মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:৪৩ অপরাহ্ন

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা : দিহানের স্বীকারোক্তি নেয়ার আবেদন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২১

রাজধানীর কলাবাগানে ‘ও’ লেভেল শিক্ষার্থীকে (১৭) ধর্ষণের পর হত্যার মামলায় একমাত্র অভিযুক্ত তানভীর ইফতেফার দিহানকে (১৮) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার জন্য আদালতে তোলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদের আদালতে হাজির করে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করা হয়। আদালত সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এর আগে, ওই স্কুলছাত্রীকে (১৭) ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় তার ‘বন্ধু’ তানভীর ইফতেফার দিহানকে (১৮) একমাত্র আসামি করে কলাবাগান থানায় মামলা করেন নিহতের বাবা আলামিন। এ ঘটনায় হাসপাতাল থেকে আটক দিহানের তিন বন্ধুকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, গত রাতে তানভীর ইফতেফার দিহানকে (১৮) আসামি করে ছাত্রীর বাবা ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে মামলা করেছেন। মামলাটির তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কলাবাগান থানায় ফোন করে জানায়, এক কিশোরীকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এনেছেন এক তরুণ। কিশোরীর শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। খবর পেয়ে নিউমার্কেট অ ল পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) আবুল হাসান ওই তরুণকে আটকে রাখার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।

এরপর কলাবাগান থানার পুলিশ দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে ওই তরুণকে আটক করে। খবর পেয়ে ওই তরুণের তিন বন্ধু হাসপাতালে গেলে পুলিশ তাদেরকেও আটক করে। পরে চারজনকে কলাবাগান থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ পরে ওই ছাত্রীর মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
পুলিশের এসি আবুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক তরুণ দাবি করেছে, মেয়েটি তার পূর্বপরিচিত। বাসার সবাই ঢাকার বাইরে থাকার সুযোগে তাকে ডলফিন গলিতে তাদের ফ্ল্যাটে নিয়ে যান তিনি। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। এরপরই মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়লে তিনি তাকে আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, সুরতহাল প্রতিবেদনে মেয়েটির শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
আনুশকাকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ: রাজধানীর কলাবাগানে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের শিক্ষার্থী আনুশকাকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতেই ওই শিক্ষার্থীর বাবা মো. আল আমিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এতে আনুশকার বন্ধু ইফতেখার ফারদিন দিহানকে আসামী করা হয়।
কলাবাগান থানা পুলিশ জানায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ এর ২ ধারায় আনুশকার বাবা মামলাটি দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করা হলেও মেয়েটির ছেলে বন্ধু দিহানকে আসামী করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে বাকি তিনজনকে এখনও আটক রাখা হয়েছে। তাদের ডিজিটাল ডিভাইসগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদেরও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্ধুর বাসায় গ্রুপ স্টাডির জন্য যাওয়া আনুশকা ধর্ষণ পরবর্তী খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তার স্বজনরা। তার বোনজামাই শরীফ বলেছিলেন, আনুশকা সম্পর্কে আমার চাচাতো শ্যালিকা।
এ বছর মাস্টারমাইন্ড স্কুল থেকে ও-লেভেল পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। গত বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটার দিকে কলাবাগানের ডলফিন গলিতে কোচিং করতে গেলে এ সময় তার এক বান্ধবী মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে একটি বাসায় নিয়ে যায়। এ সময় ওই বাসাতে চারজন মিলে তাকে ধর্ষণ করে। যখন প্রচন্ড রক্তপাত শুরু হয় তখন ধর্ষণে অভিযুক্ত ফারদিন ইফতেখার দিহান তাকে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিকাল পাঁচটায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। মরদেহ বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা মামলা করেছি।
তিনি বলেন, নিহত শিক্ষার্থীর মা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে চাকরি করেন। বাবা ব্যবসায়ী। তিন ভাই বোনের মধ্যে সে ছিল বড়। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকতেন। নিহত শিক্ষার্থীর মা জানান, আমার মেয়েকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ও আমাকে যখন ফোন করে জানিয়েছিল তখন আমি অফিসে ছিলাম। আমাকে জানায়, মা আমি ক্লাসের ওয়ার্কসিট আনতে যাচ্ছি। এই বলে গেছে। দুপুর একটার পরে একটি ছেলে মুঠোফোন থেকে ফোন দিয়ে জানায়, আমার মেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে। ওকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। আপনারা আসেন। পরবর্তীতে গিয়ে দেখি মেয়ের নিথর দেহ পড়ে আছে। ওকে হাসপাতালেই আনা হয়েছে মৃত।
ধর্ষণ কিনা জানা যাবে ফরেনসিক প্রতিবেদনের পর: রাজধানীর কলাবাগানে স্কুলছাত্রী আনুশকার মৃত্যুর ঘটনায় ধর্ষণ হয়েছে কিনা তা ফরেকসিক প্রতিবেদনের পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ডিএমপি রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচাতে ক্রাইম রিপোটার্স ইউনিটির বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনা নিয়ে অতিরঞ্জিত তথ্য প্রকাশ না করারও আহবান জানান ডিসি রমনা।
নিহত স্কুলছাত্রীর বাবা এ ঘটনাকে ধর্ষণ হিসেবে এজাহারে দাবি করলেও পুলিশের বলছে তদন্তের পর এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে এ ঘটনায় আটক ফারদিন মেয়েটির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন বলে পুলিশের দাবি। আদালতে দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে জানিয়েছে পুলিশ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com