শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০০ অপরাহ্ন

দিহানের বয়স আসলে কত?

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২১

রাজধানীর কলাবাগানে মাস্টারমাইন্ড ‘ও’ লেভেলের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত তরুণের বয়স নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। অভিযুক্ত ফারদিন ইফতেখার দিহানের পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে কিশোর বলে দাবি করা হয়েছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার বয়স আঠারোর নিচে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিহানের বয়স ১৮ বছর পেরিয়ে গেছে। জন্মসনদ অনুযায়ী দিহানের জন্ম তারিখ ২০০২ সালের ২৫ মে। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৮ বছর সাত মাসের বেশি।
পুলিশ ও আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের শিশু আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচের বয়সীদের সাধারণত শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। ফৌজদারি কোনও অপরাধে ১৮ বছরের নিচের কেউ জড়িত থাকলে তাকে গ্রেফতার, গ্রেফতার পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদ ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় শিশু আইন অনুসরণ করতে হয়। দিহানের বয়স ১৮ বছর পার হওয়ায় শিশু আইন প্রতিপালনের কোনও সুযোগ নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি গোষ্ঠী দিহানকে শিশু-কিশোর হিসেবে গণ্য করে মামলার তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ তার পরিবারের সদস্যদের কেউ কেউ দিহানকে কিশোর হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করছেন।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, মামলার তদন্তে দিহানের বয়স যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত বয়স উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। বয়স অনুযায়ী আদালত পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেবেন। গত বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) রাজধানীর কলাবাগানে ডলফিন গলিতে ‘ও’ লেভেলের এক শিক্ষার্থীকে বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ ওঠে ফারদিন ইফতেখার দিহান নামে এক তরুণের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই নিহত কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে রাজধানীর কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা বলেছেন, ধর্ষণের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় নিহত হয় ওই কিশোরী। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘ময়নাতদন্তে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। নিহত কিশোরীর যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে শরীরের অন্য কোথাও কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নিহত কিশোরীর সঙ্গে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত দিহানের পূর্ব পরিচয় ছিল। নিহত কিশোরীর এক বান্ধবীর সঙ্গে দিহানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই বাসা ফাঁকা পেয়ে কিশোরী প্রেমিকাকে তার বাসায় নিয়ে যায়। দিহানের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, গত বছর ধানমন্ডির ম্যাপললিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে ‘ও’ লেভেল সম্পন্ন করে দিহান। বর্তমানে সে জিইডি বা জেনারেল এডুকেশনাল ডেভেলাপমেন্ট পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। জন্মসনদ অনুযায়ী, ২০০২ সালের ২৫ মে রাজশাহীর দুর্গাপুর থানাধীন রাতুগ্রামে তার জন্ম হয়। তার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ২০০২৮১১৩১৫৯০০০২২৫। ২০০৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর নিবন্ধন করা হলেও ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি এই সনদ ইস্যু করা হয়। রাজশাহীর দুর্গাপুরের ২ নং কিশমত গণকৈড় ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা এই জন্মসনদ প্রদান করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ জুডিশিয়ারি সার্ভিস কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, দিহানের বয়স ১৮ বছরের নিচে হলে সে তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় শিশু হিসেবে গণ্য হয়ে কিছু সুবিধা পেত। ১৮ বছরের নিচে হলে তার বিচার হতো জুভেনাইল কোর্ট বা শিশু আদালতে। কিন্তু দিহানের বয়স ১৮ বছর অতিক্রম হওয়ার কারণে অন্যান্য সাধারণ অপরাধীর মতো তার বিচার হবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে। আদালত তার অপরাধের মাত্রা ও মোটিফ অনুযায়ী শাস্তি বা দ- নির্ধারণ করবেন। ওই কর্মকর্তা জানান, আদালতে ধর্ষণের অপরাধ প্রমাণিত হলে তার মৃত্যুদ- বা যাবজ্জীবন কারাদ- হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত এই ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া দিহান বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে। ঘটনার একদিন পরই (৮ জানুয়ারি) দিহানকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। দিহান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে চাইলে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মামুনুর রশিদ তার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com