ছয় দশকের ক্যারিয়ার আমেরিকান টিভি ব্যক্তিত্ব ল্যারি কিংয়ের। ২৩ জানুয়ারি পরপারে পাড়ি জমানো এই উপস্থাপকের কাজের ফর্দও সুবিশাল। তিনি প্রশ্ন নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন যেমন একেবারে আটপৌড়ে আমেরিকানের তেমনি মার্কিন মুলুকের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি প্রেসিডেন্টেরও। আমেরিকার বাইরেও বিশ্বনেতারা স্বচ্ছন্দে হাজির হয়েছেন ল্যারি কিংয়ের টেবিলে। ছয় দশক ধরে বিস্তৃত সাংবাদিকতা জীবনে ল্যারি কিং প্রায় ৫০,০০০ সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন! এর মধ্যে টানা ২৫ বছর সিএনএন টিভিতে ‘ল্যারি কিং লাইভ অন সিএনএন’ অনুষ্ঠানটি করেছেন। নিজ স্টুডিও তো বটেই তার শোয়ের শুটিং হয়েছে হোয়াইট হাউজ থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে।
তার কর্মময় জীবনে বহু বিশ্বখ্যাত ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, যাদের মধ্যে ছিলেন লেডি গাগা, ফ্র্যাংক সিনাত্রার মতো জন-নন্দিত গায়ক থেকে শুরু করে দলাই লামা, নেলসন ম্যান্ডেলা ও ভ্লাদিমির পুতিনের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। ১৯৯৫ সালে তিনি পশ্চিম এশিয়া শান্তি সম্মেলনের উপস্থাপক ছিলেন। সেই সম্মেলনে পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত, জর্ডানের রাজা হুসেন, ইজরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইৎঝ্যাক রবিন উপস্থিত ছিলেন। সেখানেও তিনি ছিলে স্বদীপ্ত।
বলা হয়ে থাকে, ল্যারি সরাসরি যে প্রশ্ন করতো সেটা হতো শৈল্পিক ও মার্জিত। আর তার শোয়ে অনেক তিক্ত বাক্য সামনে এলেও অতিথিরাও ছিলেন তার ভক্ত। তাই ৮৭ বছর বয়সী ল্যারি কিং মারা যাওয়ার খবর শুনে সবিনয়ে শ্রদ্ধা জানাতে ভোলেননি সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনসহ বিশ্ব নেতারা। ক্লিনটন বলেন, ‘তার সঙ্গে আমার প্রতিটি শোই ছিল উপভোগ্য। ২০টিরও বেশি সাক্ষাৎকারে আমি তার মুখোমুখি হয়েছিলাম।’
আরেক পশ্চিম কিংবদন্তি অপরাহ উইনফ্রের মতে, ‘তার টেবিলের পাশের চেয়ারে বসাটা আমার কাছে সবসময়ই উপহারের মতো ছিল।’ গত শতাব্দীর পাঁচের দশকের শেষদিক থেকে সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন ল্যারি কিং। সংবাদপত্রের পাশাপাশি রেডিওতে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৭৮ সালে তিনি শুরু করেন ‘ল্যারি কিং শো’। প্রথমে বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক ‘মিউচুয়াল ব্রডকাস্টিং সিস্টেম’-এ এই অনুষ্ঠানটি হয়। এরপর ১৯৮৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে সিএনএনে ‘ল্যারি কিং লাইভ অন সিএনএন’ নামের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন। ল্যারি কিং ‘ইউএসএ টুডে’ পত্রিকায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে একটি কলাম লিখে গেছেন।
দীর্ঘ পেশাজীবনে নানা শারীরিক জটিলতার মধ্যেই এই গুণী উপস্থাপক কাজ করে গেছেন। ডায়াবেটিস, প্রদাহ, হার্ট অ্যাটাক ও ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। গত বছর কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে তার দুই ছেলেও মারা যান। একজন হার্ট অ্যাটাক এবং অন্য ছেলে ফুসফুসের ক্যানসারে মারা যান। এরপর চলতি বছর লস অ্যাঞ্জেলেসের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চলে গেলেন এই উপস্থাপক কিং। সূত্র: সিএনএন, ব্লুমবার্গ