আর মাত্র কয়েক দিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মুসলমানদের বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র ঈদুল ফিতর। সরকার ঘোষিত দ্বিতীয় ধাপের লকডাউনে মার্কেট খোলার অনুমতি পেয়ে জমে উঠেছে দিনাজপুরের হিলিতে ঈদের কেনাকাটা। দেখা গেছে মার্কিনগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভির। আবার দর নিয়ে কশাকশি করছেন ক্রেতারা, এমনটি বলছেন বিক্রেতারা। হিলি বাজারের মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভির, অনেক দোকানে পা রাখার জায়গাও নেই ক্রেতাদের। দোকানিরা ক্রেতাদের মন কারার মতো বিভিন্ন নতুন নতুন রঙ বেরঙের পোশাক সাজিয়ে রেখেছে দোকানের সামনে এবং ভিতরে। ক্রেতাদের ভিরে বেশি কথা বলার সময় নেই বিক্রেতাদের। আর মাত্র কয়েক দিন পর ঈদ তাই তরি ঘুরি করে কেনাকাটায় মেতে উঠেছে ক্রেতারা। দেখা গেছে হিলি বাজারের জননী গার্মেন্টস, লাবণ্য গার্মেন্টস, মা গার্মেন্টস, শ্যামলী গার্মেন্টস, মিতা গার্মেন্টস, বৃষ্টি গার্মেন্টস এবং হিলির ঘুড়ি ঘরেসহ বিভিন্ন ছোট-বড় মার্কেটে ক্রেতাদের আনাগোনা লক্ষনীয়। আবার হিলি একটি ভারতীয় সীমান্তবর্তী শহর। যার কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন ক্রেতারা ভারতীয় প্রসাধনী ও কসমেটিক কিনতে। ভারতীয় থ্রীপিচ, শাড়ি, প্যান্ট পিচ ও শার্ট পিচ সবার প্রিয়। কথা মার্কেট করতে আসা রাকিবুল হাসানের সাথে, তিনি বলেন, আর বেশি সময় নেই ঈদের। তাই তাড়াতাড়ি কেনাকাটা শুরু করেছি। মা-বাবার জন্য এবং স্ত্রী সহ ছেলে-মেয়েদের কাপড় কিনলাম। একজন সরকারি চাকুরিজীবি সন্জিদা রহমানের সাথে কথা হয়, তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপের লকডাউনে মার্কেট বন্ধ ছিলো, ঈদের জন্য সরকার মার্কেট খুলে দিয়েছে তাই কেনাকাটা করতে আসছি। ছেলে-মেয়েদের সহ শ্বশুড়-শ্বশুড়িদের পোশাক কিনছি। ১০ বছরের উম্মে হানি বলেন, অনেক দোকান ঘুরছি কিন্তু আমার জামা পছন্দ হচ্ছে না। দেখি আর কয়েকটি দোকান ঘুরে একটা জামা কিনবো। আমার সাথে আব্বু আম্মু আসছেন তারা খুব বিরক্ত হয়ে যাচ্ছেন। একজন ভ্যানচালক রাব্বানীর সাথে কথা হয়, তিনি বলেন, লকডাউনে তো তেমন কামাই ধান্দা হয়নি।কিন্তু ছেলে-মেয়েদের জন্য কিছু কিনতে হবে। ঈদের দিন নতুন কাপড় না কিনে দিলে, নিজেরি খারাপ লাগবে। হিলি বাজারের জননী গার্মেন্টস মালিক জাকারিয়া রহমান বলেন, লকডাউনে তো এতো দিন মার্কেট খুলতে পারিনি। সামনে ঈদ তাই দোকান খুলতে দিয়েছে সরকার। তবে দোকান খুলতেই বেচাকেনা ভাল হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ ২০ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। বেচাকেনার অবস্থা ভাল, দোকানে আমার ৫ জন কর্মচারী আছে। আশা করছি, সব মিলে ভাল হবে। জামান গার্মেন্টসের মালিক জামান বলেন, সকাল থেকে ক্রেতারা দোকানে ভির করছেন। বেচাকেনা ভাল তবে ক্রেতারা একটু দর কশাকশি করছেন। তিনি আরও বলেন, কৃষকরা ধান কাটা-মাড়াই করেছে, কিন্তু বিক্রি করতে এখনও পারেনি। ধান বিক্রি করলে তারা মনে হয় এমন করবে না। বৃষ্টি গার্মেন্টসের মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ব্যবসা মুটামুটি ভাল। তবে আশা করছি ঈদের আগ মুহুর্তে বেচাকেনা আরও বৃদ্ধি পাবে। হিলি খাসমহল হাট ও বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আরমান আলী বলেন, হিলি হাট ও বাজার একটা পুরনো বাজার। এখানে দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে ক্রেতারা কেনাকাটা করতে আসে। আমরা এখানে সব সময় ব্যবসায়ী পরিবেশ তৈরি করে রাখি। কোন রকম জামেলা পোহাতে হয় না ক্রেতাদের। হিলির ১ নং খট্রা-মাধব পাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বলেন, সামনে ঈদ আর ঈদকে ঘিরে শুরু হয়েছে বাজারে বেচাকেনা। লোকজন যাতে ভাল ভাবে মার্কেট করতে পারে, এই জন বাজারে আমি গ্রাম পুলিশ সর্বদা মোতায়েন করে রেখেছি। হাকিমপুর (হিলি) পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত জানান, লকডাউনে মার্কেট বন্ধ থাকার পর আবারও তা সরকার খুলে দিয়েছেন। তবে স্বাস্থ্য বিধি ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ক্রয়-বিক্রয় করতে হবে জনসাধারণকে। আমরা প্রতিনিয়ত বাজারগুলোতে জনসচেতনতা জন্য প্রচার ও প্রচরণা করে আসছি। বাজারে মাস্ক পরিধান করে ক্রয়-বিক্রয় করতে হবে। এছাড়াও প্রতিদিন বাজারের মাস্ক বিতরণ করছি। আমাদের এই প্রক্রিয়া চলমান। হাকিমপুর (হিলি) থানা অফিসার ইনচার্জ ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, ঈদ উপলক্ষে শহরে পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ করে বাজার মার্কেটগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আশা করছি ক্রেতা-বিক্রেতারা নিরাপদে তাদের কাঙ্খিত ঈদের সকল কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে। হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুর-আলম জানান, সরকার ঘোষিত নিদিষ্ট সময়ে দোকান পাট খোলা রাখতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। নিদিষ্ট মুল্যে ক্রয়-বিক্রয় এবং ভেজালমুক্ত খাদ্য সামগ্রী বিক্রি করতে হবে। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলাচ্ছি। এর আগে উপজেলার বিভিন্ন সেমাই কারখানায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারখানার মালিকদের জরিমানা করা হয়েছে। বাজার মনিটরিং সহ আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।