অপরিকল্পিত ও অসচেতনভাবে বর্জ্য ফেলায় সীতাকু- পৌরসভার উত্তর বাইপাস সংলগ্ন মহাদেবপুর-দক্ষিণ ইদিলপুর -শিবপুর এলাকার পাশ ঘেঁষে প্রবাহিত হওয়া খালটি এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। দখলে-দূষণে বিধ্বস্ত এই খালটি খননে নেওয়া হয়নি উদ্যোগ। ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে খালের দূষণ। মূলত খালের নিকটবর্তী দোকানপাটের সমস্ত ময়লা আবর্জনা ও স্থানীয়দের বাড়িঘর – বহুতল ভবনের বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনা এখানে ফেলা হচ্ছে নিয়মিত। এতে ময়লার ডিপোতে পরিণত হয়েছে খালটি। ময়লার স্তূপ এমন আকার ধারণ করেছে যে, সেখানে এখন আর পানি প্রবাহ নয় যেন ময়লা ফেলাই স্বাভাবিক বলে মনে করছে লোকেরা। খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশসহ প্লাস্টিক, ছেড়া কাপড়, সিসা, কাঁচ ভাঙা,লোহা ভাঙা, পোড়া মোবিল, তেল, বাতিল আসবাবপত্রসহ সকল ধরণের বিপজ্জনক ও বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে এ খালে। শুধু ভরাটের পথে নয় দূর্গন্ধযুক্ত আবর্জনার বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশের এলাকায়। মশা-মাছি ও রোগ জীবানুর উপদ্রব বেড়ে গিয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে বাসিন্দারা। খালের অস্তিত্ব ও পরিবেশ রক্ষা নিয়ে যেন কারোরই কোন মাথা ব্যাথা নেই।অসচেতনভাবে বর্জ্য ফেলে ভরাট করা হচ্ছে খাল, কেউ কেউ খালের কিয়দংশ দখলে নিয়ে গড়েছে স্থাপনাও। আসছে বর্ষা মৌসুম। চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে নেমে এ খালটি মহাদেব পুর, ইদিলপুর, শিবপুর, বসরত নগর হয়ে বঙ্গপ্রসাগরের মোহনায় গিয়ে পড়েছে। মূলত পৌরসভার ৪,৩, ৮,৯ নং ওয়ার্ডের গ্রামগুলোর পানি ও পাহাড়ি ঢলের পানি চলাচলের একমাত্র রুট এ খাল। ভরপুর বর্ষা মৌসুমে পাহাড় থেকে নামে ঢলের বান। গ্রামের পুকুর ও দীঘিগুলোও তখন জলে টুইটুম্বুর থাকে। বনাঞ্চল ও কৃষি জমি প্লাবিত হয়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। তখন খালই মানুষের প্রধান ভরসা। পাহাড়ি ঢলের চাপ কমলে গ্রামের পানি খাল টেনে নিবে এই বলে ভরসা পান বাসিন্দারা। কিন্তুু আগামীর বর্ষায় সে ভরসা ক্ষীন হতে চলেছে। ময়লা-আবর্জনায় খালের অর্ধেকাংশ উচ্চতা ভরাট হয়ে গেছে, সংকীর্ণ হয়েছে খালের প্রস্তও। তার উপর পাহাড়ি বালু ও মাটি এসে জমাট বাঁধছে। ফলশ্রুতিতে গভীরতা কমে খাল হারিয়েছে নিজস্ব স্বকীয়তা, পানি চলাচল ব্যাহত হয়ে আসছে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠছে। খালের এমন বেহাল দশা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। যদিও বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানালেন, পৌরসভা থেকে ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থান না থাকায় বাধ্য হয়ে সবাই খালেই ময়লা ফেলছেন। স্থানীয়রা খবরপত্রকে জানান, আমরা যারা স্থায়ী বাসিন্দা আছি আমাদের সমস্যা আমরা বুঝি। খালে ময়লা ফেলছে বহুতল ভবনের ভাড়াটিয়ারা। ভবনগুলোর মালিকরাও সচেতনতা সৃষ্টিতে কোন নজর দেয়নি। তাদের কৃতকর্মের কারণে আমাদের ভুগতে হচ্ছে এবং হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, খালটির ৩ নং ওয়ার্ড অংশে দু’পারের কয়েকজন গৃহস্থ খালের জায়গা দখল করে নিয়েছে। ঝোপঝাড় ও গহীন জায়গা হওয়ার সুবাদে দখলদাররাও রয়েছেন দৃষ্টির অগোচরে। এসব বিষয়ে পৌরসভা ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সুনজর আশা করছেন সচেতন নাগরিকরা। এ বিষয়ে দৈনিক খবরপত্রকে সীতাকু- পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম বলেন, মানুষজন অসেচতনভাবে খালে ময়লা ফেলছে, বহুবার তাদের বলা হলেও সচেতন করা যায়নি। আমরা খালের বিষয়টি তদারকি করবো ও শীঘ্রই খাল খননের প্রকল্পের আওতায় আনার চেষ্টা করবো। দখল ও দূষণ ঠেকাতে পৌরসভা ব্যবস্থা নিবে বলে জানান পৌর মেয়র।