মোবাইল অপারেটরদের কাছে ৭ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকায় তরঙ্গ বিক্রি করল সরকার। গত সোমবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নিলামে এই পরিমাণ টাকায় ২৭ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বিক্রি হয়। পাঁচ বছরের কিস্তিতে অপারেটরদের কাছ থেকে টাকাগুলো পাওয়া যাবে। নিলামে অংশ নিয়ে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন (জিপি) ১০ দশমিক ৪, রবি আজিয়াটা ৭ দশমিক ৬ ও বাংলালিংক ৯ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কেনে। তবে সরকারি অপারেটর টেলিটক কোনো তরঙ্গ কিনতে পারেনি। সব মিলিয়ে নিলাম শেষে গ্রামীণফোনের তরঙ্গ ৪৭ দশমিক ৪, রবির ৪৪, বাংলালিংকের ৪০ ও টেলিটকের ২৫ দশমিক ২ মেগাহার্টজ দাঁড়িয়েছে। যার গ্রাহকসংখ্যা যত বেশি, তার বেশি তরঙ্গ দরকার হয়। সেবার মান নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বড় একটি হাতিয়ার তরঙ্গ। নিলাম শেষে গতকাল ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রক্রিয়া শেষে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এই তরঙ্গ ব্যবহার শুরু করা যাবে। তখন সেবার মানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়। নিলাম অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর একটি হোটেলে। বেলা ১১টায় শুরু হওয়া কার্যক্রম শেষ হয় রাত সাড়ে ৮টায়। সর্বশেষ ৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনতে গ্রামীণফোন ও রবি প্রায় সাত ঘণ্টা লড়াই চালায়।
সকালে ১৮০০ ব্যান্ডের ৭ দশমিক ৪ তরঙ্গ বরাদ্দের মধ্য দিয়ে নিলাম শুরু হয়। এ ব্যান্ডের সক্ষমতা বেশি। মানে হলো, একসঙ্গে অনেক গ্রাহককে সেবা দেওয়া যায় ১৮০০ ব্যান্ড দিয়ে। এ ব্যান্ড থেকে বাংলালিংক ৪ দশমিক ৪, রবি ২ দশমিক ৬ ও গ্রামীণফোন দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কেনে। টেলিটক এ ব্যান্ডের নিলামে অংশ নেয়নি। ১৮০০ ব্যান্ডে ভিত্তিমূল্য ছিল মেগাহার্টজপ্রতি ৩ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। এ দরেই বিক্রি হয়।
২১০০ ব্যান্ডে ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলামে ওঠে। ভিত্তিমূল্য ছিল মেগাহার্টজপ্রতি ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। শুরুতে ৫ মেগাহার্টজ করে তরঙ্গ ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার দরে (প্রতি মেগাহার্টজ) কিনে নেয় গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক। শেষে বাকি ৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিয়ে গ্রামীণফোন, রবি ও টেলিটক লড়াই শুরু করে। একসময় টেলিটক ক্ষান্ত দেয়। কিন্তু গ্রামীণফোন ও রবি থামেনি। ৮১ রাউন্ড নিলাম শেষে এই তরঙ্গ গ্রামীণফোন মেগাহার্টজপ্রতি ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার ডলারে কিনে নেয়। শেষ দিকে তরঙ্গের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিটিআরসি দুই অপারেটরকে সতর্ক করেছিল। বিটিআরসির কমিশনার এ কে এম শহীদুজ্জামান দুই অপারেটরের উদ্দেশে বলেন, অনেক চড়া দাম অপারেটর ও জাতির জন্য ভালো হবে না। উল্লেখ্য, চড়া দামের তরঙ্গ গ্রাহক পর্যায়ে সেবার বাড়তি দামের একটি কারণ। ডাক ও টেলিযোগাযোগসচিব মো. আফজাল হোসেন, বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্রসহ সংস্থাটির কর্মকর্তা ও চার অপারেটরের প্রতিনিধিরা নিলামে উপস্থিত ছিলেন। বিটিআরসির হিসাবে, বর্তমানে গ্রামীণফোনের গ্রাহক ৮ কোটির কিছু বেশি। রবির গ্রাহক ৫ কোটি ১৫ লাখ। আর বাংলালিংকের গ্রাহক ৩ কোটি ৫৯ লাখ এবং টেলিটকের ৫৫ লাখ। নিলাম শেষে গ্রামীণফোনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়েন্স বেকার বলেন, ‘এই অতিরিক্ত তরঙ্গের মাধ্যমে আমরা মানুষের বাড়তে থাকা ইন্টারনেট চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হব। শহরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিজিটাল সেবার ধারণা পৌঁছে দিতে পারব।’
নিলাম অনুষ্ঠান শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিলামে যে পরিমাণ তরঙ্গ বরাদ্দ হয়, তা কারও জন্যই যথেষ্ট ছিল না। তিনি বলেন, রবির হাতে যে পরিমাণ তরঙ্গ রয়েছে, তা দিয়ে গ্রাহকদের উন্নতমানের সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।