করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রকোপ বিস্তার রোধে গত বছর মার্চ মাস থেকে বন্ধ আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অসমাপ্ত পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেশ কয়েকটি বিভাগে অসমাপ্ত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তবে বাকি সেশনগুলোর আটকে থাকা পরীক্ষা নিয়ে সেশনজটের শঙ্কায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলে সেশন জটকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিতে হয়। মহামারি করোনার কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় একটু জট পড়বে-এটি পূর্ব-অনুমেয়; কিন্তু মহামারি পূর্ববর্তী সময়েও উচ্চশিক্ষায় সেশনজট নিয়ে শিক্ষার্থীদের সরব হয়ে ওঠার ঘটনা মাঝেমধ্যেই গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের প্রতিষ্ঠান সেশনজটমুক্ত বলে দাবি করলেও, বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো না কোনো বিভাগের ছাত্ররা সেশনজট নামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে আছেন।
শিক্ষাব্যবস্থায় সেশনজট শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। সেশন জটের কারণে বাংলাদেশের প্রচলিত চাকরি প্রতিযোগিতায় জটে পড়া শিক্ষার্থীরা অনেকটা পিছিয়ে পড়ে। স্নাতক, স্নাতকোত্তর শেষ করতে লেগে যায় লম্বা সময়। অর্থাত্ স্নাতক শেষ করতে জটে পড়ে শিক্ষার্থীদের এক-দুই বছর বা তারও অধিক সময় অন্যদের থেকে বেশি লাগে। ফলে একদিকে যেমন তাদের চাকরি প্রত্যাশায় বয়সের ব নায় পড়তে হয়, তেমনি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাও দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। আবার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থ উপার্জনের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে ক্রমাগত চাপ এবং সন্তানের প্রতি পরিবারের আস্থাহীনতা প্রকট হতে থাকে, যা একজন শিক্ষার্থীকে গভীর হতাশায় নিমজ্জিত করে।
ফার্মেসী বিভাগের( ২০১৭-২০১৮)শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শারমিন তিথি বলেন, গত বছর মার্চ মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ।এই গত এক বছর দুই সেমিস্টারের ক্লাস অনলাইনে হলেও কোন পরীক্ষা হয়নি। ২৪শে মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা বলা হলেও করোনা পরিস্থিতির যেভাবে অবনতি হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছেনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার মত অবস্থা তখনও হবে।ইতোমধ্যে তিনটা সেমিস্টারের সময় প্রায় শেষ হতে চলছে। সেমিস্টার সিস্টেমে অনেকগুলো পরীক্ষা থাকে,ল্যাব থাকে। সেগুলো শেষ করতে করতে দেখা যাবে আমরা দু’বছর সেশনজটের শিকার হয়ে গেছি। বয়স বেড়েই চলেছে কিন্তু যোগ্যতার মাপকাঠিতে পিছিয়ে যাচ্ছি।প্রাইভেট ভার্সিটিগুলোতে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও,পাবলিক ভার্সিটিগুলোকে দেওয়া হয়নি।একই দেশে ইন্সটিটিউট ভিন্ন হওয়ার কারণে মূল্যায়ন ভিন্ন হওয়াটা যেমন বৈষম্যমূলক আচরণ তেমনি দুঃখজনকও।
সামগ্রিক করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাই অনলাইনে পরীক্ষা দিতে অথবা অটোপ্রমোশন, যাতে আমরা পরবর্তী ইয়ারের ক্লাস শুরু করতে পারি এবং আমাদের জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটো বছর নষ্ট না হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষামন্ত্রীর নিকট থেকে শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপযুক্ত একটি সিদ্ধান্ত আশা করছি।
জবি শিক্ষার্থী আহনাফ বলেন, অটোপাশ দেওয়া সম্ভব না হলেও যদি মিড সেমিস্টার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাগুলো অনলাইনে নিয়ে কিছুটা আগানো যায়, সেটাও অনেক বড় অবদান রাখবে করোনা পরবর্তী সেশনজট মোকাবেলায়। একই শিক্ষাবর্ষের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে যায় বা সার্টিফিকেট নিয়ে বেরিয়ে যায় তাহলে প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষাগুলোতে এত বড় বৈষম্য কিভাবে সামাল দেওয়া যাবে? অচীরেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিৎ শিক্ষার্থীদের আসন্ন ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে হলেও সময়পোযোগী ও বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাতে আমরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত না হয় বা একদম পিছিয়ে না পড়ি। জবি শিক্ষার্থী আর্নব বলেন, গত একটি বছর ধরে গ্রামের বাড়িতে বসে আছি ৷ অনার্স কোর্সের সময়সীমা যে জায়গায় চার বছর, সেই যায়গায় ইতিমধ্যে এক বছরের জটে পরে আছি ৷ আর সামনে অর্থাৎ ভবিষ্যতে কবে নাগাদ ভার্সিটি খুলবে কে জানে! বাবা প্রায়ই জিজ্ঞাসা করে, কবে ভার্সিটি খুলবে, কবে পরীক্ষা নিবে?! এত দিন বলে এসেছি শীতের পর পরই ৷ এখন কিছু বলতে পারি না ৷ এটা ওটা বলে কথা ঘুরিেেয় দেই ৷ বাবাও এখন বুঝতে পারে যে, ভার্সিটি খুলার কোন ঠিক ঠিকানা নাই! বাবার চোখ দুটির দিকে তাকালে বুঝতে পারি, ছেলের কাছে অল্প একটু ভরসা পেতে চাচ্ছে ৷ যেটা আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের পাবলিকে পড়া ছাত্রের সকল বাবা-মা ই পেতে চায় ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থী ও ( ২০১৭-২০১৮)শিক্ষাবর্ষের ক্লাস প্রতিনিধি নাদিয়া হিয়া বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটা সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসা জরুরি। আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।