ঢাকার ধামরাইয়ে অন্যান্য সবজির পাশাপাশি রবি শষ্যের চাষাবাদে নতুন করে যোগ হয়েছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ। কৃষকরা আগ্রহ নিয়ে সূর্যমুখী চাষ শুরু হয়েছে পুরো ধামরাই উপজেলায়। সূর্যমুখী ফুল চাষে সুফল পাওয়ার আশায় কৃষকদের আগ্রহও ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষকরা ধান, ভুট্টা ও গমের আবাদের সাথে নতুন করে সূর্যমুখী ফুল চাষ যোগ করেছে। এবারি প্রথম ধামরাইতে সূর্যমুখী ফুল চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজছে কৃষকরা। সূর্যমুখী ফুল দেকতে যেমন সুন্দর তেমনি আগ্রহ নিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন দেখতে আসছে এর সৌন্দর্য। শুধু ধামরাই নয় আশপাশের এলাকার লোকজনও সূর্যমুখী ফুল চাষ দেখছে আর আনন্দ উপভোগ করছে। সূর্য হেলে পড়ার সাথে সাথে ফুল গাছও সে দিকে হেলে পড়ে। এ যেন একটির সাথে আরেকটির গভীর মেলবন্ধন রয়েছে। একটিকে ছাড়া অপরটি চলতেই পারে না।ভ্রমন পিপাসুদের ভিড় জমতে থাকে বিকেল বেলায়। সূর্যসুখী ফুল গাছের সাথে চলে সেলফি তুলা। ধামরাইয়ে অনেক এলাকায়ই সূর্যমুখীর চাষ শুরু করছে কৃষকরা। অনেকে আবার পরিক্ষামুলকও চাষ করছে। কেউবা নিজেদের পরিবারে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করতে নিজ জমিতে সবজি, ভূট্রা, গম চাষের পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুল চাষ নতুন করে যোগ করছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় পুরো উপজেলায় ৫শত জন কৃষককে ৫ শত বিঘা জমিতে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে জনপ্রতি ১ কেজি করে সূর্যমুখী ফুলের বীজ দেওয়া হয়েছে। তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ধান,গম, ভূট্রা চাষের পাশাপাশি প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের ৫ মত বিঘা জমিতে ৫ শত জন কৃষককে বীজ ও প্রযুক্তিসহ কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় এর আবাদ শুরু করার জন্য জনপ্রতি ১ কেজি করে সূর্যমুখী ফুল চাষের বীজ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে ধামরাইতে সূর্যমুখী ফুল চাষ শুরু করায় উপজেলা কৃষি অফিসার ও উপসহকারী কৃষি অফিসারগণ নিয়মিত দেখভাল করতে প্রায়ই কৃষকদের কাছে যাচ্ছে। কখন কি করতে হবে, কোন সার, বিষ দিতে হবে কৃষকরা কৃষি অফিসারগণের পরামর্শ নিচ্ছে। উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের বাড়িগাও এলাকার কৃষক গ্রাম পুলিশ সুশীল সরকার বলেন, আমার অনেক দিনের সখ সূর্যমুখী ফুল চাষ করার। কিন্তু কোন সঠিক পরামর্শ কারও কাছ থেকে পাইনি। হঠাৎ করে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাই।তাই বেশি আগ্রহ নিয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষ করি। প্রথমে ধারনা ছিল জমি থেকে ফসল আসবে তা দিয়ে নিজের পরিবারের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ হলেই হবে। কিন্তু এখন আরো বেশি করে চাষ করার ইচ্ছা পোষন করছি। তিনি আরো বলেন, কৃষি অফিসের সহায়তায় বীজ পেয়ে আমি ৫২ শতক জমি লিজ নিয়ে চাষ শুরু করেছি। সার, সেচ ও কীটনাশক মিলিয়ে এ পর্যন্ত চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকার মতো। তবে বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লাভ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশ। তবে প্রথমবার, তাই কি পরিমান সুফল পাবো তা ঠিক ধারণা করতে পারছি না। কৃষক অনিক সরকার জানান, ধান বা গম চাষে যে পরিমাণ খরচ হয় সূর্যমুখী চাষে খরচ কম হচ্ছে তবে লাভ মনে হয় তুলনামূলক ভাবে বেশি হবে । যে কারণে আগামীতে অনেক কৃষকই সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকবে। তিনি বলেন, আমি প্রথমে বুঝতে পারি নাই, তাই আমার একটু ক্ষতি হয়েছে। এখন আর ক্ষতির কোন চিন্তা নাই। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই সূর্যমুখী ফুল চাষ চোখে পড়ে। তবে প্রথমে কেউ বেশি করে চাষ করতে সাহস পায় নি। কিন্তু এখন আর কোন সমস্যা নেই। খরচ কম। উপজেলার কুশুরা এলাকার মিনহাজ বলেন, সূর্যমুখীর কা-, মূল এবং গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া বিক্রি করে অতিরিক্ত আয়েরও একটা সুযোগ মিলবে। তাছাড়া চাষে তেমন কোনো ঝামেলা নেই। দু’ একবার পানির সেচ এবং ফুলগুলো একটু দেখে রাখলেই হলো। সূর্যমুখী ফুল চাষ নিয়ে কুল্লা ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক বলেন, উপজেলায় প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ হচ্ছে। এর আগে ব্যাপকভাবে এর চাষ হয়নি। তাই অনেকেই এর আবাদ বা চাষ সম্পর্কে ভালো জানি না।আবার অনেকেই সৌন্দর্য বর্ধনকারী ফুল হিসেবে বাড়ির উঠানে লাগিয়েছেন। বিকেলে আমাদের এলাকায় অনেক নতুন মুখ দেখি এই ফুল দেখতে আসে। ফুল গাছের সাথে সেলফি তুলছে। খরারচর এলাকার কয়েকজন কৃষক বলেন, সবজি চাষের পাশাপাশি এবার সূর্যমুখী ফুল চাষ শুরু করেছি। সবজি চাষে এবার অনেক বড় লোকসানে পরেছি। কিন্তু এখন থেকে সূর্যসুখীর চাষ করবো। ভোজ্য তেলের চাহিদাও পূরণ হবে। সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে যে তেল হয় তাতে কোন বেজাল নেই। প্রথম প্রথম একটু চিন্তায় আছি। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কোন সমস্যা হবে না। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার আরিফুল হাসান বলেন, ধামরাই উপজেলায় প্রায় ৫ শত জন কৃষককে ৫ শত বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষের জন্য ১ কেজি করে প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় হাইকন নামে সূর্যমুখীর বীজ দেওয়া হয়েছে। ২০-২১ অর্থ বছরে পূর্ণবাসন কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত কৃষকদের এই বীজ দেওয়া হয়। সূর্যমুখী বীজের তেল স্বাস্থ্য সম্মত।দেশের মানুষের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করতে সূর্যমুখী ফুল চাষের বিকল্প নেই। এই চাষে অন্যান্য ফসলের তুলনায় খরচ কম।