বাংলাদেশে যারা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন তাদের শতকরা ৮০ ভাগই নারী। সবচেয়ে ভীতিকর ব্যাপার হলো, এদের বয়সের পরিধি ১৪ থেকে ২২ বছর। এমনকি শিশুরাও এই ঝুকির বাইরে নয়। বৃহৎ পরিসরে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির দরুণ অনেক জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই সাইবার বুলিংয়ের কারণে। প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নয়নের ফলে পারস্পরিক যোগাযোগ প্রতিনিয়ত সহজলভ্য হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সংখ্যালঘু দুষ্ট চক্রের বিকৃত মানসিকতার কারণে সেই প্রযুক্তি ব্যবহারের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে সবাইকে।
এক কথায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে কারো উপর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা নাশকতা চালানোকে সাইবার বুলিং বলা হয়। যারা কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে গোপনীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো ব্যবহার করতে পারে তাদের হ্যাকার বলা হয়। হ্যাকিং একটি পারদর্শিতা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর অসদ্ব্যবহারই হয়ে এসেছে। হ্যাকারদের মধ্যে যারা নিজেদের এই ক্ষমতাটি অন্যের ক্ষতি করার জন্য ব্যবহার করে তারাই মুলত সাইবার বুলিং এর জন্য দায়ী।
কিভাবে হচ্ছেন সাইবার বুলিংয়ের শিকার বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কারণে আপনি সারা বিশ্বের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারছেন। আপনার তথ্যগুলো যেহেতু অনলাইন সামাজিক মাধ্যম ইমেইল, মোবাইল ফোন দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত, তাই হ্যাকাররা হয়রানির জন্য এগুলোকেই ব্যবহার করে। অধিকাংশ হ্যাকাররা ১৭ থেকে ১৮ বছর বয়সের হয়ে থাকে। অন্যদিকে এদের শিকার নারী ও শিশুরা হলেও, এখন সব বয়সের এবং সব পেশার লোকেরাই বিপদে পড়ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হলো, সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে অনেকেই বেছে নিচ্ছে আত্মহননের পথ।
সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে যা যা করণীয়
সকল নেতিবাচকতা অগ্রাহ্য করা:অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন, ম্যাসেজ অথবা অনলাইন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অনাকাঙ্ক্ষিত কমেন্ট, ম্যাসেজ আপনার বিরক্তির কারণ হতে পারে। এমনকি হয়ত আপনার ব্যাপারে রটে যাওয়া ভুল ঘটনাকে কেন্দ্র করে বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকেও কথা শুনতে হতে পারে। ব্যাপারটাকে গভীরভাবে না দেখে এড়িয়ে যান। কেননা আপনি পাত্তা দিলেই উত্যক্তকারীর উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে।
অভিভাবক মহলের সাথে পরামর্শ করা:বাবা-মা, বড় ভাই-বোন, প্রিয় শিক্ষক অথবা এমন কারো সাথে ব্যাপারটি শেয়ার করুন যে আপনার দুর্বলতার সুযোগ নেবে না বলে আপনি দৃঢ়ভাবে বিঃশ্বাস করেন। আবেগপ্রবণ না হয়ে নিজের অবস্থানটা স্পষ্ট করে তুলে ধরুন। এতে সামাজিকভাবে আপনি একটা পৃষ্ঠপোষকতা পাবেন।
প্রমাণ রাখা:অনলাইন অথবা ফোন যে মাধ্যমেই বুলিংটা হোক না কেন চেষ্টা করুন যে কোনো ভাবেই তার একটা অফলাইন কপি রাখতে। পরবর্তী আইনী সহায়তা নেবার সময় এগুলো প্রমাণ হিসেবে আপনার কাজে লাগবে।
রিপোর্ট করা:প্রতিটি ওয়েবসাইটেরই অভিযোগ বক্স বা রিপোটিং পদ্ধতি আছে। সেগুলো অনুসরণ করে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলুন। এতে বুলিং কন্টেন্ট মুছে যাওয়ার পাশাপাশি অপরাধীও সেই সাইট চিরতরে নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
সৃজনশীল কাজে নিয়োজিত থাকা:অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সেক্ষেত্রে হতাশ না হয়ে নিজেকে নিজের কাজে মগ্ন রাখুন। বিশেষত সৃজনশীল কাজের দিকে মনযোগ দিন।
আত্মবিশ্বাসের সাথে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া: এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশী দরকার। প্রায় দেখা যায়, সাইবার বুলিংয়ের শিকার ব্যক্তি জনসম্মুখে নিজেকে প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন। তা না করে বরং প্রতিটি সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সাবলীলভাবে উত্তর দিন। এখানে যেহেতু আপনি কোন দোষ করেন নি সেহেতু নিজেকে লুকিয়ে রাখার কোন অর্থ নেই। বরং আপনার ইতিবাচক সাড়া অপরাধ ও অপরাধীর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে ইন্ধন যোগাবে।
শেষ কথা: প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিরোধ উত্তম। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে আপনার নেয়া সিদ্ধান্তগুলো পরবর্তীতে সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্ম দিবে। তাই নিজেকে গুটিয়ে না রেখে নেতিবাচকতাগুলো উপেক্ষা করে আত্মবিঃশ্বাসের সাথে নিজের স্বপক্ষে কথা বলুন।