ন প্রকারের মসলা মিশিয়ে তৈরি করা হয় কুমড়া বড়ি। তরে আমাদের এই কুমড়া বড়ি শুধু ডাল দিয়ে তৈরী করা হয়। প্রতিদিন ১৫০ কেজি এ্যাংকার ডাল ব্যবহার করে কুমড়া বড়ি তৈরি করলে ১৩৫কেজির মতো হয়। ৩৫টাকা দরে ডাল কিনে শ্রমিকের মূল্য দিয়ে এটা তৈরী করতে প্রায় ৫০টাকার কেজি পরে। আমরা প্রাইকারী বিক্রি করি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা আর খুচরা বিক্রি করি ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে। আমাদের তৈরী কুমড়া বড়ি স্থানীয় হাট বাজারের ব্যবসায়ীদের টাহিদা মিটিয়ে বাইরে মহাজনদের দেই। ঢাকা থেকে এসে আমাদের কুমড়া বড়ি প্রাইকারী নিয়ে যায়। প্রতিদিন গড়ে আমাদের খরচ বাদ দিয়ে ১হাজার থেকে ১২শ টাকার মতো লাভ থাকে। তবে নিজের জায়গা না থাকায় ভাড়াকৃত জায়গা ব্যবহার করে ১৫-২০হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। আবার এনজিও’র কাছ থেকে বেশী সুদে ঋণ নিয়ে যে কিস্তি দিতে হয় তাতে কিছুটা লাভ থাকে। তাই সরকারের কাছে দাবি যদি স¦ল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা ও খাসের জমি দিয়ে আমাদের সহযোগীতা করতো তাহলে এই শিল্পটা ধরে রাখতে পারতাম। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহার লুনা বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের একটি অংশ এই কুমড়া বড়ি। এই কাজের সাথে বেশির ভাগ নারী শ্রমিক কাজ করে থাকেন। নারী উদ্যোক্তা বা শ্রমিকদের জন্য সরকার সবসময় সহায়তা করে। তিনি বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আমরা সবসময় পাশে আছি। বিশেষ করে নারী ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তা যদি আমাদের কাছে আবেদন করে তবে অবশ্যই তাকে সহযোগিতা করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com