নওগাঁয় মহাদেবপুর উপজেলায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে রেশম চাষ। অনেকেই রেশম চাষ করে সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দেশে বহু ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব কৃষিপণ্যের মধ্যে এক সময় তুঁত চাষ ছিলো অন্যতম। তুঁত চাষে অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়া যায়। বাড়িতে বসে থাকা নারীদের নিয়েও তুঁত গাছের চাষ করা যায় বলে এতে খরচ কম হয়। তুঁত চাষ বছরে দুই থেকে চার বার করা যায়। এতে যেমন অধিক ফসল পাওয়া যায়, তেমনি লাভও হয় বেশি। কাপড় বুননের জন্য সুতার বিকল্প নেই। মোটা সুতার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। আর মোটা সুতা দিয়ে সুন্দর ও আকর্ষনীয় কাপড় তৈরি করা যায়। অধিক হারে রেশম চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত মোটা সুতা দিয়ে কাপড় তৈরির ব্যবস্থা নেয়া হলে অধিক আয় করা সম্ভব। রেশম চাষ বদলে দিতে পারে নওগাঁর গরিব জনগোষ্ঠীর জীবনধারা। এরকমই একজন সফল রেশম চাষী বেলাল হোসেন(৫৫) বাণিজ্যিক সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুরে রেশম চাষে দ্রুত সাফল্য আসছে তার। ইতোমধ্যে উপজেলার তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখানে রেশম গুটি উৎপাদন হচ্ছে, যা থেকে প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার রেশম সুতা পাওয়া যাচ্ছে। রাজশাহী রেশম গবেষনা ইন্সটিটিউটের অধীনে মহাদেবপুর উপজেলায় রেশম চাষ করা হয়। কর্তৃপক্ষ বেকার যুবক-যুবতীকে রেশম চাষী হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নের ক্যানেলের ২ কিলোমিটার রাস্তার দুধারে তুঁত গাছ লাগিয়েছেন বেলাল হোসেন। তিনি জানান, রেশম হচ্ছে এক ধরনের পোকার মুখ থেকে নির্গত লালা দিয়ে তৈরি আঠা, যা বাতাসে শুকিয়ে তৈরি হয় আঁশ বা সুতা। আর এটিই হলো রেশম সুতা। বিভিন্ন পশুপাখির মতো এ পোকাগুলোও বসবাসের জন্য ‘ঘর’ তৈরি করে। এদের তৈরি ঘর বা খোল রেশম গুটি নামে পরিচিত। এই গুটিতে থাকে শুধু সুতা আর আঠা। গরম পানিতে রেশম গুটি প্রয়োজন মতো সিদ্ধ করে নিয়ে সুতা উঠাতে হয়। সুতা উঠানোর পর মরা পোকাগুলোও ফেলনা নয়। এসবে থাকে আমিষ ও ফ্যাট। রেশম পোকার ফ্যাট দিয়ে বিভিন্ন মেশিনের লুব্রিকেটিং অয়েল তৈরি হয়। এটি বিভিন্ন কসমেটিকস ও ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত হয়। আর আমিষ দিয়ে হাঁস, মুরগি, মাছের খাবারসহ জৈব সার তৈরি হয়। তুঁতচাষী বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমি দুই বছর আগে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে তুঁতগাছ চাষ করতে শুরু করি এবং সফলভাবে রেশম উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। আমি এর আগে মানুষের বাড়িতে কাজ করতাম এখন রেশম চাষ করে আমার ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। রেশম পোকার প্রধান খাদ্য তুঁত গাছের পাতা। ক্যানেলের ধারের জমিতে বছরে দুইবার তুঁত গাছ থেকে পাতা আহরণ করা যায়। প্রতি কেজি রেশম সুতার দাম ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। রেশম গবেষণা কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে ১০টি হারে পলুর ডিম (রেশম কিট) বিতরণ করে থাকেন। অন্য ফসলের সাথে বছরে দুইবার আমরা রেশম চাষ করে আর্থিকভাবে অনেকটা লাভবান হয়ে থাকি। সরকারি সহযোগিতা পেলে রেশম চাষ করে আমার সফলতার পাশাপাশি গ্রামের বেকার সমস্যারও সমাধান হতো’। মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, ‘উপজেলার রোড ও ক্যানেলের পাশের্^ তুঁতগাছ পরীক্ষামূলকভাবে লাগানো শুরু করা হয়েছে। এতে লাভবানও হয়েছেন উদ্যোক্তারা’। তিনি জানান, এ উপজেলায় আরও ৩জন রেশম চাষী রয়েছেন। তবে বেলাল হোসেন ব্যাপকভাবে সাফল্য পেয়েছেন। চলতি বছর তিনি ১৫ কেজি রেশম উৎপাদন করেছেন। এর দাম প্রায় ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘রেশমের সুতার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। তুঁতচাষে অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়া যায়। রেশম গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ও কৃষি বিভাগ থেকে চাষীদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আগামীতেও করা হবে।