কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত ঘুষের অভিযোগ তদন্তে ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাঁচ সদস্যের এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খানকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হকের জবানবন্দির বরাত দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অনিয়ম করে অর্থ লুটপাটের অনিয়ম জানার পরও প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘উত্তর কোরিয়া বন্দুকের পরিবর্তে কীবোর্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের ভার্চুয়াল মুদ্রা চুরি করেছে। গত সাত বছরের বেশি সময় ধরে এই তিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হ্যাকিং করে আসছেন।’ পার্ক জিন হিয়ক গ্রুপটির অন্যতম হোতা হিসেবে পরিচিতি। তিনি কম্পিউটার প্রোগ্রামার। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরির ওই ঘটনার পাশাপাশি তার নেতৃত্বে ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সনি করপোরেশন ও ২০১৭ সালে বিশ্বজুড়ে ‘ওয়ানাক্রাই ২.০ গ্লোবাল র্যানসমওয়্যার’ সাইবার আক্রমণ হয় বলে দাবি করছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ থেকে চুরি যাওয়া ৫৬১ কোটি টাকা এখনো ফেরত আসেনি। অর্থের বড় একটি অংশ ক্যাসিনোতে বিনিয়োগ করা হয়। সেই ক্যাসিনোর বিরুদ্ধেও মামলা চলছে।
ঘুষের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত ঘুষের অভিযোগ তদন্তে ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাঁচ সদস্যের এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খানকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হকের জবানবন্দির বরাত দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অনিয়ম করে অর্থ লুটপাটের অনিয়ম জানার পরও প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এ খবরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাজের সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এই পরিস্থিতিতে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য কমিটি করা হয় বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম। জানা গেছে, গত ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে দুদকের একটি দল রাশেদুল হককে গ্রেপ্তার করে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রাশেদুল দাবি করেন, অনিয়ম চাপা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদের ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে দিতে হতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপককে প্রতি মাসে দেওয়া হতো ২ লাখ টাকা করে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এসব অনিয়ম ‘ম্যানেজ’ করতেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এক-দুইজনের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছয় হাজার কর্মকর্তাকে অপবাদ দেওয়া ঠিক হবে না। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে ঘুষের অভিযোগ ওঠায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব থেকে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী পরিচালককে অব্যাহতি দিয়ে অন্য বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী সম্প্রতি আদালতে দেওয়া এক জবানবন্দিতে বলেছেন, একাধিক ব্যাংকার ও ব্যবসায়ী পিপলস লিজিংয়ের আর্থিক ভিত ধ্বংস করে দিয়েছে।
উজ্জ্বল কুমার নন্দী আদালতে বলেন, পিপলস লিজিংয়ের ডিপোজিট ও ধারের ওপর সুদ ১১১ কোটি টাকা বেশি দেখিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেমসহ ওই সময়ের পরিচালকরা তা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিজেরাই নিয়েছিলেন। ফলে এ সময়ে সম্পদ বেশি দেখানো হয়েছিল ৩০৯ কোটি টাকা ও দায় কম দেখানো হয়েছিল ৮৮৭ কোটি টাকা। এসব অপকর্ম ঢাকতে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর অডিটের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ১ কোটি টাকা করে সাড়ে ৬ কোটি টাকা ঘুষ দেওয়া হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে কিছু ভিআইপি ব্যক্তির জন্য মূলধন উপহার দেওয়া হয়েছিল মর্মে রেকর্ডপত্রে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া ‘হুদা ভাসি’ প্রতিবেদনে এ বিষয়টি স্পষ্টরূপে উল্লেখ রয়েছে।