রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
খেলাধুলার মাধ্যমে মাদককে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে-মাফরুজা সুলতানা মাইলস্টোন কলেজে নবম শ্রেণির বালিকাদের অংশগ্রহণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ  ‘বিবেচনায় রয়েছে’: বদিউল আলম ১৬ বছর বঞ্চিতদের এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বইমেলয় স্টল বরাদ্দের দাবি ইসির অগাধ ক্ষমতা থাকলেও প্রয়োগে সমস্যা ছিল: বদিউল আলম আমাদের শিক্ষা কর্মসংস্থান খোঁজার মানুষ তৈরি করছে, যা ত্রুটিপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা সেন্টমার্টিন: ‘স্থানীয়দের জীবিকা বনাম পরিবেশ রক্ষা’ আ. লীগ-জাপা নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে কফিন মিছিল ১৫ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে সময় লাগবে: মির্জা ফখরুল

চিত্রা নদী গতি হারিয়ে খালে পরিণত

হুমায়ুন কবির কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের এক সময় চিত্রা নদী নিয়ে গর্ব করতো, আবার কেউ চিত্রা নদীর রুপে মুগ্ধ হয়ে কন্যা সন্তানের নাম রাখতো চিত্রা রাণী, ছেলে সন্তানের নাম রাখতো চিত্ত কুমার, কেউবা আবার তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম রাখতো চিত্রা দিয়ে, চিত্রা ক্লিনিক, চিত্রা ডায়াগণষ্টিক সেন্টার, চিত্রা স, মিল, চিত্রা ইলেকট্রনিক্স, চিত্রা ভবনÑএ রকম বহু প্রতিষ্ঠানের নাম করণ করা হয়েছে। কালীগঞ্জে এক সময় নদীর খুব ¯্রােত ছিল গতি বেগ ছিল প্রবল, আজ চিত্রা নদী তার গতিপথ হারিয়ে সরু খালের আকার ধারণ করেছে। এক সময় সওদাগারদের এই অঞ্চলের ব্যবসা বানিজ্যের জন্য প্রান কেন্দ্র ছিল এই চিত্রা নদী। নদীর বুকে চাষাবাদ করা হচ্ছে। বর্তমান মৌসুমে ব্যাপক হারে ইরি আবাদ হয়েছে নদীর বুকে। নদীর পলিতে ফলন ভাল হওয়ায় নদীর মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে স্যালো ডিপটিউবওয়েল। শুধু মাত্র বর্ষাকালের ৩ মাস পানি থাকে। পানি শুকিয়ে গেলে নদী পাড়ের কৃষকরা ধানসহ অন্যান্য আবাদ করে থাকে। কালীগঞ্জে চিত্রা নদীর জায়গা দখল করে পাকা ভবন নির্মাণ করে ব্যাপক প্রতিযোগিতা করেছে। কালীগঞ্জ শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে চিত্রা নদী। এই নদীতে শহরের মধ্যে রয়েছে একটি সেতু। পুরাতন ব্রিজ হিসেবে সবাই এই সেতুটিকে চেনেন। এই সেতুর দুই ধারে নদীর জায়গা দখল করে পাকা দোকান তৈরি করেছেন একাধিক দখলকারী। দীর্ঘ সময়ে এই দখলের পরিমাণ বেড়েছে। দখলের কারণে নদী সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। সড়ক চওড়া করতে প্রশাসনের নির্দেশে চিত্রা নদীর ৪ ফুট জায়গা দখল ছেড়ে দেবার নির্দেশ থাকলে ও সে নির্দেশ মানেনি কেউ। দখলকারীরা নদীর মধ্যে আরো ১৫ থেকে ৩০ ফুট নদীর জমি দখল করে পাকা ভবন নির্মান করেছে। কালীগঞ্জ শহরের পুরাতন ব্রীজ থেকে হাইওয়ে মহাসড়কের পাশ পর্যন্ত নদীর ভেতর থেকে পিলার উঠিয়ে তার উপর নির্মাণ করা রয়েছে এই পাকা ভবন। সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে দুই পাশে নদীর জায়গা দখল করে যারা ভবন নির্মাণ করেছেন তাদের ভবন গুলো সামনে থেকে ফাঁকা করে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ পেয়ে ব্যবসায়ীরা ৩ থেকে ৪ ফুট ভেঙে ফাঁকা করে নিয়েছিল। যার বেশির ভাগই ছিল দোকানের সামনের চালা ও সাইনবোর্ড। আর এই ফাঁকা করতে গিয়ে তারা পেছনে নতুন করে দখল করছে ১৫ থেকে ৩০ ফুট নদীর জায়গা। অনেকে পাকা ভবন করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হাকিয়েছে, কেউ ভাড়া দিয়ে টাকা গুনছে, কেউ আলিশান ভবন করে বসবাস করছে। চিত্রা নদী কালের ক্রমে তার চিরচেনা রুপ হারিয়ে নিজেই নিজের বোঝা হয়ে পড়ে রয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে নদী পলি জমে ভরাট হয়ে পানি ধারন ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং নদীর দু,পাড় মাটি ভরাট করে ভূমি দস্যুরা ভূমি দখল করে নদীর দু,প্রান্তে গড়ে তুলেছে বসতি ঘর। আর কিছু দিন পর দেখা যাবে নদীর মাঝ খানে গড়ে উঠবে ৪/৫ তলা বাড়ী। নদীকে রক্ষা করতে হলে নদীর দু,পাশে উচ্ছেদ অভিযান ও খাল খনন। তা নাহলে আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম হয়তো বিশ্বাস করবে না যে কোন এক সময় এখানে চিত্রা নদী ছিল। নদীতে পুরো শহরের আবর্জনা ফেলে নদী ভরাট এবং দূগন্ধ পুরো এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ে। এব্যপারে যাদের দেখাশোনা করার কথা তারা অদৃশ্য কারণে রয়েছে চুপ করে। কালীগঞ্জ শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া একমাত্র নদীটিকে বাচাতে এবং এর দু,পাড়ের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে এখনই নদীটিকে বাচানো একান্ত দরকার। নারিকেল বাড়িয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু জানান, নদীতে পানি না থাকার কারণে নদী দখল হচ্ছে। পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা হলে এই প্রবণতা বন্ধ হবে। তিনি আরো জানান, নাব্যতা হারানোর ফলে এই অঞ্চলের বিল পুকুর ও ৮৫ ভাগ নলকুপে পানি থাকে না। মিঠাপানির মাছও এখন পাওয়া যায় না। নানামুখি সংকট তৈরী হচ্ছে নদীর নব্যতা হারানোর কারণে। জীব বৈচিত্র্য বাঁচাতে নদীগুলো আশু খননসহ দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করতে হবে বলে তিনি মনে করেন। চলাচল করত বড় বড় নৌকা ও জাহাজ। কলকাতার সঙ্গে রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র বিন্দু ছিল এই অঞ্চলের জলপথ। কিন্তু কালের বিবর্তনে পাল্টে গেছে সে চিত্র, এখন আর নদীতে চলে না মালবাহী নৌকা। বর্ষা মৌসুমে কিছুটা পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুম শুরুতেই শুকিয়ে যায় এসব নদ-নদী। ফলে একদিকে এখানকার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে, অন্যদিকে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় হাজার হাজার নলকূপে পানি উঠছে না। ফলে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এছাড়া এক সময়ের প্রবাহমান নদীর বুকে স্থানীয়রা এখন যে যার মত দখল করে চাষ করছে। এক শ্রেনীর প্রভাবশালী মহল প্রতিনিয়তই নদী পাড়ে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে সংকুচিত করে ফেলছে নদীর প্রশÍস্ততা। এখানেই শেষ না, ময়লা-আবর্জনা ফেলে দূষিত করছে নদীর পানি। এতে জীব-বৈচিত্র্য যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তেমনি হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। শহরের মধ্যখান দিয়ে বয়ে যাওয়া চিত্রা নদী। কিন্তু খননের অভাবে অধিকাংশ জায়গা শুকিয়ে গেছে, কোথাও কিছুটা পানি থাকলেও দু-ধার দখলে অর্ধেকেরও কমে নেমে এসেছে প্রশস্ততা। শুকিয়ে যাওয়া নদীর দু-ধার দখল করে স্থানীয়রা ধানের চাষ করেছে। অন্যদিকে নদীপাড়ে অবাধে বেড়ে ওঠা ঘাস ব্যবহৃত হচ্ছে গো-খাদ্য হিসেবে। চিত্রা নদীর কালীগঞ্জ উপজেলার মধূগঞ্জ বাজার এলাকা, ১৯৯৩-১৯৯৪ অর্থ বছরের পর খনন করা হয়নি বিদ্যমান চিত্র নদীর কোনো অংশ। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে চিত্রা নদীটি শুকিয়ে যাবার কারনে ধানের চাষ, মাঝে মাঝে কুপ কেটে মাছের চাষ করে দখল করে রেখেছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com