ঈদের কেনাকাটায় সতর্ক না হলে পরিবারের জন্য মৃত্যু কিনে আনার মতো হবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম নগর ও বিভাগীয় নেতারা। তারা বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ যখন ক্রমাগত বাড়ছে, সরকার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শে দু সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করলেও ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে গত ২৫ এপ্রিল থেকে শপিংমল ও দোকানপাট খুলে দেবার অনুমতি প্রদান করে। ব্যবসায়ীরা মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শপিংমল খোলা ও দোকানপাট চালু করলেও প্রথমদিনই তাদের সেই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন নেই। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের জীবিকা বাঁচানোর জন্য রমজানে একমাস ব্যবসা করবো, পুরো বছর বসে থাকবো-এ শ্লোগানকে সফল করতে ক্রেতারা যদি হুমড়ি খেয়ে ঈদের বাজার করতে মৃত্যুপুরী শপিংমল ও দোকানে ভিড় করেন তাহলে আপনি ও আপনার পরিবারের জন্য করোনা কিনে আনার মতো বিপর্যয় হবে।
গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ও ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান এই সব মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতারা বলেন, ‘করোনা যেহেতু ছোঁয়াছে এবং সংক্রমণ বাড়ার উৎসগুলোর মধ্যে গণপরিবহন, শপিংমল ও মসজিদসহ জনসমাগমকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেহেতু নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে বাঁচার জন্য এ সমস্ত ঘটনা এড়িয়ে চলার বিকল্প নেই। ব্যবসায়ীদের জীবিকা বাঁচানোর জন্য আপনি যদি বেঁচে থাকেন তাহলে পরবর্তীতে সেটা করতে পারবেন। কিন্তু জেনে শুনে নিজ ও পরিবারের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনা বুদ্ধিমানের পরিচয় হবে না।
তারা বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে করোনা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অক্সিজেনের জন্য পুরো ভারত জুড়ে হাহাকার এবং মৃত্যুর মিছিল। সোশ্যাল মিডিয়া ও টিভি, পত্র-পত্রিকার কল্যাণে আমরা এ সমস্ত সংবাদ শুনলেও আমলে না নেবার পরিণতি ভারতের মতো হবে।
নেতারা বলেন, করোনা যেহেতু দ্রুত ছড়াচ্ছে এবং অদৃশ্য শত্রু। করোনার রোগী শনাক্ত ও চিহ্নিত করা কঠিন। যে পরিবারের একজন আক্রান্ত হয়েছে শুধুমাত্র সেই পরিবারের আহাজারি ও অবর্ণনীয় দুঃখকষ্ট শুনার মতো কেউ নেই। করোনায় জীবিকা বাঁচাতে গিয়ে অনেক পরিবার চিকিৎসা ও ওষুধের খরচ যোগাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা আমাদের সকলের জানা, হাসপাতালে বেড নেই, চিকিৎসা নেই, ওষুধ-অক্সিজেন নেই। মানুষ বিনা চিকিৎসায় রাস্তায় রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যুর প্রহর গুনেছে। করোনায় মৃত্যুবরণকারী অনেকের ঠিকমতো জানাজা পড়া ও কবর দেয়া সম্ভব হয়নি। তাই এবারও সে ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি যেন হতে না হয় সে জন্য নিজেকে সতর্ক করা ছাড়া বিকল্প নেই। ক্যাব নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গণপরিবহন মালিকরা যেভাবে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের কথা বলে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করে দ্বিগুন ভাড়া আদায় করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করেনি। সেখানে সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন হাতে গোনা কয়েকটি দায়সারা ফটোসেশনের অভিযান পরিচালনা করেছেন। একই ভাবে ব্যবসায়ীদের শপিংমলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রশাসন কার্যকর উদ্যোগ নিবেন সে আশা কতটুকু পুরণ হবে তা নিয়ে সন্দিহান। তাই নাগরিক হিসেবে করোনা থেকে নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদেরকে বাঁচাতে নিজের সতর্কতা ও নিরাপত্তা নিজেকে নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই।