দুই মাসের ছুটিতে সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছিলেন আব্দুল লতিফ। ২৫ মে তার ফিরে যাওয়ার ফ্লাইট। বাংলাদেশ-সৌদির ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও নতুন করে সংকটে পড়েছেন আব্দুল লতিফ। সৌদি সরকারের নতুন নিয়মের কারণে তাকে সৌদি ফিরে গিয়ে ৭ দিন নিজের খরচে হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। বাংলাদেশ থেকে একবার করোনা টেস্ট করে কোয়ারেন্টিনে থাকার পরও সৌদিতে করতে হবে দু’বার করোনা টেস্ট। সব মিলিয়ে সৌদি যাত্রায় তাকে গুনতে হবে আরও কমপক্ষে ৫৫ হাজার টাকা। এই বাড়তি খরচের বোঝা শুধু আব্দুল লতিফের নয়, সৌদিগামী প্রায় সব যাত্রীর; যারা ছুটিতে দেশে এসেছিলেন কিংবা নতুন করে সৌদি আরব যাচ্ছেন।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সৌদি আরব। দেশটির সরকারের বিধিনিষেধ গত ১০ মে সৌদি আরবের জেনারেল অথরিটি অব সিভিল এভিয়েশন বিভিন্ন এয়ারলাইন্সকে জানিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যারা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নেননি, তারা সৌদি আরবে প্রবেশ করলে ৭ দিন হোটেলে বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। হোটেলের খরচ নিজেকেই বহন করতে হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সৌদি সরকারের এ নিয়ম ২০ মে থেকে কার্যকর হবে। এ ছাড়া সৌদিগামী সকলের মেডিক্যাল ইন্স্যুরেন্স থাকতে হবে; যাতে করোনা আক্রান্ত হলে চিকিৎসা ব্যয় ইন্স্যুরেন্সের আওতায় বহন করা যায়। যাত্রীদের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেল বুকিং এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে করার নির্দেশনাও দিয়েছে জেনারেল অথরিটি অব সিভিল এভিয়েশন।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, সৌদি আরবে যাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর পদ্ধতিতে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসলে ঢাকা থেকে ফ্লাইটে যাত্রীকে বোর্ডিং ইস্যু করা যাবে। সৌদিতে পৌঁছানোর পর যাত্রীকে আরও দু’বার করোনা টেস্ট করতে হবে। প্রথমবার করতে হবে সৌদি আরবে পৌঁছানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। ষষ্ঠ দিনে আবারও করোনা টেস্ট করতে হবে। এ ছাড়া করোনা টেস্ট করার খরচ যাত্রীকেই বহন করতে হবে। দুই বার টেস্টে নেগেটিভ রিপোর্ট আসলে হোটেল কোয়ারেন্টিন থেকে ৭ম দিনে বাসায় যাওয়া যাবে।
‘যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রমাণপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। তবে ফাইজার-বায়োএনটেকের ২ ডোজ, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২ ডোজ, মডার্না ২ ডোজ এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার ১ ডোজ যারা নিয়েছেন তারা হোটেলে বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার বদলে বাসায় কোয়ারেন্টিনে থাকার সুবিধা পাবেন।’
এ ছাড়া সৌদি আরবের পাবলিক প্রসিকিউশন নতুন করে নিয়ম করেছে, কেউ যদি করোনাভাইরাস ছড়ায় তাকে পাঁচ বছরের জেল এবং সর্বোচ্চ ৫ লাখ সৌদি রিয়াল জরিমানা করা হবে। যদি সেই ব্যক্তি প্রবাসী হয়, তবে তাকে শাস্তি দেওয়া পর সৌদি আরব থেকে বিতাড়িত করা হবে এবং সে আর কোনও দিন সৌদি আরবে আসতে পারবে না।
বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সৌদিগামী যাত্রী বহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স। যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেল বুকিং পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তা জানান, যাত্রীরা নিজেরাই সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের ওয়েব সাইটের মাধ্যমে বুকিং করতে পারবেন। এ ছাড়া আমাদের অফিসে এসেও বুকিং করতে পারবেন।
অন্যদিকে এ সম্পর্কিত কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বলেন, সৌদি নতুন নির্দেশনা দিয়েছে। তবে সেটির জন্য পরবর্তী যোগাযোগ এখনও করা যায়নি সৌদি আরবের সঙ্গে, কারণ সেখানে এখনও ঈদের ছুটি চলছে। তবে আমরা যাত্রীদের আপডেট তথ্য জানিয়ে দেবো।
হোটেলে কোয়ারেন্টিনের খরচ কেমন? সৌদি সরকার বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন মানের হোটেল, সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নির্ধারণ করেছে। এরমধ্যে রিয়াদের জন্য ৮৮৯টি, জেদ্দার জন্য ৫৪১টি, দাম্মামের জন্য ৩৭৬টি, মদিনার জন্য ৩৫৩টি, তাবুকের জন্য ৭২টি, আল কাশিমের জন্য ৯৯টি, তাইফের জন্য ২২৮টি হোটেল ও সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নির্ধারণ করেছে। মান অনুযায়ী সেগুলোর ভাড়াও বিভিন্ন রকমের। কোনও কোনও হোটেলে রুম শেয়ার করার সুযোগও আছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সাতদিন থাকার জন্য ৩ তারকা মানের হোটেলে থাকা-খাওয়া, দু’বার করোনা টেস্ট করাসহ খরচ পড়বে প্রায় ২ হাজার ৪২৫ সৌদি রিয়াল; যা বাংলাদেশি ৫৪ হাজার ৮৩৯ টাকার সমান।
চার তারকা মানের হোটেলে থাকা-খাওয়া, দু’বার করোনা টেস্ট করাসহ খরচ পড়বে প্রায় ৩ হাজার ১০ রিয়াল; যা বাংলাদেশি ৬৮ হাজার ৬৮ টাকার সমান। পাঁচ তারকা মানের হোটেলে থাকা-খাওয়া, দু’বার করোনা টেস্ট করাসহ খরচ সাড়ে চার হাজার রিয়াল থেকে শুরু।
সৌদি আরবে বেশিরভাগ হোটেলে বুকিংয়ের টাকা নন রিফান্ডঅ্যাবল, ফলে কোনও কারণে কেউ সৌদি আরব যেতে না পারলে হোটেলের জন্য বুকিং করা টাকা ফেরত পাবেন না।
এদিকে নতুন নিয়মের কারণে সৌদি আরবের জেদ্দা, রিয়াদ ও মদিনার হোটেলগুলোতে চাপ বেড়েছে। অনেক হোটেল ইতোমধ্যে পুরোপুরি বুক হয়ে গেছে। ক্রাউন টাউন হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার আহমেদ ইলমোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের এই মুহূর্তে সব রুম বুক হয়ে আছে। হোটেলটির সিঙ্গেল রুমের ভাড়া প্রতি রাতে ৩৫০ রিয়াল খরচ হবে বলে জানান তিনি। হোটেল রেস্ট নাইটের সিঙ্গেল রুমের ভাড়া ২৩৬ রিয়াল বলে জানান হোটেলটির পরিচালক আহমেদ রাগাব জাহরান।
আল হামদ হোটেল অ্যাপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হোটেল আগে বুক করলেও ওঠার একদিন আগেই টাকা পরিশোধ করতে হবে। না হলে রিজার্ভেশন বাতিল হয়ে যাবে। অনেক হোটেলে জামানত বাবদ টাকা জমা রাখলেও আল হামদ হোটেল অ্যাপার্টমেন্ট কোন জামানত রাখবে না।