‘আমাদের চালে পোকা দৌড়ায়, কারণ আমরা প্রাকৃতিক’। কেমিক্যালযুক্ত ভেজাল খাদ্যপণ্যে যখন গোটা দেশ ছেঁয়ে গেছে ঠিক তখনই নিরাপদ আর প্রাকৃতিক খাদ্য সম্পর্কে এমন স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ইউনাইটেড হেলথ কেয়ার। রাজধানীর মিরপুরের দক্ষিণ পীরেরবাগ এলাকায় অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা হাকিম এবিএম রাসেল। মূলত এটি একটি প্রাকৃতিক খাদ্যভাণ্ডার। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক পণ্যের পাশাপাশি প্রাকৃতিক চিকিৎসা সেবাও মেলে এখানে। ইউনাইটেড হেলথ কেয়ারের মূলমন্ত্র ‘প্রাকৃতিক পণ্য, প্রাকৃতিক সেবায়-সুস্থ থাকি, ভালো থাকি।’ আদিকালের কাঠের ঘানিতে ভাঙানো দেশি সরিষার তেল যেমন এখানে পাওয়া যায়, তেমনি খাঁটি ঘি, মধু থেকে শুরু করে রসগোল্লা, দই, রসমালাই, খাঁটি আখের গুড় পর্যন্ত পাওয়া যায় ইউনাইটেড হেলথকেয়ারে। রয়েছে দেশি মুড়ি-মুড়কি, খই, চিড়া, ঢেঁকি ছাঁটা চাল-যবের ছাতু, লাল গমের আটা, নারকেলের নাড়–, তিলের নাড়–, খেজুর গুড়ের খোরমা, চিড়া-মুড়ির মোয়া এসবের মতো নানা দেশি খাদ্য সামগ্রী। যার সবই খাটি এবং নিরাপদ। দেশের বিভিন্ন বাগানের চাও মেলে এখানে। পাওয়া যায় একেবারে গ্রাম থেকে সংগ্রহ করা আম, কাঠাল, জাম, লিচুর মতো বিভিন্ন মৌসুমি ফল। শুধু তাই নয় মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য ইউনাইটেড হেলথ কেয়ারে পাওয়া যায় ঔষধি গুণাগুণসম্পন্ন নানা ধরনের ভেষজ পণ্য ও ওষুধ। রয়েছে নিমসহ বিভিন্ন ধরনের খাঁটি তেল। এখানকার বিশেষ আকর্ষণ সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রকারের খাঁটি মধু, আমলকির রসগোল্লা, সয়া দুধ। রয়েছে বিভিন্ন গাছের গুড়া দিয়ে তৈরি কাষ্টকাঠিন্য, গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান ‘কয়েস মাররা’। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে দর্শনার্থীদের জন্য বিনামূল্যে অতিথি আপ্যায়নের ব্যবস্থা রয়েছে ইউনাইটেড হেলথ কেয়ারে। দর্শনার্থীদের আপ্যায়নের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ভেষজ উপাদানে তৈরি শাহী শরবত, আমলকির আচাড়, তেঁতুলের আচাড়, ভুট্টা ভাজা। কখনো কখনো বিভিন্ন দুর্লভ দেশি বনজ ফলেরও দেখা মেলে ইউনাইটেড হেলথ কেয়ারে। এখানে রয়েছে মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র। যার দামও হাতের নাগালে। প্রতিষ্ঠানটির এই ব্যতিক্রমী কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউনাইটেড হেলথ কেয়ারের উদ্যোক্তা হাকিম এবিএম রাসেল শো রুমের একটি সাইনবোর্ডের দিকে ইশরা করেন। যেখানে লেখা রয়েছে ‘কৃত্রিমতাকে আঁকড়ে ধরে আমরা অনেকেই বেঁচে আছি। ফিরে তাকাই আমাদের পূর্বপুরুষের দিকে। তারা বেঁচে ছিল প্রকৃতির প্রাকৃতিক ছোঁয়ায়- প্রকৃতির ভালোবাসায়। ছিল না ক্যান্সার, হেপাটাইটিস বি, ডায়াবেটিসের মতো ভয়াবহতা। যা ধীরে ধীরে মানুষকে নিঃশেস করে ফেলে। বেঁচে থেকেও মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নিতে হয় অনবরত। আমরা স্যালুট জানাই সেইসব পূর্বপুরুষদের-যারা নিজেরা মাঠে লাঙ্গল দিয়ে ঘাম ঝরিয়ে ফসল ফলিয়ে খেত। কাঠের ঘানিতে সরিষা ভাঙিয়ে ভোজ্যতেলের প্রয়োজন মেটাতে। নিম পাতার গুল্লি বানিয়ে রোগ নিরাময় করত। ত্রিফলার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল নিবিড়। অর্জুন ছাল ভিজিয়ে খেয়ে হার্টের সমস্যা দূর করত। আবারও তাদের স্যালুট জানাই। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা জানাই। ফিরে তাকানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। তবুও ছোট্ট একটি চেষ্টা, ছোট্ট একটি প্রয়াস। যার নাম ইউনাইটেড হেলথ কেয়ার।’