রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় বিজিবি মোতায়েন
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’র (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লে.কর্নেল ফয়জুর রহমান বাসস’কে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অন্যান্য বাহিনীর সাথে মাঠে থেকে দায়িত্ব পালন করবেন তারা। তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়া, নাশকতা ঠেকাতে রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাব এবং জিরো পয়েন্টসহ আশেপাশের সকল এলাকায় র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন র্যাব, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সদস্যরা শনিবার (২৭ মার্চ) সকাল থেকে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। একাধিক দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে তারা বিভিন্ন স্পটে অবস্থান নিয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অধীনে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের কোথায় কীভাবে অবস্থান নিতে হবে সে সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিতে দেখা যায়।
এসব এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় বাসে বাসে রিজার্ভ পুলিশ সদস্যদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এদিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটের সিঁড়িতে বেশ কিছুসংখ্যক মুসল্লিকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখা যায়। বায়তুল মোকাররম ও আশেপাশের এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বেল সাড়ে ১১টায় সরেজমিনে এসব এলাকা ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে। শুক্রবার (২৬ মার্চ) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর ঘিরে প্রতিবাদে নেমে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন ইসলামি দলগুলোর নেতাকর্মীরা। জুমার নামাজের পর প্রথমে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর সন্ধ্যায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার সড়ক অবরোধ করে রাখেন ওই এলাকার কুতুবখালী মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ (ডিএমপি) দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকতে বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিএমপির কন্ট্রোলরুম থেকে রাজধানীতে কর্মরত ৮টি বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি), অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ও সহকারী পুলিশ কমিশনারদের (এসি) সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, ডিএমপির থানাগুলোতে পুলিশ ফাঁড়ি ও বক্সে যেকোনো সময় হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য এসব স্থানে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি বাড়াতে হবে। এছাড়া যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে শুক্রবার দিবাগত রাতে ও শনিবার সকালে পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে।
পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া রাজধানীকে নিরাপদ রাখতে রাতে পুলিশের পেট্রোলিং বাড়ানোসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সজাগ থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শুক্রবার দিবাগত রাতে ডিএমপির কন্ট্রোলরুম থেকে তাদের নিজস্ব ওয়াকিটকিতে এই বার্তা দেয়া হয়। ডিএমপির সিনিয়র অফিসারদের মাঠে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই মেসেজ পাওয়ার পরপরই আমরা এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’
সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দফতর থেকে সারাদেশে কর্মরত এসপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একই ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোনো মহল যেন নাশকতার জন্য জমায়েত না হতে পারে সেজন্য পুলিশকে কঠোর অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের সব থানা এবং সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার নিরাপত্তা জোরদারেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘শুক্রবার দিবাগত রাতে আমরা পুলিশ সদর দফতর থেকে নির্দেশনা পেয়েছি। পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে আমরা যেকোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়ানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’ গতকাল শনিবার সকালে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ (ডিএমপি) সারা দেশে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকতে বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’