আমাদের যাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা–পরবর্তী প্রজন্ম, তাঁরা অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে শুনে বড় হয়েছেন। আমার বয়স তখন একবারেই কমছিলো তবে কিছুটা মনে পড়ে। আবার মায়ের কাছেও শুনেছি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানা ধরনের হত্যা যজ্ঞের গল্প। ভয়ে শরীরটা শিহরিয়া উঠতো। তখন বয়স কম থাকায় অংশ গ্রহন করতে পারিনি। ‘দুনিয়ার সব মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস একই। শুধু প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ’বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অহংকারের ঘটনা মহান মুক্তিযুদ্ধ। তবে এটা হঠাৎ আবির্ভূত হওয়া কোনো ঘটনা নয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-বঞ্চনা, নিপীড়ন-নির্যাতনের ফলে আমাদের মুক্তির সংগ্রাম হয়ে উঠেছিল অনিবার্য। আর সেই মুক্তি সংগ্রামে অংশ গ্রহনকারি তৎকালিন এক নবীন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে আজকের লেখাঃ অকুতোভয় এক বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম এস এম সদর আলী। সদর আলী বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলাধিন ঘোলাগ্রামে জন্ম গ্রহন করেন । বাবা মরহুম লাল মিয়া শেখ এবং মা’ মরহুমা আছিয়া বেগম। ১৯৭০ সালে সদর আলী স্থানীয় বড়বাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। ৭১ সালে পারিবারিক টানাপোড়েন এবং ছাত্র আন্দোলনে আংশ গ্রহনের কারনে তিনি এইসএসসি পরীক্ষায় আংশ গ্রহন করতে না পারায় বঙ্গবন্ধু ০৭ই মার্চে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ডাকদেন। এসময় তরুন সদর আলীর বঙ্গবন্ধুর ডাকে শাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করতে প্রাণচাঞ্চল্য হয়ে ওঠে। প্রথমে তিনি চিতলমারী অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা লে: সামচুল হক মল্লিকের সাথে সাক্ষাতের জন্য তার ক্যাম্পে যান। তাকে না পেয়ে তার বড় ভাই তৎকালিন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজু হক মল্লিকের অফিসে যান। তাকে যুদ্ধে যাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করায় মল্লিক সাহেব সম্মতি দেন এবং নিজের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সদর আলীকে প্রদান করেন। ওই চিঠি নিয়ে ভারতে ট্রেনিং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন সদর আলী। পথিমধ্যে যশোরের অভয় নগর থানা এলাকা সহ নানা স্থানে সাধারন মানুষ তাকে বাধাঁ প্রদান করলেও মল্লিক সাহেবের চিঠি দেখিয়ে তিনি পাইকপাড়া নামক মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্পে পৌঁছে যান। সেখানে সহপাঠি মুক্তিযোদ্ধা কার্ত্তিক ও রবিনের সাথে দেখা মেলে সদর আলীর। তাদের কাছে ভারতের ট্রেনিং নেবার কথা অবহিত করেন তিনি। পরদিন সকাল বেলা ওই ক্যাম্পের কমান্ডার হেদায়েত সাহেবের সাথে সাক্ষাত হলে সদর আলীকে তার দলে থাকার অনুমতি প্রদান করেন।ওখান থেকে সঙ্গীয়দের সাথেও পাকবাহীনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ গ্রহন করতে থাকেন তরুন মুক্তিযোদ্ধা সদর আলী। এভাবে ৩/৪মাস যুদ্ধ কালিন সময়ে যশোরের রাজঘাট কার্পেটিং জুট মিলে রাজাকারের সাথে তুমুল যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধেও তিনি অংশনেন। এরপর শিরমনি যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল ইতি মধ্যে খান সেনাদের আত্মসমর্পনের সংবাদ আসে ও দেশ স্বাধীন হয়। মুক্তিযোদ্ধা সদর আলী বলেন, জীবন বাজিরেখে মুক্তি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি,দেশ স্বাধিন করেছি। তার পরেও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কিনা তা নিয়ে এখনও শঙ্কিত আছি। বিষয়টি খুব দুঃখ জনক এবং লজ্জাজনক। বীর মুক্তি যোদ্ধা সদর আলীর প্রদত্ত মক্তিযুদ্ধের তথ্যবলী নিন্মরুপ (১) তিনি ৯নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন (২) সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জলিল,(৩)যশোরের অভয়নগর থানায় তার মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক ছিলেন জনাব হেদায়েত উল্লাহ, তিনি চিতলমারীর বড়গুনী গ্রামের কৃতিসন্তান (৪) সেকশন কমান্ডার ছিলেন শেখ হেমায়েত উদ্দিন চিতলমারীর কলাতলা গ্রামের কৃতি সন্তান (৫) যুদ্ধের পর যশোরের ফুলতলা স্কুলে অস্ত্র জমা করেন (৬) অস্ত্র্রজমার রশিদ নিয়ে বাগেরহাট মিলিশিয়া ক্যাম্পে ভর্তি হন (৭) সেখান থেকে সনদ নিয়ে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে যোগদেন। মিলিশিয়া সনদ নং-এম,এফ-২০৬৩৯৮, ক্রমিক নং-১৫২৮৯৮। মুক্তিবার্তা গেজেট নং-০৪০৩০৪০৫২৯, ২য় বর্ষে-১১ সংখ্যায় –তাং ০৬/০১/১৯৯৯, পৃষ্ঠা নং- ১৫৩। গেজেট নং- ৭৭৯, সনদ নং-ম-১০০২৫৯, সেনা বাহিনী, সৈনিক নং-৩৯৬৬৩৯৭, ৭ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট আইডি নং-৭৭৬০৩৬২৯৬৭। ভাতার বই নং-৫৯৫, ভাতা পাস হয়-০১/০৭/২০০৯ ইং, ভাতা পান-১৪/১১/২০১০ ইংরেজী তারিখ।