শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৮ অপরাহ্ন

পুরনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন নবাবগঞ্জের নরসুন্দর নওয়াব আলী

মোসলেম উদ্দিন (হিলি) দিনাজপুর :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩০ মে, ২০২১

আধুনিক যুগের অত্যাধুনিক কসমেটিক আর যন্ত্রের ব্যবহারে হারিয়ে গেছে হাট-বাজার ও গ্রাম-গঞ্জে পিঁড়িতে বসে মানুষের চুলদাড়ি কাটার প্রচলন। তবুও আজও এই প্রথা ধরে রেখেছেন দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের নওয়াব আলী সহ কয়েকজন নরসুন্দররা (নাপিত)। নবাবগঞ্জ উপজেলার ভাদুরিয়া বাজারে আজও চোখে পড়ে কয়েকজন নরসুন্দররা সামনে কাঠের টুলে লোক বসিয়ে তাদের চুলদাড়ি কাটছেন এবং তাদের সুন্দর করার চেষ্টা করছেন। ৯০ দশকের আগে মানুষের চুলদাড়ি কাটার এটাই ছিল একমাত্র স্থান ও উপায়। সে সময় নরসুন্দররা হাট-বাজার, গ্রামে এবং রাস্তা ও বটগাছের ছায়ায় বসে মনের সুখে কালো বা লাল রঙের কাপড়ে জোরিয়ে নিজের করে অন্যদের সাজনোর কাজ করতো নরসুন্দররা। তখন তারা লোহার তৈরি খুর, কাঁচি এবং মুখে সাবান ও ফিটকারী ব্যবহার করতেন। হাতের সাথে ধারালো খুর ঘুষে খুরকে আরও ধারালো করতে দেখা যেতো। আবার খুর কাঁচি ধার করার জন্য লোহার চেন লাগানো গোলাকার সিল নিয়ে বসে থাকতো এক ধরনের কারিগর। নাপিতদের খুর কাঁচি এবং দর্জিদের কাঁচি ধার করায় ছিলো ঐ কারিগরদের কাজ। এখন আর ঐ ভুতুড়ে যুগের প্রচলন নেয় বললেই চলে। এখন আধুনিক যুগ, অত্যাধুনিক কসমেটিক ও যন্ত্রে লাগানো ধারালো ব্লেড এবং হেয়ার কাটিং মেশিন দ্বারা মানুষ চুলদাড়ি কাটে। কথা হয় দাড়ি কাটতে বসে থাকা রফিকুল ইসলামের সাথে, তিনি বলেন, আমি প্রায় সময় এই নওয়াব আলীর নিকট থেকে চুলদাড়ি কাটি। এটা আমার পুরনো অভ্যাস, খোলা জায়গায় ভাল লাগে। আবার এখানে খরচও অনেক কম। চুল কাটা মজিবর রহমান বলেন, প্রতি সপ্তাহ এবং মাসে আমি এখানে চুলদাড়ি কাটায়। চুল কাটতে ২০ থেকে ২৫ টাকা, আর দাড়ি কাটতে লাগে ১০ থেকে ১৫ টাকা। বড় বড় সেলুনে এসব করতে গেলে ৫০ থেকে ১০০ টাকার ব্যাপার আছে। নরসুন্দর নওয়াব আলী বলেন, এটা আমার অনেক দিনের পেশা, ছাড়তে পারি না। আবার এছাড়া অন্য কোন কাজ জানি না। প্রায় ৩০ বছর যাবৎ আমি এই কাজ করছি। সংসারের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন বাজার ঘুরে কাজ করে যাচ্ছি। সারাদিনে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা উপার্জন হয়। আর তাই দিয়ে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোর মতে দিন চলে। নরসুন্দর রজব আলী বলেন, মানুষ এখন আর আমাদের নিকট বেশি বসে না। এখন সবাই দালান ঘরে গদির নরম চেয়ারে বসে চুলদাড়ি কাটায়। গরীব মানুষ ঐসব দালান, চেয়ার আর ডেকোরেটর করতে অনেক টাকার দরকার, ওতো টাকা কোথায় পাবো? তাই বিনা পয়সায় হাট-বাজারে বসি, আর যার ইচ্ছ সেই কাজ করে নেয়। আর তা দিয়ে সংসার চলায়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com