রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৯ অপরাহ্ন

নিজে অন্ধ হয়েও অন্ধকে বিয়ে করেছেন সাধু মিয়া

রংপুর প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩ মার্চ, ২০২১

কী? করব, বলেন? আমার আব্বা-মা দুজনই অন্ধ। মা তো বাড়িতে থাকেন। আর আব্বা কোনো কাজ করতে পারেন না। ভিক্ষার টাকা দিয়ে আমাদের সংসার চলে। আব্বা ভিক্ষা করেন। তার সাথে আমিও থাকি।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিল আট বছরের শিশু শিমা। যে বয়সে হাতে থাকার কথা বই-খাতা-কলম, সেই বয়সে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বাবার সঙ্গে পথে পথে ঘুরছে শিমা। রংপুর নগরের সোনালী ব্যাংক মোড়ে ভিক্ষা করতে দেখা যায় বাবা-মেয়েকে। শিমার বাবা সাধু মিয়া সুরেলা কণ্ঠে বলছেন, এই অন্ধ মানুষটাক কিছু সাহায্য করেন। সাহায্যের সেই টাকা হাত পেতে নিচ্ছে ছোট্ট শিশু শিমা। জীবিকার তাগিদে এভাবেই প্রতিদিন অন্ধ বাবার হাত ধরে বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষা করে বেড়ান। শিমা জানায়, ভিন্নজগৎ আলোয়াপুর তাদের গ্রামের বাড়ি। গ্রামে ভিক্ষা করে সংসার চলে না বলে তার মা-বাবা শহরের চলে এসেছেন। এখন শহরের সাতমাথা রেলগেটের কাছে ছোট একটা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন। পরিবারে মা-বাবা ছাড়াও তার আরও দুই বোন রয়েছেন। বড় বোনের অল্প বয়সেই বিয়ে হয়েছে। আরেক বোন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। আর শিমা সাতমাথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু স্কুল বন্ধ থাকায় এখন অন্ধ বাবার সঙ্গে নিয়মিত শহরে বের হয়।প্রায় দুই বছর ধরে এভাবেই বাবা-মেয়ে একসঙ্গে ভিক্ষা করছেন বলে জানান শিমা। আট বছরের এই শিশু বলে, আমরা তো গরিব মানুষ। আমাদের খুব অভাব। এর মধ্যে আমার মা-বাবা দুজনই অন্ধ। কেউ কোনো কাজ করতে পারেন না। আব্বা ভিক্ষা করে সংসার চালান। আমি আব্বার সঙ্গে চার থেকে পাঁচ দিন বের হই। বাকি দুই দিন স্কুলে যাই। এখন তো স্কুল বন্ধ, এ জন্য প্রতিদিন বের হই। রংপুর নগরের সাতমাথা রেলগেট এলাকা এখন শিমাদের ঠিকানা হলেও স্থায়ী বসতভিটা সদর উপজেলার পাগলাপীরের ভিন্নজগৎ আলোয়াপুর গ্রামে। তার মায়ের-বাবা চোখে আলো নেই বলেই স্কুল, শৈশব আর সহপাঠীদের ছেড়ে ভিক্ষাবৃত্তি করছে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া শিমা। ৪৮ বছর বয়সী সাধু মিয়া বলেন, নিজে অন্ধ হওয়ায় বিয়ে করেছি আরেক অন্ধকে। এখন আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই অন্ধ। দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে আমার পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে গেছে। কোনো কাজ করতে পারি না। উপায় না পেয়ে এখন ভিক্ষা করি। এই ভিক্ষা করেই সংসার চালানোর পাশাপশি তিন মেয়ের মধ্যে বড়টার বিয়ে দিয়েছি। সংসারে তো উপার্জন করার মতো আর কেউ নেই। অন্ধ ব?উ আর বাকি দুই মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছি। অনেক কষ্টের মধ্যে থেকেও গ্রামে দুই শতক জমিতে একটি ছাপড়া ঘর তুলেছেন। সেখানে মাথা গোঁজার মতো একটা স্থায়ী ঠাঁই হয়েছে। কিন্তু গ্রামে ভিক্ষা করে পেট বাঁচানো দায়। এ কারণে একটু বেশি আয়ের আশায় শহরে একটা ভাড়া ঘর নিয়ে থাকছেন বলে জানান সাধু মিয়া। সাধু মিয়া বলেন, অনেক চেষ্টা করে ভাতার কার্ড পেয়েছি। এর জন্য মেম্বার (ইউপি সদস্য) ছয় হাজার টাকাও নিয়েছে। সরকারের ভাতা ছাড়া আর কারও কাছ থেকে সহায়তা জোটেনি। বর্তমানে দুই সন্তান ও পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছি। একটা মেয়ে বড় হয়েছে, আরেকটা হচ্ছে। এখন তাদের দুজনকে নিয়ে চিন্তা হয়। কখনো অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে। আবার কোনো কোনো দিন একটু বেশি ভিক্ষার টাকা বেশি হলে খাওয়াদাওয়া ভালো হয়। সমাজের বৃত্তবান মানুষদের প্রতি সহায়তার আকুতি জানিয়ে সাধু মিয়া বলেন, অনেকের কাছেই তো শুনি, ধনী মানুষেরা গরিবদের ছেলেমেয়ের পড়ালেখার দায়িত্ব নিচ্ছে। আমার মেয়ে দুইটার যদি পড়ালেখাসহ একটা ব্যবস্থা করে দিতেন তারা, অনেক বড় উপকার হতো।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com