সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনসহ দেশের অভ্যন্তরীণ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ছাড়াও নানামুখী দায়িত্ব পালন করতে হয় পুলিশকে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, মামলা নেওয়া, তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা, বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়তা, ভিআইপি নিরাপত্তা ও প্রটোকল দিতে হয় এই বাহিনীকে। দিন যত যাচ্ছে এই বাহিনীর কাজের পরিধিও তত বাড়ছে। দেশের মানুষের জন্য পুলিশি সেবা নিশ্চিত করতে বাহিনীতে বাড়ছে নতুন নতুন ইউনিট। সংশ্লিষ্টরা জানান, এক সময় পুলিশ সদর দফতর, স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), সারদা পুলিশ একাডেমিসহ কয়েকটি ট্রেনিং সেন্টার, বিভাগ, মহানগর, জেলা ও থানা ইউনিট ছাড়া আর কোনও ইউনিট ছিল না। বর্তমানে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবি আই), অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট ও ট্রাফিকসহ অনেকগুলো বড় ইউনিট রয়েছে পুলিশ বাহিনীতে। নতুন করে যোগ হচ্ছে মেডিক্যাল, শিক্ষা ইউনিট, এয়ার উইংসহ আরও একাধিক ইউনিট।
সব মিলিয়ে এই সময়ে পুলিশ বাহিনীতে ইউনিট রয়েছে ১৭৭টি। রয়েছে হাইওয়ে, রেলওয়ে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল, নৌ, ট্যুরিস্ট, পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও স্পেশাল পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এসপিবিএন)। এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় সোয়া দুই লাখ। বাহিনীর আধুনিকায়নও এখন ঈর্ষণীয় পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সাইবার অপরাধ দমনে পুলিশের সারাদেশের ইউনিটগুলোতে রয়েছে সাইবার সেকশন। আলাদাভাবে সাইবার থানা করারও চিন্তা ভাবনা রয়েছে সরকারের। বিমানবন্দর কেন্দ্রিক গঠন করা হয় পুলিশের আলাদা ইউনিট।
প্রশিক্ষণের কোনও বিকল্প নেই। যে কারণে পুলিশের কনস্টেবল থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সবাইকে নিয়মিত প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হচ্ছে। সারাদেশেই অনেকগুলো ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে। দেশের বাইরে গিয়েও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। একইসঙ্গে জঙ্গিবাদ দমনের সফলতা জানাতে ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক দেশের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ পুলিশের কর্মকর্তাদের নিয়মিত সেসব দেশে যেতে হচ্ছে।
মানুষকে তাৎক্ষনিক সেবা দিতে করা হয়েছে ‘৯৯৯’ নামের ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস। পুলিশ সদর দফতরসহ প্রত্যেকটি ইউনিটে ফেসবুক পেইজ খুলে সাধারণ ভুক্তভোগী মানুষের কাছ থেকে অভিযোগ গ্রহণ করে দ্রুত সেবা নিশ্চিত করছে পুলিশ। অসংখ্য ভুক্তভোগী পুলিশের এ দুটি মাধ্যমের সহযোগিতা নিয়ে আশানুরূপ সেবা নিচ্ছেন। রয়েছে বিডি পুলিশ হেল্প লাইন নামের অ্যাপস। জঙ্গি দমনের জন্য দ্রুত অ্যাকশনে যেতে রয়েছে সোয়াত নামের পুলিশের আলাদা কমান্ডো ইউনিট।
আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোল-এর সদস্য বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশ সদর দফতরে ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো নামে ইন্টারপোল সংক্রান্ত কাজ করে এই ইউনিট। বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা দেশের দাগী সন্ত্রাসীদের ধরতে এই শাখা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশে এখন অত্যাধুনিক ফরেনসিক বিভাগ, মানি লন্ডারিং, মানব পাচার, কল ডায়ালিং রেকর্ড (সিডিআর) সেকশন রয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে একেবারেই ক্লু লেস অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সদর দফতরে নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের এক অনুষ্ঠানে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, উন্নয়নের অন্যতম প্রধান শর্ত আইন-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল থাকা। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে দেশে শান্তি বজায় রাখার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ পুলিশ এখন বিশ্বে ‘রোল মডেল। জঙ্গিবাদ দমনে জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা থাকায় আমরা সফল হয়েছি।তিনি আরও বলেন, জনগণের সঙ্গে অসদাচরণ করা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। পেশিশক্তি, নয় ব্যবহার করতে হবে আইনি সক্ষমতা। জনগণের কল্যাণে কাজ করার অপার সুযোগ রয়েছে পুলিশের। পুলিশ হতে পারে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা ও সোশ্যাল লিডার। তিনি বলেন, পুলিশের কাছে জনগণের প্রত্যাশা বেশি। সমাজের চাহিদা বেশি। জনগণ, সমাজ, মিডিয়া প্রতিনিয়ত পুলিশকে ওয়াচ করে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হওয়ার কোনও সুযোগ নেই।
পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগের এআইজি সোহেল রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সময়ের প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষায়িত সেবা দিতে বিভিন্ন সময় পুলিশে ভিন্ন ভিন্ন ইউনিট যুক্ত হয়েছে। এ সকল ইউনিটের প্রত্যেকটি নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণসহ দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলাকে স্বাভাবিক ও বিনিয়োগ বান্ধব রেখেছে। যার ফলে অর্থনৈতিকভাবে অন্যতম উদীয়মান দেশ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পথ বাংলাদেশের জন্য সহজ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া পুলিশের সফলতাই বেশি। যেসব ক্ষেত্রে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয়সহ আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে।-বাংলাট্রিবিউন