কঠোর লকডাউন আসছে ১৪ এপ্রিল থেকে। জরুরি সেবা ছাড়া বাকি সবই বন্ধ থাকবে এ সময়। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এ বিষয়ে রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলেও জানান তিনি। তথাপি কঠোর লকডাউনেও গার্মেন্টস খোলা রাখার দাবি জানিয়েছে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। বিজিএমইএ’র সদ্য নির্বাচিত সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, তিন কারণে গার্মেন্টসগুলোকে লকডাউনের আওতার বাইরে রাখা জরুরি। প্রথমত, গত বছর করোনার প্রথম ঢেউয়ে গার্মেন্ট শ্রমিকরা ছিল তুলনামূলক নিরাপদ। মালিকরা করোনায় আক্রান্ত হলেও শ্রমিকরা হয়নি। এই মুহূর্তে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হলে শ্রমিকরা সব গ্রামে ফিরতে শুরু করবে। এতে সংক্রমণ আরও ছড়াবে।
দ্বিতীয়ত, আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন দেশে লকডাউন দিলেও কোনও দেশই এখন পর্যন্ত গার্মেন্টস বন্ধ করেনি।
তৃতীয়ত, আমরা এখন ক্রয়-আদেশ পাচ্ছি। বেশ কিছু অর্ডার জমে আছে। শিপমেন্ট প্রসেস করা হয়েছে। তৈরি পোশাক ডেলিভারি দেওয়ার সময় এসে যাচ্ছে। এখন কারখানা বন্ধ হলে সব ভেস্তে যাবে। সামনে রোজা ও ঈদ। শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিতে হবে। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে সেখানেও সমস্যা হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে কারখানা বন্ধ হওয়ায় টিকে থাকার লড়াইয়ে গ্রামে ছুটে গিয়েছিলেন হাজার হাজার গার্মেন্টকর্মী। শহরে থাকলেই খরচ বাড়বে। এ কারণে গণপরিবহন থাকার পরও গ্রামে ছুটে যান তারা। এরমধ্যে খবর আসে ৫ এপ্রিল কারখানা খুলবে, বেতনও দেওয়া হবে। ওই অবস্থায় ট্রাকে গাদাগাদি করে ও পায়ে হেঁটে হুড়মুড় করে কর্মস্থলে ফিরে আসেন সবাই। কিন্তু ঢাকায় পৌঁছে জানতে পারেন ছুটি ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ওই সময় হাজার হাজার শ্রমিক ফের অনিশ্চয়তায় পড়েন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ)-এর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা মেনে নিতে বাধ্য। তবে গতবারের অভিজ্ঞতায় আমরা মনে করি, শিল্পকারখানা বন্ধ করে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এতে শ্রমিকদের ভোগান্তি বাড়বে। অর্থনীতির ভয়ানক ক্ষতি হবে। শিল্পকারখানা চালু রেখেই লকডাউন দেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, অতীতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালু রেখেছিলাম। সেখানে করোনার সংক্রমণ ছিল না বললেই চলে। তাই এবারও গার্মেন্ট খাতকে যেন লকডাউনের বাইরে রাখা হয়।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আগেরবারের লকডাউনে রফতানি খাত আওতামুক্ত ছিল। আমি বিশ্বাস করি এবারও সরকার সেটাই করবে। এক বা দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকলেই বড় সংকটে পড়বে এ খাত। আগস্ট পর্যন্ত আমাদের অর্ডার আসবে। এই কয়েক মাস চালু রাখতেই হবে।’ এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কমানোর জন্য পরিপূর্ণভাবে অন্তত দুই সপ্তাহের লকডাউন সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। শুক্রবার (৯ এপ্রিল) কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। শুক্রবার (৯ এপ্রিল) সকালে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন।