শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫১ অপরাহ্ন

নারীর অধিকার ও মর্যাদা

সায়মা তাহসিন সাবিহা
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

ইসলাম মানব প্রকৃতির সাথে পরিপূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি জীবন বিধান। এখানে মানুষকে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। নারী-পুরুষ সবাই মানুষ হিসেবে এই মর্যাদার অংশীদার। মানবকুল নারী-পুরুষ দ্বারা গঠিত। নারী থেকে পুরুষ, পুরুষ থেকে নারী কোনোভাবেই আলাদা করার সুযোগ নেই। এই পৃথিবীতে মানব সমাজের অস্তিত্ব থাকতে হলে নারী-পুরুষের যৌথ উপস্থিতি অপরিহার্য। নারীর কাছে পুরুষ আর পুরুষের কাছে নারী ঋণী। এই দুইয়ের কোনো একজনকে বাদ দিয়ে মানব জীবনের অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। এক দিকে যেমন একজনকে ছাড়া আরেকজনের অস্তিত্বই বিপন্ন অন্য দিকে একজনের কাছে আরেকজন অপরিহার্যভাবে ঋণী। সুতরাং ব্যক্তি জীবন, সমাজ জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, সব জীবনেই একজনের কাছে আরেকজন দায়বদ্ধ। জাহেলি যুগে নারী জাতির কোনো মর্যাদা ছিল না। সে সময় নারীরা ছিল নিপীড়িত-নির্যাতিত ও অবহেলিত। নারীদের সাথে করা হতো পশুর মতো আচরণ। পুরো নারী সত্তাকে পরিবার, সমাজ ও বংশের জন্য অভিশাপ মনে করা হতো। কন্যা সন্তান জন্মকে অসম্মান ও অপমানকর মনে করা হতো। শুধু কি তাই?
নারীর অধিকার বলতে কিছুই ছিল না সমাজে! নারীরা যেমন মর্যাদা ও সম্মান পেত না, ঠিক তেমনি তাদের ন্যায্য অধিকার (মিরাস) উত্তরাধিকারী থেকে বঞ্চিত করা হতো। তাদের ইজ্জত-আব্রু নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার। সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থান ছিল নিম্নে। ছিল না স্বীকৃতি। বৌদ্ধ সমাজে নারীদের নিছক বিলাসিতার উপকরণ মনে করা হতো। বৌদ্ধ ধর্মে নারী হচ্ছে ভোগের বস্তু এবং মানবতার নির্মাণ লাভের জন্য বিঘœস্বরূপ। ইহুদি ধর্মমতে নারীদের সব পাপের উৎসমূল মনে করা হতো। সেই তিমিরাচ্ছন্ন কলুষিত সমাজকে নিষ্কলুষ করার জন্য বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা: সত্যের বাণী নিয়ে আল্লøাহর পক্ষ থেকে এ ধরার বুকে আবির্ভূত হলেন। রাসূল সা: কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হলো নারীর অধিকার ও মর্যাদা। বিশ্বনবীর কল্যাণে মহীয়সী নারী মর্যাদা পেয়েছে মা হিসেবে। মা-বাবা ও স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্বামীর সংসারে স্ত্রীর অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। নারী তার বৈবাহিক জীবনে খাদ্য উপার্জনের চিন্তা থেকে মুক্ত হয়েছে। তেমনিভাবে সমাজের সর্বস্তরের নারীর যথার্থ মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মুসলিম সভ্যতায় নারীর মর্যাদা, মূল্যায়ন, অধিকার কোনোক্রমেই কম নয়। স্ত্রী হিসেবে একজন নারীর জন্য ইসলাম মানবিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। পুরুষের জন্য অপরিহার্য করা হয়েছে স্ত্রীর মোহরানা আদায়।
আল্লøাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের তার পারিবারিক জীবনে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে।’ (সূরা নিসা-৪) আল্লøাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যাসন্তান আছে যাদের সে লালন পালন করে এবং তাদের সাথে সদয় আচরণ করে, তার জন্য অবশ্যই জান্নাত ওয়াজিব। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি দু’টি মেয়ে থাকে? নবীজী বললেন, দু’টি থাকলেও। (বুখারি-২৪৮১) আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার মা-বাবার সাথে সদ্বব্যহার করতে। তার মা তাকে গর্ভে ধারণ করেছে বড় কষ্টের সাথে এবং তাকে প্রসব করেছে খুব কষ্টের সাথে। তাকে গর্ভধারণ করতে এবং প্রসবান্তে দুধ ছাড়াতে ৩০ মাস সময় লেগেছে। (সূরা আহকাফ-১৫) নারীর মর্যাদা ইজ্জত সতীত্ব সুরক্ষার জন্য আল্লাহ তায়ালা পর্দার বিধান ফরজ করেছেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছেÑ ‘হে নবী! মুমিনদের বলে দিন, তারা যেন পরস্ত্রী থেকে তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং নিজ যৌনাঙ্গের হিফাজত করে। তেমনি মুমিন নারীদের বলে দিন, পুরুষের থেকে তাদের দৃষ্টি যেন অবনত রাখে এবং স্বীয় যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষা করে।’ (সূরা নুর-৩০)
নারীরা পুরুষ থেকে পর্দা করবে। তার রূপ-সৌন্দর্য পরপুরুষ থেকে আবৃত রাখবে। পর্দার অর্থ এই নয় যে, নারীকে অবরুদ্ধ করে রাখা বরং প্রয়োজনে পর্দার সাথে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। পর্দার মাধ্যমে খাঁচার পাখির মতো বন্দী করে রাখা নয় বরং নারীর ইজ্জত ও সম্মান রক্ষার জন্য ইসলামের এ বিধান। ইসলাম ঢালাওভাবে সবাইকে সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার দেয়নি। প্রিয় নবী সা: বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক’। (মুসলিম-১৮৭৩) স্বামীদের সম্পর্কে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম’। (বুখারি-২৬৩৮) মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’। (তিরমিজি-১৯৫৭) নারীর মর্যাদা বলতে কী বুঝায়? নারীর মর্যাদা দেয়ার অর্থ হচ্ছে তার ন্যায্য অধিকার সঠিকভাবে আদায় করা, তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের সঠিক ব্যাখ্যা ও তার অবদানের যথাযথ মূল্যায়ন করা। আর প্রাপ্য বলতে তাদের অধিকার স্বীকার করা, কর্তব্যের যথাযথ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও সামাজিক জীবনে তার অবদানসমূহের মূল্যায়নকে বুঝায়। নারীর অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে ইসলাম নির্দেশিত নারী নীতিমালা আনুসরণ করা আবশ্যক। লেখক : কারিয়া ও আলেমা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com