‘দেশের বাইরের মেগা কিচেন, আজমির শরিফসহ বিভিন্ন আশ্রমে বড় কড়াইয়ে রান্না হয়। তা দেখেই এত বড় কড়াই বানানোর চিন্তা মাথায় আসে। এক কড়াইয়ে রান্না হবে একটি আস্ত গরু। সবমিলিয়ে এতে এক হাজার কেজির বেশি রান্না করা যাবে।’ কথাগুলো বলছিলেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের মেগা কিচেনে গেলেই দেখা মিলবে এই কড়াইয়ের। কড়াইটির এক পাশ থেকে আরেক পাশের ব্যাস ৮ দশমিক ৬ ফুট। ওজন এক টন। রান্নার সময় খাবার নাড়া দেয়ার জন্য জন্য কড়াইয়ের প্রায় সমান সিমেন্টের চুলার চার পাশে পাকা টুল বসানো হয়েছে। কড়াইয়ের নিচে দাউ দাউ করে জ্বলছে চারটি আলাদা আলাদা গ্যাসের চুলা। কড়াইসহ এই অবকাঠামো তৈরিতে খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা।
বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকেরা বলছেন, এটি দেশের সবচেয়ে বড় কড়াই বলেই মনে করা হচ্ছে। এ কড়াইয়ে একসঙ্গে চার হাজার মানুষের রান্না করা যাবে। তবে এখন পর্যন্ত দেড় হাজারজনের রান্না একসঙ্গে করা হয়েছে।
তবে কিশোর কুমার দাস জানান, কড়াইটি দেশে সব থেকে বড় কি না, এ নিয়ে তেমন মাথা ঘামাইনি। আমাদের মূল চেষ্টা কাজটা সহজ করা। বেশি কড়াই হলে লোকবল, সময়, খরচ বেশি লাগে। অথচ এ কড়াইয়ে কম জনবল দিয়েই দ্রুত রান্না করা সম্ভব।
ঢাকার কেরানীগঞ্জে ১৩ জানুয়ারি থেকে এ কড়াইতে রান্না শুরু হয়েছে। কড়াইটির পাশেই বড় করে লেখা, ‘সেরা সম্পর্কগুলো খাবার শেয়ার থেকে সৃষ্টি হয়’। তবে রান্না শুরু এবং শেষে এই কড়াই ধোয়ার কাজটিও কঠিন। একজন স্বেচ্ছাসেবক কড়াইয়ের ভেতরে ঢুকে তা পরিষ্কার করেন। পরে তিনি কড়াই থেকে বের হলে বাঁশে কাপড় পেঁচিয়ে তা আবার ধোয়া হয়।
কড়াই কীভাবে বানানো হয়েছে, সে প্রসঙ্গে কিশোর কুমার দাস হাসতে হাসতে বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে যারা রান্না করেন, তারা বিদেশ থেকে বড় কড়াই নিয়ে আসেন। আমরা দেশের একজন কারিগরকে কোনোভাবে রাজি করিয়েছিলাম এটি বানিয়ে দিতে। পরে ওই কারিগর কান্নাকাটি করেছেন এটি বানাবেন না বলে। তার মেশিনই কয়েকবার ভেঙে যায়। তবে এখন সেই কারিগর খুব খুশি।’
কিশোর কুমার দাস পেরুতে থাকেন, বর্তমানে দেশে এসেছেন। তিনি নিজেই স্বেচ্ছাসেবকদের বিশাল কড়াইয়ে রান্নার বিভিন্ন কৌশল শেখাচ্ছেন কিছুদিন ধরে। কেরানীগঞ্জের মেগা কিচেনের আয়তন তিন হাজার বর্গফুটের বেশি। রান্নাঘরের জায়গাটি অনুদান দিয়েছেন স্থানীয় প্রিন্টিং ব্যবসায়ী এমদাদুল হক। তিনি নিজেও বিদ্যানন্দের একজন স্বেচ্ছাসেবক ও দাতা।
প্রসঙ্গত, বিদ্যানন্দের ‘এক টাকায় আহার’ প্রকল্প চলে খোলা আকাশের নীচে কিংবা স্টেশনের প্লাটফর্মে। যাদের কেউ অভুক্ত থাকে সারারাত, কেউবা আরো বেশি। এক টাকায় এক প্যাকেট খাবার পেয়ে কেউ খুশিতে আত্মহারা হয়, কেউবা দৌড়িয়ে লাইনে দাঁড়ায়। সবার জন্য শিক্ষার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে স্বেচ্ছ্বাসেবীদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। পরবর্তীতে তারাই শুরু করেছে ‘এক টাকার আহার’ প্রকল্প। প্রকল্পটির আওতায় দরিদ্র শিশু ও বৃদ্ধরা এক টাকায় পেট ভরে খেতে পারছে।