শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন

ভাড়া ছাড়াই রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দেন তাঁরা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২১

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ দিন চিকিৎসার পর বাড়ি ফিরে যাবেন দিনমজুর মো. বেলাল। তাঁর সঙ্গে আছেন স্ত্রী রোজি আক্তার। দুজনের হাতে আছে মাত্র ৫০ টাকা। অথচ অটোরিকশা তাঁদের বাসা বালুছড়া পর্যন্ত যেতে ভাড়া চাইছে ৩০০ টাকা, রিকশা চাইছে ২০০ টাকা। এ রকম একটা মুহূর্তে অসহায় বসে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। দুজনে বসেই ছিলেন। সিরাজুল ইসলাম নামের এক অটোরিকশাচালক তাঁদের ডেকে বললেন, চাইলে তাঁরা বিনা ভাড়ায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারেন। এটুকু বলে তিনি নুর ইসলাম নামের আরেক অটোরিকশাচালকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। প্রথমে একটু ভয় হয়েছিল বেলাল ও তাঁর স্ত্রীর। কিন্তু নুর ইসলাম তাঁদের ঠিকই বিনা ভাড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন।

শুধু দিনমজুর বেলালকে নয়, এ রকম প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ জন রোগীকে বিনা ভাড়ায় হাসপাতাল কিংবা বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে তিনটি অটোরিকশা। ১৮ এপ্রিল থেকে এই সেবা চালু করেছে ইমাম মোটরস নামে নগরের হালিশহরের একটি প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, জেনারেল হাসপাতাল এবং মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে থাকে গাড়িগুলো। হাসপাতাল থেকে বিনা ভাড়ায় স্বামীকে নিয়ে যেতে পেরে আনন্দে প্রায় কেঁদে ফেলেন রোজি। তিনি বললেন, ‘এ গাড়ি না পেলে বাড়ি যেতে পারতাম না লকডাউনে।’ অটোরিকশার সামনে–পেছনে ডিজিটাল ব্যানারে বড় করে লেখা আছে, ‘মানবিক সেবায় বিনা মূল্যে রোগী পরিবহন’। সঙ্গে রয়েছে যোগাযোগের নম্বরও। গাড়ির ভেতর তিনজন চালকের মুঠোফোন নম্বরও লেখা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যাত্রীদের কোনো অভিযোগ থাকলে মালিককে জানানোর জন্য।
গাড়ি তিনটির চালক নুর ইসলাম, মো. আবদুল্লাহ, আবুল বাশার। তাঁরা তিনজন রাত–দিন রোগীদের এই পরিবহনসেবা দিতে পেরে ভীষণ খুশি। পেশায় অটোরিকশা মেকানিক হলেও আবুল বাশার লকডাউনে গ্যারেজ বন্ধ থাকায় রোগী সেবার এই সুযোগ নিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাসায় বসে না থেকে মানুষের জন্য কিছু করতে পারছি, এটাই বড়। মালিক বেতন দিলে নেন, কোনো দাবি করেন না।
এই সেবার উদ্যোক্তা ইমাম মোটরসের স্বত্বাধিকারী ইমাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, লকডাউনে রোগীদের, বিশেষ করে গরিব রোগীদের যাতায়াতে বেশি কষ্ট হচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি থাকলেও ভাড়া বেশি। এ জন্য এটি চালু করা হয়েছে। তিনটি গাড়ির মালিক তিনি। গাড়িগুলো দৈনিক ৯০০ করে ২ হাজার ৭০০ টাকা আয় দেয়। এখন ভাড়ায় না খাটিয়ে মানুষের জন্য দিয়েছি। গাড়ির জ্বালানি ও চালকের বেতন নিজ থেকে দেন। কেন এটি চালু করলেন, তা জানতে চাইলে ইমাম হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন মিডিয়ায় হাসপাতালে আসা-যাওয়া করতে মানুষের কষ্টের বিষয়টি জেনে আমি ও আমার বাবা রফিকুল ইসলামের সিদ্ধান্তে এটি চালু করি। লকডাউন শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যবস্থা থাকবে।’ গাড়িগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর চালক নুর ইসলাম ০১৮২৮৫৭১০৫৫, আবুল বাশার ০১৮৩২৮০৮০৬৭, মো. আবদুল্লাহ ০১৮২৪৮৮২৭৬০। নগরের যেকোনো জায়গায় গরিব–অসহায় রোগী ওই নম্বরে ফোন করলে হাসপাতাল কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পৌঁছে দেবে গাড়িগুলো। -প্রথম আলো অন লাইন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com