শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২০ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্বকে আরো এগিয়ে আসতে হবে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২১

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জন কেরি

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে আরো এক ধাপ এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। তিনি বলেন, মিয়ানমার বর্তমান বিশ্বের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আর রোহিঙ্গা সমস্যা একা বাংলাদেশের নয়। গত শুক্রবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন কেরি।
এক সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশে আসেন কেরি। বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি ঢাকা আসেন। আর বিকাল ৫টা ৪৮ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে চলে যান। মূলত ২২ ও ২৩ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের লিডার্স সামিট অন ক্লাইমেট সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে তিনি ঢাকা আসেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের প্রেসিডেন্সির বিশেষ দূত আবুল কালাম আজাদ, সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। জলবায়ু নীতি, বিনিয়োগ, উদ্ভাবন এবং টেকসই অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে সমৃদ্ধি বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়গুলো নিয়ে জন কেরির সফরে বৈঠকগুলোতে আলোচনা করা হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা হয়েছে এবং মিয়ানমারের জনগণের সঙ্গে এখন যা হচ্ছে তা বিশ্বের জন্য বর্তমানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। রোহিঙ্গাদের জন্য মহত্ত্ব দেখিয়েছে, তার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন বাংলাদেশের কাছে কৃতজ্ঞ। আর এটি বেশ ব্যয়বহুল। বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে আরো এক ধাপ এগিয়ে আসতে হবে। এটি বাংলাদেশের একার দায়িত্ব নয়।
তিনি বলেন, মিয়ানমারকে বর্তমানের চেয়ে ভিন্ন পথে দেখতে আমরা বেশ চেষ্টা করেছি। আমাদের এ নিয়ে উচ্চ আশা ছিল। আমরা প্রক্রিয়াকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে অং সান সু চির সঙ্গেও চেষ্টা করেছি। আমি নিজে সেখানে সফর করেছি। তাদের জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে আমরা চেষ্টা করেছি। তবে মিয়ানমার এগুলোকে সম্মান জানায়নি। আমরা এ বিষয়ে বাংলাদেশের নৈরাশ্যটা জানি। মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার প্রশাসন তাদের ক্ষমতার মধ্যে সব চেষ্টা করছেন। আর এটি করার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমসা মোকাবেলায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উন্নত দেশগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে সহযোগিতা করার পরিকল্পনা কী? এ নিয়ে জন কেরি বলেন, আমাদের দ্রুত নতুন অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যেতে হবে বলে বিশ্বাস করি। আর এর জন্য আমরা ইউএসএআইডির মাধ্যমে এখনই ১৫ মিলিয়ন ডলারের তহবিলে প্রতিশ্রুতি করছি, যাতে আমরা এখনই নতুন ব্যবস্থার দিকে যেতে পারি। সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে বরাদ্দ বাতিল করেছিলেন, তা আবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রেসিডেন্ট বাইডেন আরো ১০০ মিলিয়ন নতুন করে বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর এটা হচ্ছে শুরু। এর বাইরে আমাদের সবার এ নিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিশ্বাস করেন, বিনিয়োগ করাটা হলো প্রথম পদক্ষেপ। করোনা পরিস্থিতিতে নতুন প্রযুক্তির বিনিময় নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা কভিডকে সবাই একত্রে পরাস্ত করব। এ মহামারী ও জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সবাইকে একত্রে মোকাবেলা করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। কোনো দেশ যদি আজকে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনে, তবুও তার জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বহুপক্ষীয় মনোভাব নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।
জন কেরির সফলতা তুলে ধরে প্রারম্ভিক বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত হিসেবে জন কেরিকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ু তহবিল সংগ্রহের জন্য অনুরোধ করেছি। এর মধ্যের ৫০ শতাংশ প্রশমন ও বাকি ৫০ শতাংশ অভিযোজনের জন্য ব্যয় করা হবে। ভালনারেবল টোয়েন্টি গ্রুপ অব ফাইন্যান্স মিনিস্টার্সের সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ জন কেরির কাছে সহায়তা চেয়েছি। আমরা নদীভাঙন নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রতি বছর আমাদের হাজারো মানুষ এর দ্বারা গৃহহীন হচ্ছে। তাদের আমাদের পুনর্বাসন করতে হয়। এ নদীভাঙনের কারণ আমরা নই। এতে আমরা মার্কিন সহায়তা চেয়েছি।
তিনি বলেন, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি হিসেবে আমরা মার্কিন সহায়তা চেয়েছি। ১১ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের বন এবং পরিবেশ ধ্বংস করছে। আমরা আশা করি, এসব রোহিঙ্গার নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে মার্কিন তৎপরতা থাকবে। আমরা মার্কিন ও বাংলাদেশের জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজনের বিষয়ে একত্রে কাজ করতে আলোচনা করেছি। এতে সৌরবিদ্যুৎ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তি বিনিময় এবং জলবায়ু পরিবর্তনে অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা দুই দেশই একত্রে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এ বিষয়গুলোতে কাজ করতে ঐকমত্য হয়েছি।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অনুরোধে আমি বাংলাদেশে এসেছি। কারণ তার নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবারো প্যারিস চুক্তিতে ফেরত গেছে। কোনো একক দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট সমাধান করতে পারবে না। আর এ নিয়ে কোনো দেশের সন্দেহ নেই যে, এ নিয়ে সংকট রয়েছে। আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে গরম দিন, সপ্তাহ, মাস ও বছরের অভিজ্ঞতা পেয়েছি। সেই সঙ্গে সবচেয়ে গরম দশকের অভিজ্ঞতাও পেয়েছি। এর কারণে বিশ্বে যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, আমরা তারও অভিজ্ঞতা পেয়েছি, যা মানবজীবনে সংকটের কারণ হচ্ছে। আমরা গবেষকদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি যে, আমাদের সবাইকে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com