এক সময়ের খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদী এখন যৌবন হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংস্কার না করায় তলদেশ ও দুইপাড় ভরাট হয়ে গভীরতা কমে নদীটি আজ মরা খালে পরিণত। এদিকে প্রভাবশালীদের হাতে চলছে নদী দখলের মহোৎসব। অনেকেই নদীর ভেতর গড়ে তুলেছেন দোকান, ঘরবাড়ী। পাশা-পাশি পৌর শহরের সব বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে এই নদীর তীরে। এতে নদীর পানি শুধু দূষিতই হচ্ছে না, বরং বাতাসে ছড়াচ্ছে বিষ বাষ্প। কালের সাক্ষী হয়ে এখনো খুরিয়ে খুরিয়ে বয়ে চলছে এক কালের খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদী। প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের দখল, দূষণ, নদী ভরাটসহ নানাবিধ অত্যাচার চলছে এই নদীর উপর। ডাকাতিয়া নদীর দৈর্ঘ্য ১২৭ কিলোমিটার। নদীটি ভারতের ত্রিপুরা পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে লাকসাম, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদী স্বর্ণযুগ পার করে এখন মৃত্যুর প্রহর গুণছে। “ডাকাতিয়া” নদীকে ঘিরেই রায়পুরের কৃষি ও কৃষিভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ। আজকে রায়পুর যে কারণে বিখ্যাত, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এত গুরুত্বপূর্ণ- তার প্রধানতম কারণ হচ্ছে ডাকাতিয়া নদী। এই নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল এশিয়ার সর্ব বৃহত্তম রায়পুর মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রতিবছর এখানে অবমুক্ত করা হত লক্ষ লক্ষ রেণু পোনা, যা মুক্ত জলাশয়ে মাছের চাহিদা পূরণ করত। সেই সাথে জীবিকার প্রধান অবলম্বন ছিল এ উপজেলার বিশাল জেলে পল্লির মানুষগুলোর। আজ তারা তাদের ঐতিহ্যের পেশা ছেড়ে দিয়ে বর্তমান প্রজন্মকে বিভিন্ন পেশায় অভ্যস্ত করছে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে। ডাকাতিয়ায় একসময়ে সেই সুদূর ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে পণ্য পরিবহন করা হত। ছিল যাত্রীবাহী লঞ্চঘাট, আর আজ ডাকাতিয়া শুধুই পৌরবাসীর বর্জ্যরে বাগাড়। হারিয়ে ফেলেছে তারস্রোতা, স্বচ্ছ পানির কল কল ধ্বনি। এখন আর শোনা যায় না মাঝি-মাল্লাদের ভাটিয়ারী, জারি-সারি গানের সুর। দেখা হয় না দাঁড় বেয়ে চলা রঙিন পাল তোলা নৌকা। নদী তীরের বিশুদ্ধ বাতাস আজ রিতিমতো দু:স্বপ্ন। দূর্গন্ধে আজ নাক চেপে হাঁটতে হয় নদীর পাড়ে। ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ডাকাতিয়া নদীর পানি। ইতিমধ্যে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখা, নদীকে দখল এবং দূষণমুক্ত রাখার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবসহ রায়পুরে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন করা হয়েছে। “ডাকাতিয়া সুরক্ষা আন্দোলন” সম্প্রতি ডাকাতিয়া নদী দখল ও দূষণমূক্ত করার লক্ষ্যে রায়পুর পৌর শহরে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন অংশগ্রহণ করে। তাদের দাবী ডাকাতিয়া নদীর দখল ও দূষণমুক্ত করার জন্য সরকারী-বেসরকারী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রভাবশালীদের হাত থেকে দখলমুক্ত করে ডাকাতিয়া নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে পারলে অর্থনৈতিক দিক থেকে রায়পুরে দৃশ্যপট পাল্টে যাবে বলে সুশিল সমাজের নেতৃবৃন্দ মনে করেন। দলমত নির্বিশেষে একযোগে কাজ করলে এবং রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো একমত হয়ে জনগণকে সচেতন ও দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে ডাকাতিয়া নদী দখল ও দূষণমুক্ত এবং নাব্যতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। নান্দনিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সকল ভেদাভেদ ভূলে গিয়ে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। রায়পুরের পরিবেশ সংরক্ষণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।