বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে কর্মসংস্থান রয়েছে ৬৬৮ জন মানুষের। চলতি লকডাউনে দেশের প্রায় সব কিছু বন্ধ থাকলেও, খোলা রয়েছে হিলি পানামা পোর্ট লিংকের সকল কার্যক্রম। হিলি পানামা পোর্ট লিংক ২০০৭ সালের ২৬ নভেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর তখন থেকে চলমান রয়েছে এই বন্দর ভারত থেকে আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম। এই পোর্টকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে হাজার হাজার মানুষ। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় রাত পর্যন্ত ভারত থেকে বিভিন্ন প্রকার পণ্য আমদানি। কর্ম ব্যস্ততায় মেতে উঠে পোর্টে কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তা এবং হিলি কাস্টমসে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। প্রতিদিন ২০০ এর অধিক পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাক প্রবেশ করে এই বন্দরে। আবার দেশের বিভিন্ন স্থান আসা প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ ট্রাক লোড হয়ে ছেড়ে যায়। হিলি পানামা পোর্ট লিংকের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, এই পোর্টে কার্ডধারী প্রায় ৫০০ জন লেবার-শ্রমিক রয়েছে। যারা পোর্টের সকল অভ্যন্তরীণ আনলোড-লোডের কাজ করে থাকে। পোর্ট নিরাপত্তার জন্য রয়েছে ৫০ জন নিরাপত্তা বাহিনী। তারা প্রতিনিয়ত ২৪ ঘন্টা পোর্টকে নিরাপত্তা দিয়ে আসছে।পোর্ট পরিচানার জন্য রয়েছে প্রায় ৯০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী। যারা পোর্টের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে। এদিকে হিলি কাস্টমস সুত্রে জানা যায়, কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার সহ ৫ জন রাজস্ব কর্মকর্তা, ৯ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, ৩ জন কম্পিউটার অপারেটর, ২ জন উপ-পরিদর্শক, ৮ জন কাস্টমস সিপাই ও ১ জন অফিস সহায়ক। এসব কাস্টমস কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এই পোর্ট থেকে বছরে কয়েক’শ কোটি টাকা রাজস্ব সরকারকে তুলে দেন। পোর্ট থাকার কারণে দেশের সর্বস্তরের মানুষ এক নামে চিনে এবং জানে এই হিলি স্থলবন্দরকে। এই বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে শতাধিক কর্মস্থল। বন্দরের বিভিন্ন স্থানে আছে আমদানি-রপ্তানি কারকদের অফিস এবং গুদাম। যেগুদাম গুলোতে কাজ করে সংসার চালায় শতশত লেবার। শুধু তাই নই, ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট এবং স্থানীয় রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা, অটোবাইক চালকরাও এই পোর্টকে ঘিরে উপার্জন করে। হিলি পানামা পোর্টের কারণে সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক সহ বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা-উপশাখা স্থাপন হয়েছে। পানামা পোর্টের একজন শ্রমিক ফিরোজ কবির বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এই পোর্টে লেবারের কাজ করে আসছি। পোর্টে কাজ করি বলে আমার কোন অভাব হয় না। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে খুব ভাল আছি। লেবার আলম হোসেন বলেন, সকালে আসি আর রাত ৯ টায় বাড়িতে যায়। সারাদিন ভারতীয় ট্রাক আনলোড করি এবং দেশি ট্রাকগুলো লোড করে দেয়। তা থেকে আমরা সবাই ভাল চলি। মজিবর রহমান একজন শ্রমিক বলেন, আমাদের পোর্টের মালিক উনি অনেক ভাল মানুষ। গতবছর করোনার সময় এই পোর্ট বন্ধ ছিলো, আমাদের চলার কোনই উপায় ছিলো না। পোর্ট মালিক আমাদের চলার মতো চাল ডাল সহ সব খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন এবং নগদ টাকাও দিয়েছেন। হিলি পানামা পোর্টের শ্রমিক প্রধান গোলাম মোর্শেদ বলেন, পোর্টে প্রায় ৩০ টি শ্রমিক ইউনিট আছে, তাতে প্রায় কার্ডধারী ৫০০ শ্রমিক কাজ করে। বর্তমান করোনার কারণে সকল স্বাস্থ্য বিধি ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে শ্রমিকরা কাজ করছেন। প্রতিদিন প্রতিটি শ্রমিক প্রায় সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা উপার্জন করে। হিলি পানামা পোর্ট লিংকের গণসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন প্রতাব মল্লিক বলেন, ২০০৬ সালে অনন্ত কুমার চক্রবর্তী নেপাল, পানামা পোর্ট তৈরি করেন। তার অন্তরভুক্ত প্রায় ৬৪০ জন আমরা পোর্টে কাজ করে যাচ্ছি। গত করোনায় পোর্ট বন্ধকালীন তিনি ৫০০ জন শ্রমিককে চাল,ডাল, লবণ, তেলসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী এবং নগদ ৫০০ টাকা বিতরণ করেন তিনি। এছাড়াও নিরাপত্তা বাহিনী ৫০ জন সহ আমরা ৯০ জন, মোট ১৪০ জনকে করোনাকালীন মাসিক বেতন দিয়ে দিয়েছিলেন। হিলি কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার সাইদুল আলম বলেন, এই কাস্টমস অফিসে আমিসহ ২৮ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্মরত আছি। আমরা সকল প্রকার অনিয়ম ও হয়রানি বন্ধ ও দ্রুততর সময়ে পণ্য চালান খালাস করছি। বন্দরের সকল কার্যক্রমের ব্যাপারে কঠোর নজরদারি এবং ন্যায়সঙ্গত সমস্যার ব্যপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত ও সমাধান দিচ্ছি। এতে করে ব্যবসায়ীরা এ বন্দর দিয়ে আমদানি- রপ্তানি প্রসারে আরো উৎসাহিত হচ্ছেন। যার ফলশ্রুতিতে বিগত বছরের সমান পন্য বাহী ট্রাক আমদানি হওয়া সত্বেও রাজস্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজস্ব প্রবৃদ্ধির এই ধারাকে অব্যাহত রাখার ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট আছি। তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবি আর) বেঁধে দেওয়া ২৩১ কোটি লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৯ মাস ২২ দিনে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৩২৮ কোটি টাকা।