না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা একাডেমির মহা পরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। এক মাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটালে গত সোমবার ২৪ মে রাত ১১ টায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এর আগে, গত ২৫ এপ্রিল পাকস্থলীর সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন হাবীবুল্লাহ সিরাজী। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ভেন্টিলেশনে নেয়া হয় এ কবিকে। তিনি কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর তিন বছরের জন্য বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান হাবীবুল্লাহ সিরাজী। ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। প্রকৌশলী নন কবি হিসেবে আপামর জনগণের কাছে তিনি অধিক সমাদৃত।
আজিমপুরে চিরনিদ্রায় শায়িত কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী: রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। মঙ্গলবার (২৫ মে) বেলা ১১টার পর তার দাফন কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে বুধবার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর মরদেহ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আনা হয়। সেখানে সকাল ১০টায় প্রথম জানাজা শেষে কবির পরিবারের সদস্যরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর কফিনে বাংলা একাডেমির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন একাডেমির সচিব ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এ এইচ এম লোকমান। আওয়ামী লীগের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ও দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। এছাড়া বাংলাদেশ রাইর্টার্স ক্লাব, বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন শ্রদ্ধা জানায়। বাংলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বেলা পৌনে ১১টার দিকে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
আজিমপুর কবরস্থানে তার জানাজায় অংশ নেন- কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত, ছড়াকার আনজীর লিটন, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, প্রকাশক আলমগীর সিকদার লোটন প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন মামুনুর রশিদ, প্রকাশক শ্যামল পাল প্রমুখ।
কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক: বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আলাদা শোক বার্তায় তারা এ শোক প্রকাশ করেন। গতকাল মঙ্গলবার (২৫ মে) বঙ্গভবন প্রেস উইং জানায়, শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি মরহুম হাবীবুল্লাহ সিরাজীর রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানায়, শোক বার্তায় একুশে পদকপ্রাপ্ত এ কবি ও লেখকের মৃত্যুতে শেখ হাসিনা বলেন, হাবীবুল্লাহ সিরাজী কবিতা ও কর্মে মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রগতিশীলতাকে তুলে ধরেছেন, যা পাঠকমহলে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির শোক: বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর ইন্তেকালে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির সভাপতি বাচিকশিল্পী শরীফ বায়জীদ মাহমুদ ও সেক্রেটারি সাহিত্যিক ইবরাহীম বাহারী। গতকাল ২৫ মে এক শোক বাণীতে তারা কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের ধৈর্যধারণের জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করেছেন। কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ২০১৮ সাল থেকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন হাবীবুল্লাহ সিরাজী। ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন তিনি। ২০১৬ সালে একুশে পদক, ১৯৯১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ দেশি-বিদেশি নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন হাবীবুল্লাহ সিরাজী।