করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তার রোধে যারপরনাই তৎপর সরকার। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সবাই বাড়তি সতর্ক। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, ইংল্যান্ড থেকে আসা সবার ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক এবং সেটি হবে সরকারি তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনায়। বেশিরভাগ ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য হোটেলে পৃথক কোয়ারেন্টাইনের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নতুন ব্রিটিশ ব্যাটিং কোচ জন লুইসের জন্যও কি সে একই ব্যবস্থা? তিনিও তো ইংলিশ; একজন ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী। এখন বাংলাদেশ সরকারের করোনা প্রটোকলে তারও তো ১৪ দিন সরকারি ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানে কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা।
যদি তাই হয়, তাহলে তাকে তড়িঘড়ি করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরুর সপ্তাহ দুয়েক আগে এনে কোন লাভ হবে না। কারণ আজ (৭ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার) লন্ডন থেকে ঢাকায় পা রাখা এ ইংলিশ ব্যাটিং কোচ দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইনের পর মুক্ত হবেন আগামী ২১-২২ জানুয়ারি।
ততদিনে বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ প্রায় শেষ হয়ে যাবে। তাহলে কী হবে? ক্রিকেট পাড়ায় কৌতূহল। জন লুইস কি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথা বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনায় দুই সপ্তাহ কোন হোটেলে থাকবেন? নাকি বিসিবির পক্ষ থেকে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের বিশেষ অনুমতি নিয়ে তাকে অল্প কিছুদিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর মাঠে গিয়ে ক্রিকেটারদের কোচিং করানোর অনুমতির ব্যবস্থা করা হবে?
উল্লেখ্য, এর আগে হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো, তার স্বদেশি ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক আর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসনকে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিশেষ অনুমতি নিয়ে ক্রিকেটারদের সঙ্গে শেরে বাংলায় কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিল বিসিবি। এইতো কদিন আগে দেশে পা রাখা ফিজিও জুলিয়ান ক্যালেফাতো আর ট্রেনার ট্রেভর নিকলিও ঢাকায় পৌঁছে তিন-চারদিন পরই ক্রিকেটারদের ফিটনেস ট্রেনিংয়ের কাজে নেমে পড়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন ব্যাটিং কোচ জন লুইসের ব্যাপারেও বিসিবি সরকারের সর্বোচ্চ মহলের অনুমতির জন্য চেষ্টা করছে। বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী আজ সকালে এ সম্পর্কে জাগো নিউজকে জানান, ‘বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। খোদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া নির্দেশ, যুক্তরাজ্য থেকে যারা বাংলাদেশে আসবে, তাদের অন্তত ১৪ দিন সরকারি ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘জন লুইসও একজন ব্রিটিশ। আজ সকালে তিনি সবে রাজধানীতে পা রেখেছেন। কাজেই আমাদের সবার আগে দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মান্য করা। মানে সরকারি নিয়ম নীতি অনুসরণ করা। এক্ষেত্রে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিশেষ ছাড় বা অনুমতি ব্যতীত আমাদের কিছুই করার নেই। তবে বিসিবি থেকে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে জন লুইসের ব্যাপারে বিশেষ ছাড় বা অনুমতি আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।’ এদিকে বিসিবির দায়িত্বশীল নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে অন্য ব্রিটিশ যাত্রীদের মতো জন লুইস স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে অন্য কোনও হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন না। সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিশেষ অনুমতিতে জন লুইসকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি সোনারগাঁ প্যান প্যাসিফিক হোটেলে জৈব সুরক্ষা বলয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
দেশি, বিদেশি ক্রিকেটার, কোচরা বিমানে ঢাকায় অবতরণের পর বিসিবির পক্ষ থেকে যিনি সংবর্ধনা ও দেখভালের দায়িত্বে থাকেন সেই ওয়াসিম খান জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশক্রমেই অন্যান্য ব্রিটিশ যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত হোটেলে নয়, জাতীয় দলের ক্রিকেটার, কোচ ও সাপোর্টিং স্টাফদের জন্য যে হোটেল নির্ধারিত আছে, সেই সোনারগাঁ প্যান প্যাসিফিকেই উঠেছেন জন লুইস।
তবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের পরিবর্তে তিনি আরও কম সময়ের ভেতরে জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পালন করতে মাঠে যেতে পারবেন কি না? তা এখনই জানা যায়নি। তবে আগামী ১০ জানুয়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ঢাকায় আসছে, তাদের সঙ্গে তিন-চারদিন পর যেন জন লুইসও মাঠে যেতে পারেন, বিসিবির থেকে সরকারের উর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে কথা বলে সে বিশেষ অনুমতি নেয়ার চেষ্টা চলছে।