বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভালো নেই নিম্ন আয়ের মানুষ দুবেলা খেয়ে পরে বেঁচে থাকার সংগ্রামে টিকে থাকার লড়াই গলাচিপায় শহিদ সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ¦ শাহজাহান খান এর স্মরণসভা এবং খুনিদের বিচার দাবী যুব নারী-পুরুষ ও প্রতিবন্ধিদের দক্ষ উদ্যোত্তা তৈরীর লক্ষে পিরোজপুরে শীর্ষক অবহিতকরণ সভা বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বিভক্ত না হতে মাহাথির মোহাম্মদের আহ্বান এডভোকেট আলিফের খুনিদের কঠোর শাস্তি হবে : নাহিদ ইসলাম আজ থেকে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে চলবে জাহাজ আব্দুল মোনেম লিমিটেডের মামলা থেকে তারেক রহমানসহ ৮ জনের অব্যাহতি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ডময় জয় ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে চিন্ময়ের মুক্তি দাবি কিসের আলামত প্রশ্ন রিজভীর কিছু মানুষ জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে: মির্জা ফখরুল

ডান ও বাম হাতে আমলনামার তাৎপর্য

জাফর আহমাদ :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

হাশরের ময়দানে কতককে তার ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে আর কতককে বাম হাতে। ডান হাতে আমলনামা দেয়ার অর্থ হবে তার হিসাব-নিকাশ অত্যন্ত পরিষ্কার। একজন সৎ ও সত্যনিষ্ঠ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অধিকতর সম্ভাবনা হলো, আমলনামা দেয়ার সময়ই সৎ ও সত্যনিষ্ঠ মানুষগুলো নিজেরাই ডান হাত বাড়িয়ে আমলনামা গ্রহণ করবে। কারণ মৃত্যু থেকে হাশরের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার সময় পর্যন্ত তার সাথে যে আচরণ করা হবে তাতে তার মনে এতটা আস্থা ও প্রশান্তি থাকবে যে, সে মনে করবে আমাকে এখানে পুরস্কার দেয়ার জন্য হাজির করা হচ্ছে। একজন মানুষ সৎ ও সত্যনিষ্ঠ মানুষ হিসেবে পরপারে যাত্রা করছে, না অসৎ ও পাপী হিসেবে যাত্রা করছে মৃত্যুর সময় থেকেই তার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে।
মৃত্যুর সময় থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত একজন নেককার মানুষের সাথে সম্মানিত মেহমানের মতো আচরণ করা হয়। কিন্তু একজন অসৎ ও বদকার মানুষের সাথে আচরণ করা হয় অপরাধে অভিযুক্ত কয়েদির মতো। এরপর কিয়ামতের দিন আখিরাতের জীবনের সূচনালগ্ন থেকেই নেককার মানুষের জীবন যাপনের ধরন-ধারণাই পাল্টে যায়। একইভাবে কাফের, মুনাফিক ও পাপীদের জীবন যাপনের ধরন ভিন্নরূপ হয়ে যায়।
মৃত্যুর সময় নেককার ও বদকারদের অবস্থা : এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘এমন মুত্তাকিদেরকে, যাদের পবিত্র থাকা অবস্থায় ফেরেশতারা যখন মৃত্যু ঘটায় তখন বলে, তোমাদের প্রতি সালাম, যাও নিজেদের কর্মকা-ের বদৌলতে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সূরা নাহল-৩২) ‘হায়, যদি তোমরা সেই অবস্থা দেখতে পেতে যখন ফেরেশতারা নিহত কাফেরদের রুহ কবজ করছিল! তারা তাদের চেহেরায় ও পিঠে আঘাত করছিল এবং বলছিল- নাও এবং জালাপোড়ার শাস্তি ভোগ করো। এ হচ্ছে সেই অপকর্মের প্রতিফল যা তোমরা আগেই করে রেখে এসেছে। নয় তো আল্লাহ তার বান্দাদের ওপর জুলুমকারী নন।’ (সূরা আনফাল : ৫০-৫১)।
কবরের অবস্থা : এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘হ্যাঁ এমন কাফেরদের জন্য, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করতে থাকা অবস্থায় যখন ফেরেশতাদের হাতে পাকড়াও হয় তখন সাথে সাথেই আত্মসমর্পণ করে এবং বলে, ‘আমরা তো কোনো দোষ করি নাই।’ ফেরেশতারা জবাব দেয়, কেমন করে দোষ কর নি! তোমাদের কাজ আল্লাহ খুব ভালো করেই জানেন। এখন যাও, জাহান্নামের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ো, এখানেই থাকতে হবে চিরকাল। সত্য বলতে কি, অহঙ্কারীদের এই ঠিকানা বড়ই নিকৃষ্ট।’ (সূরা নাহল-২৯)। ‘অন্য দিকে যখন মুত্তাকিদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে কি নাজিল হয়েছে, তারা জবাব দেয়, সর্বোত্তম জিনিস নাজিল হয়েছে। এ ধরনের সৎকর্মশীলদের জন্য এ দুনিয়াতেও মঙ্গল রয়েছে এবং আখিরাতের আবাস তো তাদের জন্য অবশ্যই উত্তম।’ (সূরা নাহল-৩০) দুটি আয়াতে মৃত্যুর পর ফেরেশতাদের সাথে মুত্তাকি ও বদকারদের আলাপ-আলোচনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলো কুরআন মজিদের এমন ধরনের আয়াতের অন্যতম যেগুলো সুস্পষ্টভাবে কবরের আজাব ও সওয়াবের প্রমাণ পেশ করে।
মৃত্যু ও কিয়ামতের মাঝখানের অবস্থা : এ সম্পর্কে কুরআন ও হাদিস থেকে এই চিত্র পাওয়া যায়। চিত্রটি হচ্ছে- মৃত্যু নিছক দেহ ও রুহের আলাদা হয়ে যাওয়ার নাম। একটি অপরাধী রুহকে ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসাবাদ, তারপর আজাব ও যন্ত্রণার মধ্যে পড়ে যাওয়া এবং তাকে দোজখের সামনে উপস্থাপিত করা- এসব কিছু এমন একটি অবস্থার সাথে সাদৃশ্য রাখে যা একজন খুনের আসামিকে ফাঁসি দেয়ার তারিখের এক দিন আগে একটি ভয়ঙ্কর স্বপ্নের আকারে তার কাছে উপস্থিত হয়। অনুরূপভাবে একটি পবিত্র পরিচ্ছন্ন ও নিষ্কলুষ রুহের সংবর্ধনা, তারপর তার জান্নাতের সুখবর শোনা এবং জান্নাতের বাতাস ও খোশবুতে আপ্লুত হওয়া। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তিই মারা যায় তাকেই সকাল ও সন্ধ্যায় তার শেষ বাসস্থান দেখানো হতে থাকে। জান্নাতি ও দোজখি উভয়ের ক্ষেত্রেই এটি হতে থাকে। তাকে বলা হয় কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহ তোমাকে পুনরায় জীবিত করে তাঁর সান্নিধ্যে ডেকে নেবেন, তখন তোমাকে আল্লাহ সে জায়গা দান করবেন এটা সেই জায়গা।’ (বুখারি, মুসলিম ও মুসনাদে আহমাদ)।
হাশরের ময়দানের অবস্থা : এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি সৎকাজ নিয়ে আসবে সে তার চেয়ে বেশি ভালো প্রতিদান পাবে এবং এ ধরনের লোকেরা সেদিনের ভীতি-বিহ্বলতা থেকে নিরাপদ থাকবে। আর যারা অসৎ কাজ নিয়ে আসবে, তাদের সবাইকে অধোমুখে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে। তোমরা কি যেমন কর্ম তেমন ফল- ছাড়া অন্য কোনো প্রতিদান পেতে পারো?’ (সূরা নামল : ৮৯-৯০)।
হাশরের ময়দানে জান্নাতের হকদার লোকদের সাথে অপরাধীদের থেকে ভিন্নতর ব্যবহার করা হবে। তাদের সম্মানের সাথে বসানো হবে। হাশরের দিনের কঠিন দুপুর কাটানোর জন্য তাদের আরাম করার জায়গা দেয়া হবে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন যারা জান্নাতের অধিকারী হবে তারাই উৎকৃষ্ট স্থানে অবস্থান করবে এবং দুপুর কাটানোর জন্য চমৎকার জায়গা পাবে।’ (সূরা ফুরকান-২৪)। সেদিনের সব রকমের কষ্ট ও কঠোরতা হবে অপরাধীদের জন্য। সৎকর্মশীলদের জন্য নয়। যেমন হাদিসে বলা হয়েছে, আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত- নবী সা: বলেছেন, ‘সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, কিয়ামতের মহা ও ভয়াবহ দিবস একজন মুমিনের জন্য অনেক সহজ করে দেয়া হবে। এমন কি তা এত সহজ করে দেয়া হবে, যেমন একটি ফরজ নামাজ পড়ার সময়টি হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ)।
আল্লাহ বলেন, ‘সেই ভীতিকর অবস্থা তাদেরকে একটুও পেরেশান করবে না এবং ফেরেশতারা এগিয়ে এসে তাদেরকে সাদরে অভ্যর্থনা জানাবে এই বলে, এ তোমাদের সেইদিন যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেয়া হতো।’ (সূরা আম্বিয়া-১০৩)। আল্লাহ আরো বলেন, ‘যাকে আল্লাহ পথ দেখান সে-ই পথ লাভ করে এবং যাদেরকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন তাদের জন্য তুমি তাঁকে ছাড়া আর কোনো সহায়ক সাহায্যকারী পেতে পারো না। এ লোকগুলোকে আমি কিয়ামতের দিন উপুড় করে টেনে আনব অন্ধ, বোবা ও বধির করে, এদের আবাস জাহান্নাম। যখনই তার আগুন স্তিমিত হতে থাকবে আমি তাকে আরো জোরে জ্বালিয়ে দেবো।’ (সূরা বনি ইসরাইল-৯৭)।
হে আরশের মালিক! তুমি আমাদেরকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করো এবং ডান হাতে আমলনামা যাতে গ্রহণ করতে পারি সে কর্ম যেন করে আসতে পারি। আমিন। লেখক : ম্যানেজার, আইবিবিএল, জিন্দাবাজার শাখা, সিলেট




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com