বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকার গণতান্ত্রিক সরকার নয়, তারা জোর করে, রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আজকে বে আইনিভাবে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। এই দখলদারী সরকার শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করছে যার মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে অন্যায়, অত্যাচার ও নিপিড়নের মাধ্যমে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, আজকের দুর্ভাগ্য আমাদের এই দেশের জন্য, আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি তাদের জন্য। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছিলাম শুধুমাত্র গণতন্ত্রের জন্য, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এটিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়ে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই সরকার সমস্ত গণতান্ত্রিক আইন বাতিল করে স্বৈরাচারী আইন প্রতিষ্ঠা করছে।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা এতো ভয় পান কেন? সমাবেশের অনুমতি দেয়ার পরও চতুর্দিক থেকে বন্ধ করে দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদেরকে সমাবেশে আসতে দেন না। কারণ আপনারা জানেন নেতাকর্মী ও জনগণ যদি জেগে ওঠে তাহলে আপনাদের এই বে আইনি ক্ষমতা আর রাখা সম্ভব হবে না…।এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। আমাদের যুবদল নেতা মজনুসহ এই আইনে যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে সকলকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। কার্টুনিস্ট কিশোরের ওপর কিভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে, মোশতাক কিভাবে মারা গেছেন তার দুটো ঘটনা মাত্র প্রকাশ পেয়েছে। আমি সাবাস দিতে চাই কার্টুনিস্ট কিশোরকে। তাকে যে নির্যাতন করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে তিনি আদালতে মামলা করেছেন। তার এই সাহসিকতার জন্য আমি তাকে সাবাস দিতে চাই। বন্ধুগণ এই সাহস নিয়ে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের স্বাধীনতার সকল চেতনাকে নষ্ট করে দিয়ে আমাদের সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আজ সাহস নিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে রাজপাথে সোচ্চার হতে হবে বন্ধুগণ। আমরা এই সমাবেশ থেকে স্পষ্ট করে বলতে চাই অবিলম্বে ডিজিটাল অ্যাক্ট বাতিল করুন, বন্দিদেরকে মুক্তি দিন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যে মিথ্যা মামলায় আটক করে রেখেছেন তাকে মুক্তি দিন। আমাদের তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করুন। ২০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে গায়েবি মামলা দিয়েছেন সবগুলো মামলা তুলে নিতে হবে, প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এই সরকারকে অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্টা করতে হবে। আসুন আমরা আজকে ওই লক্ষে ঐক্যবদ্ধ হই। কোনো কিছুই আমাদের আটকাতে পারবে না। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ঢাকা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন, শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম বাদল, ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, যুগ্ম সম্পাদক রিয়াদ ইকবাল, সহ-সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ প্রমুখ।
অবৈধ সরকার ক্ষমতায় থাকতে কালো আইন করেছে : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ সরকার অবৈধ, এ সরকার খুব দুর্বল। তারা নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে কালো আইন করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তেমনি একটি কালো আইন। মানুষের বাকস্বাধীনতা ও কণ্ঠরোধ করার এ কালো আইন বাতিল করতে হবে। সেই সাথে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। বিএনপি মহাসচিব সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানান। সারা দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে সমাবেশের অংশ হিসেবে গত ১০ মার্চ রাজধানীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি একথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে হবে। ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমি সরকারকে বলতে চাই, আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন সেই দায় নিয়ে পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। আজকের এই সভা করছি অত্যন্ত চাপের মুখে। মঙ্গলবার রাত ১২টায় বলা হয়েছে মোহাম্মদপুরে সভা করতে দেওয়া যাবে না, ওখানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিঘিœত হবে। অথচ তারাই আগে সেখানে অনুমতি দিয়েছিল। রাত ১২টায় এখানে অনুমতি দিয়েছে। আমি মির্জা আব্বাস, তার সহধর্মিণী আফরোজা ভাবি ও তাবিথ আওয়ালকে ধন্যবাদ দিতে চাই যে এত অল্প সময়ে তারা এই সমাবেশের আয়োজন করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, আমরা একটা কঠিন সময় অতিবাহিত করছি। এত বড় কঠিন সময় স্বাধীনতার ৫০ বছরে আর আসেনি। আমরা দেখছি আমাদের যে অধিকারগুলো পাকিস্তান সেনাবাহিনী কেড়ে নিয়েছিল, আজ এই সরকার একই কায়দায় আমাদের সেই সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা কি ভোট দিতে গেলে ভোট দিতে পারি? এই যে আমাদের ছয়জন মেয়র প্রার্থী এখানে বসে আছেন, তারা কেউ ভোট করতে পারেননি। ভোটের দিন তাদের সবাইকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তাদের পছন্দমতো ফলাফল ঘোষণা করেছে। এটা শুধু সিটি করপোরেশনে নয়, ২০১৪’র নির্বাচনে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। আমরা নির্বাচনে অংশ নেইনি। ২০১৮-তে কৌশল পরিবর্তন করে আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে নিয়ে চলে গেছে। লজ্জা হয়, চিফ ইলেকশন কমিশনার যখন বলেন যে ভোট সুন্দর হয়েছে, সুষ্ঠু হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এত ভয় কেন? জনগণের কথা বলার অধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয় কেন? জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকার বন্ধ করা হয় কেন? কারণ আপনারা জানেন যে জনগণ যদি ভোট দিতে পারে তাহলে আপনারা কোনোদিনই ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।
‘সরকার এত দুর্বল যে তাদের প্রত্যেকদিন নতুন নতুন আইন তৈরি করতে হয় নিজেদের রক্ষার জন্য। একটা আইন তৈরি করেছে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন। মানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এই যে আপনারা মোবাইল করেন, ফেসবুক করেন সেগুলো তারা মনিটর করে। যন্ত্র নিয়ে এসেছে ইসরায়েল থেকে। এটা আবার আল জাজিরা প্রকাশ করে দিয়েছে। ‘
তিনি বলেন, আমাদের চিফ জাস্টিস কয়েকদিন আগে বললেন, লেখালেখি করা ভালো, কিন্তু রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়, সেটা আমরা কখনোই মেনে নেবো না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, অবশ্যই আমাদের জানাতে হবে যে, কোন কাজে রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়? লেখালেখি করলে রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়, সেজন্য আমাদের কারাগারে মৃত্যুবরণ করতে হয়। সেজন্য কার্টুনিস্ট কিশোরের সমস্ত শরীর রক্তাক্ত করা হয়, সেখানে ইমেজ নষ্ট হয় না?
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। কারণ আমরা জানাতে যাই, ৫০ বছর আগে স্বাধীনতা যুদ্ধে কাদের অবদান ছিল। কাদের অনুপ্রেরণায় কাদের নেতৃত্বে কাদের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে আমরা একটা স্বাধীন ভূখ- পেয়েছি। ২ মার্চ স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন রব সাহেব, সেটা পালন করেছি। ৩ মার্চ শাজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছেন সেটা পালন করেছি। আমরা ৭ মার্চ পালন করেছি, কারণ সেদিন একটা বিশাল জনসভায় অনুপ্রেরণাময়ী বক্তব্য ছিল। আমরা ৯ মার্চ ইতোমধ্যে পালন করেছি, সেদিন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান ঘোষণা করেছিলেন। আমরা পালন করবো ২৬ মার্চ, ২৭ মার্চ। বিএনপির মহাসচিব বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলেন। আমাদের সাংবাদিকরা যখন জিজ্ঞাসা করলেন যে সীমান্ত হত্যা সম্পর্কে কী বলবেন? উনি বললেন নো ক্রাইম নো ডেথ। অর্থাৎ, অপরাধ না হলে হত্যা হবে না। হত্যা করার অধিকার তাকে কে দিয়েছে? কোনো দেশের আইনে কাউকে বিনা বিচারে হত্যা করার অধিকার কারো নেই। কেউ অপরাধ করলে বিচার হবে। শাস্তি হবে।