শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৫:০৫ অপরাহ্ন

বঙ্গবন্ধুর নামেই হবে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০২১

শুরুতে ছিল বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার। সেটা হতে চলেছে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার। এ বিষয়ে চীন সরকার ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট্রের অনুমতি পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলে দ্রুত এটি উদ্বোধনও করা হবে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, ছয় উদ্দেশ্যে সরকার রাজধানীর পূর্বাচলে এক্সিবিশন সেন্টারটি নির্মাণ করেছে। আপাতত ২০ একর জমির ওপর নির্মিত এক্সিবিশন সেন্টারটি গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে ঠিকাদার চাইনিজ স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন।

সেন্টারটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকারের অনুদান ৫২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সরকারের রয়েছে ২৩১ কোটি এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি অর্থায়ন করেছে ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এখানেই প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা।

জানা গেছে, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি এবং প্রকল্প কর্তৃপক্ষ আগামী ২৮ মার্চ এক্সিবিশন সেন্টারটি উদ্বোধন নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। তবে এও জানা গেছে ২৮ মার্চ এক্সিবিশন সেন্টারটির উদ্বোধন না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১০ দিনের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রীর সুবিধা অনুযায়ী সেন্টারটি উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার’ নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম জানিয়েছেন, চীন সরকার ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সম্মতি সাপেক্ষে নামকরণ চূড়ান্ত হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এটি উদ্বোধন হবে।

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত সেন্টারটির প্রায় পুরোটাই চীন সরকারের দেওয়া অনুদানে নির্মিত হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ রূপ চূড়ান্ত করতে আরও অবকাঠামোর প্রয়োজন রয়েছে। সেগুলো বাংলাদেশ সরকার ও ইপিবির অর্থায়নে হবে। তবে জমি সংক্রান্ত জটিলতা না কাটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

প্রকল্প পরচালক রেজাউল করিম আরও জানান, এখনকার অবকাঠামোটি ২০ একর জমিতে করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার জন্য আরও ১৭ একর জমির প্রয়োজন ছিল। সেটাও পাওয়া গেছে। তবে উচ্চ আদালতের কিছু বিষয় মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে- মোট ছয়টি উদ্দেশ্যে সরকার নির্মাণ করেছে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার।

এগুলো হচ্ছে- ১। বাংলাদেশের বাণিজ্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে দেশি-বিদেশি পণ্য উৎপাদনকারী ও ক্রেতাদের আন্তর্জাতিক মানের একটি কমন প্লাটফর্মে যোগাযোগের সুযোগ করে দেওয়া, ২। প্রতিযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করে পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি ও বৈচিত্র্য আনতে সহায়তা করা, ৩। দেশি-বিদেশি প্রতিযোগী উৎপাদকের পণ্যের মান ও মূল্য সম্পর্কে সরাসরি তুলনা করার সুযোগ করে দেওয়া, ৪। একই প্লাটফরমে সারাবছর পণ্যভিত্তিক মেলা ও সাধারণ বাণিজ্য মেলাসহ শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক বিভিন্ন প্রকার আয়োজনের সুযোগ সৃষ্টি করা, ৫। স্থানীয় পণ্যের গুণগত মান ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং ৬। আধুনিক কারিগরি সুযোগ বিশিষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ সেন্টার তৈরি করে বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা।

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মি. লি জিমিংয়ের কাছ থেকে এক্সিবিশন সেন্টারের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝে নিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, চীন বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়ীক অংশীদার। এখন বাংলাদেশের ৮ হাজার ২৫৬টি রফতানি পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিচ্ছে চীন। চীনে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, পাট পণ্য, চামড়াজাত পণ্য রফতানি বাড়ছে।

উল্লেখ্য, পূর্বাচল নতুন শহরে ২০ একর জমির ওপর ৩৩ হাজার বর্গমিটার ফ্লোর স্পেসের মধ্যে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে ২৪ হাজার ৩৭০ বর্গমিটার জায়গায়। এক্সিবিশন হলের আয়তন ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গমিটার। স্টল আছে ৮০০টি। দোতলা পার্কিং বিল্ডিংয়ে পার্কিং স্পেস ৭ হাজার ৯১২ বর্গমিটার। গাড়ি পার্কিং করা যাবে ৫০০টি। এ ছাড়া এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনে খোলা জায়গায় আরও এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের সুযোগ রয়েছে। এক্সিবিশন সেন্টারে ৪৭৩ আসন বিশিষ্ট একটি মাল্টি ফাংশনাল হল, ৫০ আসন বিশিষ্ট একটি কনফারেন্স কক্ষ, ৬টি নেগোশিয়েশন মিটিং রুম, ৫০০ আসন বিশিষ্ট রেস্তোরাঁ, শিশুদের খেলার স্পেস, নামাজের রুম, ২টি অফিস রুম, মেডিক্যাল বুথ, গেস্ট রুম, ১৩৯টি টয়লেট, বিল্ট-ইন পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম, নিজস্ব ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, স্টোর রুম, সিএটিভি কন্ট্রোল রুম, অটোমেটেড সেন্ট্রাল এসি সিস্টেম, ইনবিল্ট ইন্টারনেট, ওয়াইফাই, আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, আলাদা রেজিস্ট্রেশন হল, আধুনিক ফোয়ারা, ইন-বিল্ট পতাকা স্ট্যান্ড এবং ইলেকট্রনিক প্রবেশপথ রয়েছে।
সেন্টারটির নির্মাণকাজ শুরু ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর। কাজ শেষ হয় ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর।

জানা গেছে, ঢাকার শেরেবাংলা নগরের মেলার অস্থায়ী মাঠ থেকে পূর্বাচলে নির্মিত সেন্টারটির দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। প্রদর্শনী কেন্দ্রে দৃষ্টিনন্দন ঢেউ খেলানো ছাদের নিচে দুই লাখ ৬৯ হাজার বর্গফুটের দুটি পৃথক প্রদর্শনী হল রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রে বছরে একবার মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার বাইরেও সারা বছর সোর্সিং ও পণ্য প্রদর্শনী হবে। সে জন্য পাঁচ তারকা হোটেল, নতুন প্রদর্শনী কেন্দ্র, ভূগর্ভস্থ পার্কিং ইত্যাদিও করা হবে। এসব স্থাপনার জন্যই ইতোমধ্যে বাড়তি ১৭ একর জমি পাওয়া গেছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com