মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
দাম নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর চিন্তা করছে সরকার ‘গণমাধ্যম যোগাযোগে ইসলামী মডেল’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন সবপক্ষের সাথে আলোচনা করে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন ঘোষণা করা হবে : উপদেষ্টা নাহিদ আবরার ফাহাদ হত্যা : বুয়েটে কী ঘটেছিল ৫ বছর আগে স্বৈরাচার আবার পুনর্বাসন হলে দেশে মানুষ বাস করতে পারবে না : রিজভী হাজী সেলিম, সৈকত ও মানিককে নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বন্যায় ফসল হারিয়ে মাথায় হাত তিস্তা পাড়ের কৃষকদের চীন-ভারত নয়, জাপানের অর্থায়ন হচ্ছে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর সেপ্টেম্বরে সড়কে ঝরেছে ৪২৬ প্রাণ, ৪২ শতাংশই মোটরসাইকেলে যারা কাজে যোগ দেননি তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু: আইজিপি

দেশের উত্তরাঞ্চলের মরুকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৭ মার্চ, ২০২১

প্রকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি ভারত একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহারের ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের মরুকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজের মাত্র ৯০ কিলোমিটার উজানে গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে ভারত একতরফাভাবে তাদের সুবিধা মতো পানি নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে পানির অভাবে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পটি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমির সেচ সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে। তিস্তা পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর জমি সেচের অভাবে ইরি, বোরো মৌসুমে পড়ে থাকে। পানির অভাবে রংপুর বিভাগের ৩৫টি উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক কৃষক চাষাবাদ নিয়ে হতাশ।
আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে কৃষি ক্ষেত্রে। এর ফলে অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হচ্ছে দেশের কৃষি খাত। করোনা মহামারির চরম বিরূপ পরিস্থিতি, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, দীর্ঘ বন্যায় এবং প্রবলবর্ষণের সাথে ফুঁসে ওঠা সাগরের জোয়ারে গত মৌসুমে আউশ ও আমন কাক্সিক্ষত উৎপাদন হয়নি। সব মিলিয়ে দেশে ১০ লাখ ৫০ হাজার টন ধান কম উৎপাদিত হয়েছে। এর ফলে খাদ্যমজুদ অনেক কমে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে খাদ্য নিরাপত্তা। এ অবস্থায় সম্ভাব্য খাদ্যঘাটতি কমাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হচ্ছে। আমন উৎপাদনের যে বিপর্যয় তা বোরো উৎপাদনে পুষিয়ে নিতে চেষ্টা চলছে। তবে এ ক্ষেত্রেও আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব নেতিবাচক ফলাফলের ইঙ্গিত দিচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে ইতোমধ্যে খরার প্রভাব শুরু হয়েছে। এর ফলে বোরো উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বোরো উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে খাদ্য সঙ্কটের সৃষ্টি হতে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা করছেন।
আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে ফল্গুনের রোদ আগুন ঝরা রূপ নিয়েছে। তাপমাত্রার পারদ দিন দিন বাড়ছে। এরই মধ্যে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। আবহাওয়া ক্রমশ: বিরূপ হয়ে উঠেছে। যা প্রভাব পড়েছে কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলের কৃষি ফসলের উপর। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে খাল বিল। দিঘী পুকুর নদ নদীগুলোর পানিও অনেক নিচে। টান ধরছে সেচনির্ভর কৃষি আবাদে। ভূউপরিস্থ পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নির্ভরতা বাড়ছে গভীর নলকূপের পানির উপর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে দেশে প্রতি বছর বিভিন্ন মাত্রার খরায় আক্রান্ত হয় ৮৩ লাখ হেক্টর চাষযোগ্য জমি। এর মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগ জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়। মার্চ-এপ্রিলের খরা বোরো-ইরিতে সেচের বিঘœ ঘটে। ফলে এর উৎপাদনও ব্যাহত হয়। একই সাথে চাষের জন্য জমি প্রস্তুতিতে অসুবিধার সৃষ্টি করে- ফলে বোনা আমন, আউশ এবং পাট চাষ যথাসময়ে করা যায় না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা রয়েছে ৪৮ লাখ ৫২০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারির শেষ দিন পর্যন্ত ৪৭ লাখ ৬১ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। সম্ভাব্য খাদ্যসঙ্কট মোকাবিলায় কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’ এমন ভাবনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। এ কারণে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা পাচ্ছে কৃষক। পাশাপাশি চলতি বোরো মৌসুমেও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বোরো ধানবীজে কেজিপ্রতি ১০ টাকা হারে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। দেশে ধানের আবাদের পরিমাণ ও ফলন সবচেয়ে বেশি হয় ইরি-বোরো মৌসুমে। দেশের মোট চালের প্রায় ৬০ শতাংশ উৎপাদন হয় এ মৌসুমে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে আমন ও আউশ।
আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বোরো উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে কি-না সে বিষয়ে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে এরই মধ্যে খরার প্রভাব দেখা দিয়েছে। শুকিয়ে গেছে নদ-নদী খাল বিল। ৪ মাস ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। একটানা বৃষ্টিহীনতায় বসন্তের শুরু মধ্য ফাল্গুনেই দেখা দিয়েছে চৈত্রের খরাতপ্ত পরিবেশ। পানির অভাবে ফেটে চৌচির ফসলের মাঠ। পানির অভাবে দোনা ও সেউতি পদ্ধতিতে সেচ দিয়ে বোরো আবাদ একেবারেই কমে গেছে। এখন সেচে চলছে পুরাদমে বোরো আবাদ। মাঘ ফাল্গুনে বৃষ্টির দেখা নেই। সামনে চৈত্রমাস। ভূগর্ভস্থ পানি যা আছে তাও কমে যাবে। পরিবেশবিদদের মতে এভাবে আর কিছুদিন বৃষ্টি না হলে খরাপিড়িত উত্তরাঞ্চলে বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকে নেমে আসবে।
বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, বাংলাদেশে এখন আর আগের মতো ষড়্ঋতুর বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে খরার প্রভাব আগের চেয়ে বেড়েছে। এতে নওগাঁসহ উত্তরাঞ্চলের বিশেষ কিছু জায়গায় এখন ধানের মৌসুমে কৃষকরা ধানের চাষ করছেন না। এ ছাড়া তিস্তার প্রভাবেও ওই অঞ্চলে মরুকরণ দ্রুত হচ্ছে। সব মিলিয়ে ধান চাষ অনেক কমে যাচ্ছে। এটা খাদা নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই হুমকি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে খরা ও বন্য সহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের ধান উদ্ভাবন হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল অনেক জাতের ধানও এখন আবাদ হচ্ছে। এতে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
আমাদের যশোর ব্যুরো জানায়, চলতি মৌসুমে যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাঠে মাঠে বোরো চাষিরা সেচযন্ত্রের মাধ্যমে ধান রক্ষা করছেন। কয়েকজন মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষক জানালেন, সেচনির্ভর বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না। ইতোমধ্যেই অনেক এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। বোরো আবাদ শুষ্ক মৌসুমের এ সময়টাতে এমনিতেই পদ্মার শাখা-প্রশাখা নদ-নদীর অধিকাংশই প্রায় পানিশূন্য অবস্থায় থাকে। আগের মতো দোনা ও সেউতি পদ্ধতিতে বোরো ধানের জমিতে সেচ দেয়ার সুযোগ আর অবশিষ্ট নেই। বোরো আবাদ এখন সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ভূগর্ভস্থ পানির উপর।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় গভীর ৩ হাজার ৪২টি, অগভীর নলকূপ ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭০৮টি ও লো-লিফট পাওয়ার পাম্প ৩৩ হাজার ৫৮৬টি মোট ৪ লাখ ৯ হাজার ৩৪৬টি সেচযন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে বোরো আবাদে। এ অঞ্চলে এখনো কোনো সেচযন্ত্র ড্র-ডাউন হয়নি। তবে আশঙ্কা আছে ভরা শুষ্ক মৌসুম অর্থাৎ চৈত্র মাসে। এর মাঝে বৃষ্টি না হলে মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, উত্তরে ৪ মাস ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। একটানা বৃষ্টিহীনতায় বসন্তের শুরু মধ্য ফাল্গুনেই দেখা দিয়েছে চৈত্রের খরাতপ্ত পরিবেশ। নদী নালা শুকিয়ে কাঠ। পানির অভাবে ফেটে চৌচির ফসলের মাঠ। এই চিত্র উত্তরাঞ্চলের সর্বত্র। পরিবেশবিদদের মতে এভাবে আর কিছুদিন বৃষ্টি না হলে সরাসরি প্রভাব পড়বে বোরো চাষাবাদের ওপর। বগুড়ার আঞ্চলিক কৃষি অফিসে তথ্য নিয়ে দেখা যায়, বিরূপ প্রকৃতির কারণে বিগত বোরো ও আমন মৌসুমে চাষাবাদ ও উৎপাদনের টার্গেট অপূর্ণ ছিল। উৎপাদন ঘাটতির কারণে দেশে এবছর ধান চালের পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে, অত্যধিক বলেছেন কৃষি বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, এবার শীত দীর্ঘায়িত না হলেও ফাল্গুন শেষ প্রান্তে এখনও শীত অনুভূত হচ্ছে। গরমের মাস চৈত্র সামনে। তাপদাহের লক্ষণ এখনও দেখা দেয়নি। খাল-বিলে এখনও পানি লেগে আছে। পানির স্তরও এখন পর্যন্ত নেমে যায়নি। মাঠে চলছে বোরো আবাদ। আবহাওয়া ঠান্ডা থাকায় এখনও শুধু উঁচু জমিতে প্রয়োজন ছাড়া সেচ দিতে লাগছে না। এককথায় এখনও তাপদাহের যে সমস্যা তা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে বোরো আবাদ ও মৌসুমী ফল আম ও লিচুর ফলনে কৃষকরা আশাবাদী। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও বোরো, আম ও লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, বরেন্দ্র অঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ দিন দিন বাড়ছে। আবহাওয়া ক্রমশ: বিরূপ হয়ে উঠেছে। যা প্রভাব পড়েছে কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলের কৃষি ফসলের ওপর। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে খাল বিল। দিঘী পুকুর নদ নদীগুলোর পানিও অনেক নিচে। টান ধরছে সেচনির্ভর কৃষি আবাদে। ভূউপরিস্থ পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নির্ভরতা বাড়ছে গভীর নলকূপের পানির উপর। এখন মাঠজুড়ে বোরো ধানের খেত। এটি পুরো পুরি সেচনির্ভর ফসল। কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৫ হাজার হেক্টর জমি। কিন্তু বাজারে চালের দাম বাড়ায় এবার আবাদের জমি বেড়েছে আরো হাজার তিনেক হেক্টর জমি। কৃষকদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, এবার বেশি খরা হতে পারে। মাঘের শেষের দিকে বৃষ্টি হয়। যা এ সময়ের আবাদের জন্য সহায়ক হয়। আবহাওয়া খানিকটা শীতল থাকে। এবার বৃষ্টি না হওয়ায় যেন আগেভাগেই খরাভাব দেখা যাচ্ছে। আর খরাভাব মানে ফসল বাঁচাতে সেচ। এসময় ডোবা নালার পনিতে শাক-সবজির জমিতে সেচ দেয়া যেত। কিন্তু এখন নিচের পানি লাগছে। বাড়ছে উৎপাদন খরচ। ললিত নগরের ভূষনার সদিদ জানালেন, এখনি বোরোর জমিতে টান ধরেছে। চলতি মাসেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যাবে। এখনি দুপুরের দিকে গরম বাতাস বইছে। আবহাওয়া বিভাগের হিসাবে এ মাসেই মৃদু ও মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। আবার বজ্রশিলা বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত কম হবার কথাও বলা হচ্ছে। এমন খবরে কৃষকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এমনিতে এখনি যে আবহাওয়া তাতে বোরোর উৎপাদন ব্যাহত হবে। তাছাড়া ঝড় আর শিলাবৃষ্টি হলে বোরোসহ গ্রীষ্মকালীন ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হবে। বরেন্দ্র অঞ্চলের টিউবওয়েলগুলোয় এখনি টান ধরেছে। খাবার পানির জন্য তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে সেচের জন্য বসানো ডিপটিউবওয়েলের পানির উপর। মান্দার কৃষক শাকিব জানান, এবার বরেন্দ্র প্রকল্পের সেচের পানির দামও বেড়েছে। গত বছর বিঘা প্রতি আবাদের জন্য ১১শ’ টাকা নেয়া হলেও এবার নেয়া হচ্ছে ১২শ’ টাকা। আর ব্যক্তি মালিকানার পাম্পগুলো নিচ্ছে ১৮শ’ টাকা। এদিকে আবহাওয়া ক্রমশ : উত্তপ্ত হওয়ায় আমের মুকুলে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। মুকুল বাঁচাতে চলছে সেচ দেয়া।
পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদী ও জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। দেহের রক্তের শিরা-উপশিরার মতো বাংলাদেশের নদী ধাবমান। নদীদেহের অবস্থা দিনে দিনে কাহিল হয়ে পড়ছে। মানুষের জীবন, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, সভ্যতা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সাথে বলিষ্ঠ ও নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে নদ-নদীর। সমুদ্রে পানির উচ্চতা বাড়ছে। জলবায়ু ও ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তনে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবছর উপকূলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে।
মাটিরতলার পানিসম্পদ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। বৃহত্তম সেচপ্রকল্প বরেন্দ্র, তিস্তা ও জিকে মারাত্মক হুমকির মুখে। ভূপৃষ্ঠের পানি সঙ্কটে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ পড়ছে। ভারত গঙ্গা, তিস্তা, গোমতি, ধলেশ্বর, ইছামতি, কোদলা ও বেতাইসহ ৫৪টি নদীকে অভিন্ন নদী তালিকাভুক্ত ছিল। নদী কমিশনের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) ৫৪টির সাথে চেলা, লূভা, লোহা, কামঝরা ও খাসিমারাসহ আরো ১০টি নদীকে আনুষ্ঠানিকভাবে তালিকা করে। নদীগুলোর বেশিরভাগই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মেঘালায় ও আসাম থেকে আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যৌথ ব্যবস্থাপনায় কোনটিরই ফলদায়ক কোন ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। পানির প্রতিবন্ধকতার ব্যাপারেও কোন সুরাহা হয়নি।
সূত্র জানায়, ভারত একতরফাভাবে আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে অভিন্ন নদী শাসন করে আসছে বহুদিন ধরে। নদ-নদীর অসংখ্য শাখা-প্রশাখার উৎস অভিন্ন নদ-নদী। এতে ভাটি অঞ্চলের দেশ বাংলাদেশের জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। নদ-নদীতে মাইলের পর মাইল চর জেগেছে। পদ্মার শাখা নদ-নদীর অবস্থা খুবই করুণ। উর্বর জনপদ হুমকির মুখোমুখি। সবুজ ঘেরা প্রান্তর হচ্ছে বিবর্ণ। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও ঈশ্বরদী পয়েন্টে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে দাঁড়ানো ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ ভেড়ামারার মোশাররফ হোসেনের কাছে পদ্মার কী অবস্থা জিজ্ঞাসা করতেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বললেন, ‘পদ্মার আর খোঁজ নিয়ে কী হবে? পদ্মা তো প্রায় শেষ। বাঁচার কোন পথই নেই। পদ্মায় পানি নেই, আছে শুধু বালু আর বালু।
পানি প্রতিবন্ধকতায় বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া। ঘটছে ষড়ঋতুর পরিবর্তন। আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণে পরিবেশবিদগণ উদ্বিগ্ন। তাদের কথা, মারমুখী ও বিপজ্জনক হচ্ছে পরিবেশ। এতে, কৃষি, মৎস্য সম্পদ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের কথা, দেশের নদ-নদীর পানি বঙ্গোপসাগরে পড়ার স্বাভাবিক ধারা হয়েছে অস্বাভাবিক। স্রোতহীন নদীর পানি একরকম চুইয়ে পড়ার মতো অবস্থার কারণে লবণাক্ততা গ্রাস করছে। ভূমি গঠনেরও পরিবর্তন ঘটছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও নদী বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগরের সাথে যুক্ত সুন্দরবনের নদ-নদীর পানির প্রবল তোড় কমে গেছে। স্রোতহীন নদ-নদীর কারণে সমুদ্র উত্তপ্ত হচ্ছে।
নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় লবনাক্ততা গ্রাস করছে নতুন নতুন এলাকা। উদ্ভিদ, প্রাণীকুল, জলজ, বনজ ও মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে অপুরণীয়। পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় নদ-নদীর তলদেশ পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে বর্ষা মৌসুমে বন্যা আর শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য পড়ছে হাহাকার। বর্তমানে মাঠে মাঠে চলছে সেচনির্ভর বোরো আবাদ। চৈত্র মাস না আসতেই পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। সেচ নিয়ে শংকা বাড়ছে বোরো চাষিদের।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com