‘গত রোববার বিকালে ক্ষ্যাতে গিয়া দেখছি ধান সব সবুজ। সোমবার সকালে ধান ক্ষ্যাতে গিয়া দেখি সব ধান সাদা। ৬বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করছিলাম। আধা ঘন্টার গরম বাতাসে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি এখন কি করবো, ছাওয়াল-মাইয়া নিয়া কি খাইয়া বাচঁপো, বুঝে উঠতে পারছিনা’-কান্না জড়িত কন্ঠে এ ভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউয়িনের ভেন্নাবাড়ি গ্রামের কৃষক সুবরণ বিশ^াস। কৃষক সুবরণ বিশ্বাসের মতো কান্দি ইউনিয়নের তালপুকুরিয়া গ্রামের কিশোর বাড়ৈ, পিঞ্জুরী ইউনিয়নের পূর্ণবতী গ্রামের ওলিউল্লাহ হাওলাদার, সরোয়ার হাওলাদার তাদের ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। গত রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নসহ কয়েকটি ইউনিয়নের উপর দিয়ে গরম হাওয়া বয়ে যায়। আধা ঘন্টা ধরে চলা এ গরম হাওয়ায় উপজেলার কান্দি, পিঞ্জুরী, হিরণ ও আমতলী ইউনিয়নের প্রায় ৬ থেকে ৭ শত হেক্টর জমির বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে। নষ্ট হয়ে যাওয়া ধানের আনুমানিক মূল্যে প্রায় ১০ কোটি টাকা। তবে ক্ষতির পরিমান আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিসার নিটুল রায়। পূর্ণবর্তী গ্রামের কৃষক ওলিউল্লাহ হাওলাদার বলেন, আমি এবার ১৭ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। গতকাল বিকেলে অধিকাংশ জমিই ঘুরে দেখেছি। সব জমির ধান ভালো ছিল। আজ সকালে ক্ষেতে গিয়ে দেখি সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু আমার জমির ধানই নয়, পুরো পূর্ণবর্তী গ্রামের দক্ষিণ পাশের সমস্ত বিলের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পরিবার গুলোতে বইছে কান্নার রোল। আমরা এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা। আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হান্নান শেখ বলেন, আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আমার সাথে প্রায় অর্ধশত কৃষকের কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, আমতলী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া বিলের তাদের জমির ধান এক রাতেই নষ্ট হয়ে গেছে। এসব কৃষক আগামী বছর কি খেয়ে বাচঁবে তা নিয়ে তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। অধিকাংশ কৃষকেরই কৃষি লোন রয়েছে। আমি চাইবো সরকার যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সব কৃষকের পাশে দাঁড়ান। উপজেলা কৃষি অফিসার নিটুল রায় বলেন, আজ সকালে আমরা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়নে এ অবস্থার কথা শুনতে পাই। সাথে সাথে আমি আমাদের অফিসারদের সাথে নিয়ে ক্ষেতগুলো দেখতে যাই। আমার ধারণা গরম বাতাসের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পরাগায়নটা শুকিয়ে গেছে। যে কারণে ধান গাছগুলো ঠিক আছে। তবে শিষগুলো শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে। প্রাথমিক ভাবে আমরা প্রায় ৬ থেকে ৭শত হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। এতে কৃষকদের প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে। তবে ক্ষতির পরিমান আরও বাড়তে পারে। সে বিষয়ে আমরা মাঠে কাজ করছি। কৃষি লোন মওকুবসহ কৃষকরা যাতে এ ক্ষতি পুসিয়ে উঠতে পারে সে বিষয়ে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।