শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

ইকোপার্ক বনাঞ্চল ধ্বংসে মেতেছে কারা?

এম কে মনির সীতাকুণ্ড :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২১ মার্চ, ২০২১

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ সমারোহ, আঁকাবাঁকা সুউঁচু গীরি পথ, হরেক প্রজাতির গাছগাছালি আর পাখির কলতান ও ফুলের সৌরভ জুড়ানো সবুজের রাজ্য খ্যাত উত্তর চট্টগ্রামের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সীতাকুণ্ডের বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক। এখানে সহস্র ধারা ও সুপ্তধারা নামে দুইটি অনিন্দ্য সুন্দর ঝর্ণা, বন্য প্রাণীর বিচরণ, সূর্য অস্ত যাওয়ার গোধূলি লগ্নের রক্তিম আভা যে কারো নজর কাড়লেও বিশেষ করে অজস্র বৃক্ষরাজি এ পার্ককে করেছে সমৃদ্ধ। কিন্তুু যুগ সময় ধরে সীতাকুণ্ডে অবস্থিত এই ইকোপার্কের সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধ্বংসে মেতে ওঠেছে কয়েকটি বনদস্যু চক্র। বছরের পর বছর পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট মৌসুমকে ঘিরে চলে তাদের এই ধ্বংসযজ্ঞ। নিজেদের ব্যবসা কিংবা লাভের স্বার্থে বনভূমি উজাড় করে দিচ্ছে এই বন খেকো দল। আইন ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বন ধ্বংস করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে চলছে তারা। তবে দীর্ঘ সময় থেকে নানাভাবে বন ধ্বংস করা হলেও কারা বন ধ্বংস করছে কিংবা কারা বনভূমি উজাড় করছে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। আইনের আওতায় আনা যায়নি এসব বনদস্যুদেরও। ফলে প্রভাবশালী এসব মহল বন ধ্বংস থেকেও সরে আসনি। তাদের এহেন পরিবেশ বিধ্বংসী কান্ডে বনভূমির বিরল প্রজাতির গাছ যেমন বিলুপ্ত হচ্ছে তেমনি বন্যা প্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট হয়ে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি তৈরি হচ্ছে। একইসাথে পাহাড়ের স্বকীয়তা নষ্ট হয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাচ্ছে বিশাল এই অক্সিজেন কেন্দ্র। বনাঞ্চল ধ্বংসের এই মহোৎসব থামানো না গেলে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে বিলুপ্ত হবে অসংখ্য বন্য প্রাণী। বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছরই বাংলা ফাল্গুন মাসে সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় ও বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কে সুকৌশলে রাতের অন্ধকারে লোকচক্ষুর আড়ালে গভীর বনে আগুন লাগিয়ে দেয় একটি মহল। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে ব্যবহার করা হয় পেট্রোল। বনের শুকনো অংশে আগুন ধরিয়ে দিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে পড়ে তারা। এরপর সারা রাত জ্বলতে থাকে সে আগুন। একে একে পুড়ে যায় সেগুন, কড়ই, গর্জন, ধারমারা, বর মালাই, গুতগুটিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। ছাইয়ের স্তুুপে পরিণত সবুজের অরণ্য। সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ঝোপ জঙ্গল পরিস্কার করে পাহাড়ের ঢালু জায়গা জুম চাষীদের কাছে লিজ দেয়। এরপর বৃক্ষ নিধনকৃত জায়গায় চাষাবাদ করা হয়। মূলত চাষের সুবিধার্থে পাহাড় খালি করতেই বনভূমিতে আগুন দেওয়া হয়। সাধারণত জঙ্গলা জায়গা কেউ লিজ নিতে চায় না বলে এই ধ্বংসের উৎসব। স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ের বিশাল অংশ পুড়ে ফেলে খালি করা হয় যাতে লিজ দিতে সুবিধা হয়। সরকারি তত্ত্ববধায়নকৃত পাহাড় লিজ দিয়ে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে শুধু জুম চাষের জন্য বনে আগুন দেওয়া হয় না। কেউ কেউ বন্য প্রাণী শিকারেও বনে আগুন দেয় বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত ২০১২ থেকে ২০২১ এই পর্যন্ত সীতাকুণ্ডের বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কে আগুনে পুড়ে প্রায় ৩ ‘শ একর বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে। তন্মধ্যে ২০১৩ সালে পুড়ে গেছে ৫০ একর, ২০১৪ সালে ১০ একর ও ২০১৫-১৯ সালে ২৫০ একর বনভূমি পুড়ে গেছে। সর্বশেষ চলতি মাসের ১৮ তারিখ বৃহস্পতিবার রাতে ইকোপার্কে আগুন দেয় বন ধ্বংসকারী একটি দল। এসময় দুই দফায় ইকোপার্কের বিমান টাওয়ার ও চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাশ্ব অংশে আগুন দেয় তারা। এসময় ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে দমকল বাহিনী অগ্নিস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। এ আগুনে ইকোপার্কে ২০০৬-০৭ সনে দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্পে সৃজিত ৪০ হেক্টর ও ২০০৭-০৮ সনে দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্পে সৃজিত ৪০ হেক্টর বন পুড়ে যায়। এ ঘটনায় সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে অভিযুক্ত করা না গেলেও সীতাকুণ্ড মডেল থানায় ইকোপার্ক সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দায়িত্বে থাকা রেঞ্জ কর্মকর্তা বাদী হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরী দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে সীতাকু- ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন এর স্টেশন অফিসার মো. নুরুল আলম দুলাল দৈনিক খবরপত্রকে বলেন, পাহাড়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ব্যাপার। একদিকে আগুন নেভানো হলে অন্যদিকে আরো বেড়ে যায়। পাহাড়ে গাছের ঢালপালা কেটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়। তাছাড়া পাহাড় উঁচু হওয়ায় এখানে পানির পাইপ টানা সম্ভব হয় না। শস্য আবাদের জন্যই একটি মহল পাহাড়ে আগুন দেয় বলে জানান তিনি। বন্য প্রাণী শিকারের সময় পাহাড়ে আগুন দিলে হরিণ, বন মোরগসহ প্রাণীরা আগুনের তাপদাহে গভীর বন থেকে বেরিয়ে আসে। এসময় শিকারিরা সহজেই শিকার করতে পারে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পূর্ব অংশ থেকে আগুন দেওয়া হলে তা পশ্চিম অংশে ছড়িয়ে যায়। ফলে বিশাল বন পুড়ে যায়। এসব আগুনের ঘটনায় কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি। এমনটাই দৈনিক খবরপত্রকে জানিয়েছেন ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন। তবে সৌন্দর্যের লীলাভূমি ধ্বংসে মেতেছে কারা সেই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে কারা জড়িত কিংবা এসবের পিছনে বন কর্মকর্তাদের কোন যোগসাজশ রয়েছে কিনা সে বিষয়ে খোলাসা হতে চান সীতাকু-ের সচেতন নাগরিকরা। বন ধ্বংসে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বন আইনে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান সীতাকু-ের জনসাধারণ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com