প্রশান্ত কুমার হালদার ও তার সংশ্লিষ্টদের জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে ৮৩ জনের তালিকা সম্বলিত একটি নথি ২০ জানুয়ারি হাইকোর্টে উপস্থাপন করতে যাচ্ছে রাষ্ট্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ইতোমধ্যে তাদের এ নথি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দাখিল করেছেন।
২০ জানুয়ারি এসব নথি আদালতে উপস্থাপন করবেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে ফ্রিজ করা হয়েছে। এ তালিকায় পিকে হালদারসহ সম্প্রতি দুদকের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া অবন্তিকা বড়ালের নামও রয়েছে।
বিএফআইইউ তার গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলেছে, বিএফআইইউ ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের অফিস পরিদর্শন করে। পরিদর্শন করে বিএফআইইউ দেখে যে, ২০১৫ সালে চারটি প্রতিষ্ঠান আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি অধিগ্রহণের পরবর্তী ৩/৪ বছরে দুর্নীতি, জালিয়াতি ও নানাবিধ অনিয়মের মাধ্যমে নামসর্বস্ব ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের ঋণের নামে লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে ২ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়ে আত্মসাত করা হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি কর্তৃক বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬৭ দশমিক ৯১ ভাগ। এ বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ৪৩টি ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের নামে দেওয়া ঋণের অর্থের গতিপথসহ প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সার্বিক পর্যালোচনায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালনা পর্ষদ, শীর্ষ ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ, চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার, ক্রেডিট ডিভিশনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা ৮৩ ব্যক্তির ঋণের আড়ালে নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির দুই তৃতীয়াংশের বেশি অর্থ আত্মসাত করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়।
বিএফআইইউর প্রতিবেদন দুদককে পাঠানো হয়েছে। দুদকও এসব বিষয়ে কাজ করছে। ১৮ নভেম্বর দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর তাকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেফতার করতে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
ওই আদেশ অনুসারে ২ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক। এরপর ৯ ডিসেম্বর পিকে হালদারের কাজিন পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালক অমিতাভ অধিকারী এবং পিকে হালদারের সাবেক সহকর্মী ও পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জল কুমার নন্দীকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় পক্ষভূক্ত করা হয়। একইসঙ্গে পিকে হালদারের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো এবং তার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়ে ৩ জানুয়ারি পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
ধার্য তারিখ অনুসারে মামলাটির শুনানি শুরু হলে দুদক আইনজীবী আদালতের কাছে এসব আমানতকারীর কথা তুলে ধরেন এবং তারা আদালতের সামনে কথা বলার অনুমতি চান। এরপর তারা আদালতের অনুমতি নিয়ে তাদের আমানত ফিরে পেতে আকুতি জানান। ৫ জানুয়ারি আমানতকরীরা লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন। একইসঙ্গে তাদের আবেদনে ২৫ জনের বিদেশ গমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। এদিকে ৮ জনুয়ারি পিকে হালদারকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ইন্টারপোল। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, পিকে হালদার নিয়ে যে সুয়োমোটো রুল হাইকোর্টে শুনানি চলতেছে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউ তাদের একটা প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে জমা দিয়েছে। সেটা আমরা ২০ জানুয়ারি আদালতে হলফনামা আকারে দাখিল করবো। প্রতিবেদনে দেখা যায় বিএফআইইউ ৮৩ জনের নামের তালিকা দুদককে দিয়েছে। ইতোমধ্যে যাদের ব্যাংক অ্যাকউন্ট জব্দ করা হয়েছে।