স্বামী সঙ্গে ট্রলারযোগে বাড়ি যাচ্ছিলেন এক প্রসূতি। কিন্তু গন্তব্যের আগেই পদ্মানদীর চরে তাদের নামিয়ে দেয় ট্রলার চালক। উপায় না পেয়ে হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছিলেন তারা। পথিমধ্যে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্বনাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপাড়া এলাকায় ফুটফুটে মেয়ের জন্ম দিয়েছেন ওই নারী।রোববার (৯ মে) বিকেল ৫টার দিকে ওই নবজাতকের জন্ম হয়। বর্তমানে মা ও শিশু জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন তারা। জাজিরা হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়, রোববার সন্ধ্যার দিকে পূর্বনাওডোবা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্যসহকারী ও স্থানীয় কয়েকজন লোক ‘সুমা আক্তার শিশুর মা ও নবজাতকটিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় হাসপাতাল থেকে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়। হাসপাতালে যখন মা ও সন্তানকে আনা হয়েছিল, তখন তাদের শরীরে বালি ও মাটি জড়ানো ছিল। পরে তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়।এ সময় জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুজ্জামান ভূঁইয়া মা ও সন্তানের জন্য কাপড়, খাবারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা করেন।স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রসূতি ওয়ার্ডের একটি বিছানায় ওই মা ও নবজাতক ভর্তি আছেন। মা ও মেয়েকে দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকে হাসপাতালে আসছে।‘সুমা আক্তার ও নাহিদ হোসেন ঢাকা লালবাগে থাকেন। তাদের বাড়ি বরিশাল হিজলাতে। তারা রোববার ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশে বরিশালে যাচ্ছিলেন। করোনার কারণে এখন লকডাউন চলছে। এজন্য লঞ্চ ও ফেরি বন্ধ থাকায় ওই দম্পতি মাওয়া থেকে মাঝিরঘাট আসবেন বলে একটি ট্রলার ভাড়া করেন। কিন্তু ট্রলার চালক ওই দম্পতিকে পদ্মার নদীর চর পাইনপাড়া এলাকায় নামিয়ে দেন। চালক তাদের বলেন, এক কিলোমিটার হেটে গেলেই মাঝির ঘাট পৌঁছে যাবেন। কিন্তু পথ ছিল চার কিলোমিটার।’‘ওই দম্পতি ট্রলার থেকে নেমে হাঁটছিলেন। পথিমধ্যে প্রসব বেদনা উঠলে ওই চরে স্থানীয় নারীদের সহযোগিতায় সুমা এক ফুটফুটে মেয়ের জন্ম দেন। বিষয়টি জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানতে পেরে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে ওই মা ও নবজাতককে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করে। মা ও নবজাতক দুজনই ভালো আছেন। তাদের যা যা প্রয়োজন ব্যবস্থা করা হয়। জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে কিছুটা সমস্যা থাকায় দুজনকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন নবজাতক ও মা দুজনই সুস্থ আছে। দুজনকেই সব ধরনের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তারা আমার তত্ত্বাবধানে আছে। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান ওই মা ও নবজাতকের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছেন এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।’ জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মোতাবেক তাদের সার্বিক সহায়তা ও খোজ খবর নিচ্ছি। খুশী হয়ে মেয়েটির নাম দিয়েছি ‘পদ্মা’। তারা ভাল আছেন।